ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

অতিথি পরায়নতা একটি সৎকর্ম

প্রকাশিত : ১২:১০, ২৩ জুন ২০১৯

সামাজিকতা রক্ষার উদ্দেশ্যে অনেক উঁচুমানের খাদ্য যদি অতিথির উদ্দেশ্যে পরিবেশন করা হয় তাহলে তা হবে প্রদর্শনীমূলক। আর সামর্থ্য অনুযায়ী সামান্য খাবারও যদি মমতার সঙ্গে অতিথির প্রতি সম্মানের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় তাহলে তা হবে সৎকর্ম। আতিথেয়তা সৎকর্ম হিসেবে আল্লাহর কাছে কতটুকু গ্রহণীয় হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে অতিথি আপ্যায়নকারীর আন্তরিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

আন্তরিকতার সঙ্গে অতিথি আপ্যায়ন শাশ্বত ধর্মবাহকদের অনুসৃত পন্থা এবং আদি পিতা ইব্রাহিমের সুন্নাত। অতিথি পরায়নতা শেষনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের প্রাত্যহিক সৎকর্ম।

রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানকে সম্মান করে এবং তার হক আদায় করে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহর রাসূল (সা.)। তার হকটা কি? তিনি বললেন, একদিন ও একরাত (সাধারণ নিয়মের চেয়ে উত্তম খাবার) এবং তিনদিন পর্যন্ত মেহমানদারী করা। এর চেয়ে বেশি হলো সাদাকাহ। (বুখারী ও মুসলিম)

অতিথিকে কি ধরনের খাবার পরিবেশন করা হলো তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কিভাবে খাবার পরিবেশন করা হলো ও অতিথির প্রতি কত সম্মান প্রদর্শন করা হলো। আল্লাহর রাসূল (সা.) এ জন্য অতিথির প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে উপস্থিত করেছেন।

হযরত আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন, যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন অবশ্যই তার মেহমানকে সম্মান প্রদর্শন করে। (বুখরী ৩৫৭১)

আমরা যদি সামাজিক মর্যাদা ও রীতিনীতি মেনে চলার স্বার্থে খাবারের পদ ও পরিবেশনের বাহুল্যের মধ্যে জড়িয়ে যাই তাহলে অতিথি আপ্যায়ন লোক দেখানো, নিষ্প্রাণ, আন্তরিকতাবিহীন আনুষ্ঠানিক বোঝায় রূপান্তরিত হবে এবং আতিথেয়তার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবো। কেননা আল্লাহ খাবারের পদের দিকে তাকান না। তিনি অতিথিকে আপ্যায়নকারীর মনের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

হযরত আবু হুরায়রা বলেন, একবার রাসূল (সা.) এর কাছে একজন লোক এসে বললো, আমি ক্ষুধার্ত। তিনি তার স্ত্রীদের নিকট লোক পাঠানোর পর তারা সবাই বললেন যে, তাদের ঘরে পানি ছাড়া আর কিছু নেই। তারপর তিনি বললেন, আজ রাতে কে এই লোকের মেহমানদারী করবে? জনৈক আনসারী ব্যক্তি উঠে বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমি করাব। আনসারী মেহমানকে নিয়ে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করে স্ত্রীকে বললো, তোমার নিকট কোন খাবার আছে কি? সে বললো, না, শুধু বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু খাবার আছে। সে তার স্ত্রীকে বললো, তুমি ওদের কিছু দিয়ে ভুলিয়ে রাখো। আর খাবার জন্য যখন মেহমান ঘরে প্রবেশ করবে তখন তুমি বাতি নিভিয়ে দেবে। তুমি তাকে দেখাবে যে, আমরাও আহার করছি। এভাবে তারা বসে রইলেন আর মেহমান খেতে থাকলো। সকাল বেলা উক্ত আনসারী নবী করীম (সা.) এর কাছে এলে, তিনি বললেন আজ রাতে মেহমানদের সঙ্গে তোমাদের দু’জনের আচরণে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। (মুসলিম ৩৪৫৭)

অর্থাৎ সৎকর্ম হিসেবে আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য খাবারের উপাদান নয় বরং আন্তরিকতাই মূখ্য। আতিথেয়তার সময় আমাদের অন্তর যেন অতিথির প্রতি সম্মান ও আন্তরিকতায় পূর্ণ থাকে আর আমরা যেন অতিথি আপ্যায়নের বিনিময়ে অতিথির কাছ থেকে কোন সুবিধা আশা না করি। অনেকে আছেন যারা সামাজিক সম্মান, সামাজিক যোগাযোগ ও বৈষয়িক লাভ সামনে রেখে অতিথি আপ্যায়ন করেন। এ ধরনের অতিথি পরায়নতা আল্লাহর কাছে সৎকর্ম হিসাবে গৃহীত হয় না।

ইসলাম যে অতিথি পরায়ণতাকে সৎকর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছে তা হবে নিঃস্বার্থ, আন্তরিক ও শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবং তা অতিথি আপ্যায়নকারীর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে না।

তথ্যসূত্র : ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরীর প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের সোপান গ্রন্থ।

এএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি