ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

তারকালাপে হাকিম দম্পতি

অটোগ্রাফ থেকে প্রেম, এরপর একসঙ্গে পথচলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২৪, ২৯ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ০০:০৯, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

আজিজুল হাকিম ও জিনাত হাকিম। সব বিশেষণ-ই কেমন যেন ফিকে হয়ে যায় এই দম্পত্তির নামের পাশে। তাই নাম দুটি বলার পর আর বেশি কিছু বলা লাগে না। এদেশের সব শ্রেণীর দর্শকদের কাছে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা রয়েছে এই দু’জনার। একজন (জিনাত হাকিম) বাস্তবধর্মী নাটক লিখেন, অন্যজন অসাধারণ অভিনয়গুণে (আজিজুল হাকিম) সেটিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। বাংলা নাটককে অন্য একটি মাত্রা দিয়েছেন তারা।

একটা সময় তো আজিজুল হাকিমের নাটক দেখার জন্য দর্শক এক ঘন্টা আগে টিভি ছেড়ে বসে থাকতো। ধারাবাহিক নাটকগুলো কী বারে হতো সেগুলো কাগজে লিখে রাখতন। না জানি মিস হয়ে যায়। শহর, মফস্বল কী গ্রাম সব শ্রেণীর দর্শকদের টেনেছেন তিনি। অজো পাড়া গায়ে যেখানে বিদ্যুতের সুবিধা ছিল না, সেখানে তরুণ-যুবকরা চাঁদা তুলে ব্যাটারি চার্জ করিয়ে জমিয়ে রাখতন। শুধু আজিজুল হাকিমের নাটক দেখার জন্য।     

দেশের টিভি নাটক ও মঞ্চ অভিনয়ে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র আজিজুল হাকিম। মঞ্চে অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও টিভি নাটকে তার দাপট ছিল কয়েক যুগ ধরে। এই শক্তিমান অভিনেতা দীর্ঘ চার দশক মঞ্চ ও টিভির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। এখন যে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে তেমনটি কিন্তু নয়। বরং বাংলা নাট্যাঙ্গনে আজিজুল হাকিমের নিখুঁত অভিনয়শৈলী সংখ্যায় কমে যাওয়ায় লাখো দর্শকের আক্ষেপ রয়েছে। সময়ের স্রোতে চুলে পাক ধরলেও মন ও দেহের দিক দিয়ে এখনও চিরতরুণ সবার প্রিয় ‘হাকিম ভাই’।

অন্যদিকে জিনাত হাকিম একজন সফল নাট্যকার, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টেও রয়েছে সমান বিচরণ। এক সময় তিনি ছিলেন আজিজুল হাকিমের অনেক বড় ভক্ত। ইউনিভার্সিটিতে অটোগ্রাফ নিতে গিয়ে বন্ধুত্ব, তারপর জানাশোনা, অল্প দিনের প্রেম। অতপর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে। সেই থেকে একসঙ্গে প্রাণবন্ত পথচলা। জীবন সঙ্গী বলেন, আর বন্ধু বলেন তারা সবই একে অপরের।

প্রিয় তারকার সঙ্গে পথ চলতে গিয়ে জিনাতও হয়ে গেলেন মিডিয়ার মানুষ, সেটি কিন্তু নিজ গুণেই। নিজের চিন্তা ও কল্পনাকে ঘিরে লিখেছেন অসংখ্য নাটক। আর সেই নাটক নির্দেশনা দিচ্ছেন স্বয়ং আজিজুল হাকিম। তাদের নাটকগুলো জীবনধর্মী।

এক সময়ে বিটিভির পর্দায় যে আজিজুল হাকিম দর্শকদের স্বপ্নের পুরুষ হিসেবে দেখা দিয়েছিলেন, সেই অভিনেতা ও তার জীবনসঙ্গী জিনাত হাকিমের মুখোমুখি হয় একুশে টেলিভিশন (টিভি) অনলাইন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ

একুশে টিভি অনলাইন : কেমন আছেন ভাইয়্যা ও ভাবী?

আজিজুল হাকিম : অনেক ভালো আছি।

জিনাত হাকিম : ভালো আমাদের সব সময়ই থাকতে হয়। আর ভালো আছি বলেই বেঁচে আছি।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনাদের দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে আমরা আনন্দিত, মুগ্ধ।

আজিজুল হাকিম : ধন্যবাদ। একুশে টিভি অনলাইনসহ এই পরিবারের সবার জন্য শুভ কামনা।  

জিনাত হাকিম : আপনাদের সঙ্গে আড্ডায় অংশ নিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।

একুশে টিভি অনলাইন : মিডিয়াতে সুখী দম্পতি আজিজুল হাকিম ও জিনাত হাকিম। দুজনের ভালোবাসার গল্পটা শুনতে চাই। কে কার প্রেমে পড়েছিলেন?

জিনাত হাকিম : আমি ‘হাকিম ভাই’র ভক্ত ছিলাম। ছিলাম বললে ভুল হবে, এখনও আছি।

আজিজুল হাকিম : আসলে এক পহেলা বৈশাখে আমাদের দুজনার দেখা হয়। ওই যে গানের মত ‘এক বৈশাখে দেখা হলো দুজনার’। আমি আমার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। ও ওর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভক্ত হিসেবে জিনাত আমার কাছে অটোগ্রাফ নিতে আসে। ওই প্রথম দেখা। তারপর টেলিফোন নম্বর দেওয়া হলো। তখন তো মোবাইল ছিল না। বাসার টেলিফোন নম্বর দিলাম। সেই টেলিফোনে কথা বলতে বলতে কখন যেনো মনে হলো- কথা বলতে তো ভালোই লাগছে। মনে হলো বোঝাপড়াটা ভালোই হবে। আমরাও মনে হয়েছে ওর ক্ষেত্রেও মনে হয় তাই হয়েছে।

জিনাত হাকিম : হ্যাঁ। কিছুদিন পর আমার বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাকিমেরও তখন বিয়ের কথা চলছে। আমরা আসলে যে সময়টাতে প্রেম করেছি বা কথা বলছি তখন আমাদের বিয়ের বয়স।

একুশে টিভি অনলাইন : প্রেমের প্রস্তাবটা কে করেছিলেন?

আজিজুল হাকিম : খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমি জিনাতকে প্রস্তাব দিই। তারপর অল্প দিন প্রেমি। পরে বলেই ফেললাম যে- আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমারও তখন বিয়ে করার সময়। চাইলেই করতে পারি কারণ ওই সময় বাসা থেকে বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। জিনাতকে বললাম- আমি যদি প্রস্তাব দিই তোমার পরিবার গ্রহণ করবে তো?

জিনাত হাকিম : আমি তখন চিন্তাও করতে পারিনি যে, সে আমাকে বিয়ে করতে চাইবে। আমি তো তার ফ্যান ছিলাম। টেলিভিশনে তার নাটক দেখে হাউমাউ করে উঠতাম। তাকে পছন্দ করি। তার অভিনয় পছন্দ করি। একবার ক্যাম্পাসে এসেছিলো শুটিং করতে। আমার বন্ধুরা সবাই ডেকে নিয়ে গেলো এই দেখ, তোর পছন্দের অভিনেতা। দূর থেকে দেখলাম। বেশ ভালো লাগলো। বাসায় গিয়ে সবাইকে বললাম আজ আজিজুল হাকিমকে দেখেছি। অনেক সুইট দেখতে। সে আমাকে বিয়ে করতে চাইবে ভাবতে পারিনি।

একুশে টিভি অনলাইন : এরপর বিয়েটা কি পারিবারিকভাবেই হয়েছিলো?

আজিজুল হাকিম : জিনাত আমাকে জানালো প্রস্তাবটা পারিবারিক ভাবেই দিতে হবে। যেভাবে সামাজিকভাবে হয় আরকি। এরপর পারিবারিকভাবেই প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারাও গ্রহণ করলেন।

জিনাত হাকিম : মিডিয়ার ছেলেকে বিয়ে করছি এটা নিয়ে অনেকেই আমার বাবা-মাকে বলেছিলো মেয়েকে কার সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছো? আমাদের সমাজে হয় না; এখনও কিন্তু অনেকে বলে- ছেলে কি করে? নাটক-ফাটক করে?

আমার চাচাতে বোনেরা বাবাকে বললেন- চাচা সবার মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তারদের সঙ্গে বিয়ে হয়। আর আপনি দিচ্ছেন নাটকের ছেলের সঙ্গে। তখন আমার বাবা গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, সবাই তো দেয় ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তারদের সঙ্গে আমি না হয় একটু অন্যকিছু করলাম। নায়ক জামাই কয়জনের ভাগ্যে জোটে? আমার বাবা-মা এই প্রফেশনটাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনাদের বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?

আজিজুল হাকিম : আমার বর্তমান ব্যস্ততা বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে- কায়সার আহমেদের ‘আয়না’, মীর সাব্বিরের ‘নোয়াশাল’, রাকেশ বসুর ‘অলি’। আর নতুন কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি তো নির্দেশনাও দিই, একটা বড় ধারাবাহিক করার চিন্তাভাবনা করছি। যেটা জিন্নাতেরই লেখা হবে। এটা গুছিয়ে এনে শুটিং এ নামবো। এছাড়াও কিছু ইভেন্ট নিয়ে ব্যস্ততা আছে। ওগুলো দেশে এবং দেশের বাইরে করা হয়। সম্প্রতি অষ্ট্রেলিয়ায়ও কিছু কাজ করেছি। যেগুলোর কো-অর্ডিনেট আপনার জিনাত ভাবী-ই করেছেন। এছাড়া ওখানে একটি নাটকের নির্দেশনাও দিয়েছি। এখনও নাটকটির নাম ঠিক হয়নি। এটাও জিনাতের লেখা। অতি সম্প্রতি ৩১ অক্টোবর ‘ওয়ার্ল্ড হ্যালোইন ডে’ উপলক্ষে টেলিফিল্ম ‘ভুতের নাম একা’র নির্দেশনা দিয়েছি। টেলিফিল্মটি রচনা করেছেন ড. মঈনুল খান। নাট্যরূপ জিন্নাতেরই। এই হচ্ছে মোটামুটি ব্যস্ততা।

জিনাত হাকিম : আমাদের দু’জনের মধ্যে রসায়নটা দারুণ। কারণ সে আমাকে বোঝে আমিও তাকে। তাই আমাদের কাজের ধরণটাও একই। আমি নাটক লিখছি সে নির্দেশনা দিচ্ছে। ইভেন্টগুলোর বিষয়ে আমি অ্যারেঞ্জ করি ঠিকই তবে আমার পাশে থেকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দেয় হাকিম। দুজনের ব্যস্ততা একই রকম।

একুশে টিভি অনলাইন : হাকিম ভাই,আপনি তো ভাবীর লেখা গল্পে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে কাজগুলো কিভাবে সমন্বয় করেন? ভাবী তো একটা চরিত্র কল্পনা করে নাটক লেখেন। দু’জনের মধ্যে কি আলোচনা করেই চরিত্র ও ভাবনাগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ে আসেন?

আজিজুল হাকিম : নির্দেশকের সঙ্গে একজন লেখকের রসায়নটা অনেক ভালো হওয়া উচিত। এটা থাকতেই হয়। সেক্ষেত্রে আমি একটু বাড়তি সুবিধা পাই। দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়াটা যদি শতভাগ না হয় তাহলে নাট্যকার যে চিন্তাভাবনা নিয়ে নাটকটি রচনা করেছেন নির্দেশক ঠিক সেভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। জিনাতের সঙ্গে আমার যে ক্যামিষ্ট্রিটা আছে সেটা হচ্ছে- যেহেতু আমরা দু’জনই ঘরের মানুষ কোনো একটি বিষয় নিয়ে বা একটি নাটক নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রতিদিনই আলাপ আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে আমার যদি কিছু বলার থাকে আমি বলি, ওর কিছু বলার থাকলে ও বলে।   

জিনাত হাকিম : আসলে আমি যখন নাটক লিখি তখন থেকেই হাকিম আমার গল্পটাকে ভাবনার মধ্যে রেখে চিন্তা করতে পারে। একসঙ্গে থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়। আমি তার কাজ সম্পর্কে জানি, সেও আমার লেখার ধরনটা বোঝে। একসঙ্গে থাকার সুবিধাটা কাজের ক্ষেত্রটাকে আরও সহজ করে দিয়েছে। মোটকথা কাজের ক্ষেত্রে আমাদের রসায়নটা অনেক ভালো।

একুশে টিভি অনলাইন : চার দশক ধরে আপনি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন। যেই সময়টাতে আপনি শুরু করেছিলেন, তারপর থেকে অনেকটা সময় আপনি দেখেছেন। নাটকের ক্ষেত্রে দুই সময়টাকে কিভাবে বিবেচনা করবেন?

আজিজুল হাকিম : আমি একটি কথাই বলবো। মঞ্চে যুক্ত হয়েছি ১৯৭৭ সালে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যে নাটকের চর্চা, সাহিত্যের চর্চা, সংস্কৃতির চর্চা সেক্ষেত্রে একমাত্র নাটকই কিন্তু এগিয়ে ছিলো। বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একদল মানুষ যারা সংস্কৃতি নিয়ে ভাবেন তারা বিভিন্ন নাট্যদল গঠন করে তারা নাট্যচর্চা শুরু করে। সেই যে একটা আন্দোলন একটা পর্যায়ে গিয়ে গ্রুপ থিয়েটারে রূপান্তরিত হয়। এখনও পর্যন্ত আমরা গ্রুপ থিয়েটার চর্চা করছি। সেই সময় আমরা শুধু মহিলা সমিতিতে নাটক করতাম। এই যে শিল্পকলা একাডেমীর এখন যে পরিসর এটা কিন্তু ওই সময় ছিলো না। শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চ নাটকের জন্য এখন তিনটি হল আছে। এখানে কিন্তু প্রতিদিনই নাটক হচ্ছে। এই যে পরিবর্তন, আগে আমরা শুধু মহিলা সমিতিতে নাটক করতাম এখন তিনটি হলে এক সঙ্গে নাটক হয়। এটা একটা অনেক বড় পরিবর্তন।

একুশে টিভি অনলাইন : আবারও অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের জন্য শুভ কামনা।

আজিজুল হাকিম : আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ। অনেক সুন্দর একটি সময় কাটল।

জিনাত হাকিম : সবার সঙ্গে গল্প করে আমারও ভালো লেগেছে। একুশে টিভি ও অনলাইনের সব পাঠক ও দর্শকদের প্রতি শুভ কামনা।

এসএ / এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি