অতিথি পাখিদের ফেরার পালা
প্রকাশিত : ১৪:৫১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৪:৫৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
প্রতিবছরের মত এবারেও সাইবেরিয়া থেকে উড়ে এসেছে পরিযায়ী পাখিরা। দক্ষিণে সফর শেষে এখন উত্তর গোলার্ধ্বে ফেরার পালা তাদের। শীত ঋতু পুরোটাজুড়েই পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে বাংলার আকাশ-বাতাস। কেমন ছিলো এ বছর অতিথি পাখিদের আনাগোনা?
একটি দুটি নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, কখনো ডানা মেলছে আকাশে কখনো আবার গা ভেজাচ্ছে দিঘীর জলে।
পানিতে স্থির বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পাতিহাঁসের মত মনে হলেও এগুলো আসলে অতিথি পাখি, উড়ে এসেছে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে, এই বাংলায়।
মাত্র দুই থেকে তিন মাস বাংলার জল-কাদাকে আপন করে নেয় এই পাখিরা। শীত শেষেই আবার উড়াল দেয় সাইবেরিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। শুদ্ধ ভাষায় এই পাখিদের বলা হয় পরিযায়ী পাখি।
ডিসেম্বর মাস থেকে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ যখন শীতল থেকে শীতলতর হতে থাকে, বরফে ঢেকে যায় চারিদিক, তখন এই পাখিরা খাবারের সঙ্কটে পড়ে। তাই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে।
প্রতি বছর পুরো শীতকালজুড়েই গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায়। তবে যেসব জায়গায় জলাভূমি ও তৃণভূমির মেলবন্ধন রয়েছে সেগুলোকেই নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে বেছে নেয় এই পাখিরা।
এ বছর ফেনীর আলিম উদ্দিন মুন্সি দিঘী, জাম্বারা দিঘী ও বটুয়া দিঘীতে পানকৌড়ি, বালি হাঁস, রাঙ্গা ময়ূরী, ছোট স্বরালীসহ প্রায় দশ প্রজাতির পরিযায়ী পখির দেখা মিলেছে।
কুয়াশা চাদরে জড়ানো সকাল, কিংবা স্নিগ্ধ বিকেলের সোনালি রোদে অনবরত ডানা ঝাপ্টিয়ে উপস্থিতি জানান দেয় পাখিরা। মাঝেমধ্যে একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে নানান কসরত, ওড়াওড়ি আর জলকেলিতে।
কখনো আবার পাখিদের ওড়াওড়িকে মনে হয় যেনো লম্বা উড়ন্ত মিছিল। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখতে আর সঙ্গে কিচিরমিচির ডাকে প্রাণ জুড়াতে পুরো শীতকালজুড়েই পাখিপ্রেমীদের আনাগোনা ছিলো নোয়াখীল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেকে আবার বাইনোকুলার দিয়ে খুব কাছ থেকে উপভোগ করেন পরিযায়ী পখিদের বিদেশি জীবন যাপন।
নাটোরের ঐহিত্যবাহী চলনবিলও অতিথি পাখির অভয়াশ্রম। শামুকখোল, পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, রাতচোরা, বালিহাঁস, শর্লী, পিঁয়াজ খেকো, ত্রিশূল, কাদাখোঁচা, ফেফি, ডাহুক, গোয়াল, হটটিটিসহ বিভিন্ন পাখির দেখা মেলে বিলে পানিতে।
বিলের পানিতে ঝিনুক ও কাঁকড়া কমে যাওয়া এবং ফসলে রাসায়নিক দেওয়ায় দিন দিন পাখির জন্য প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। আর পাখি শিকারীদের দৌরাত্ব তো আছেই। এসব কারণে এখ পাখি আসা অনেকটাই কমেছে।
পরিযায়ী এই পাখিদের সবগুলোই আবার উত্তরের দেশে ফিরে যায় বিষয়টা এমন নয়। শীত শেষে একে একে ঋতু পরিবর্তন হলেও অনেক সময় থেকে যায় কিছু পাখি। যেকারণে কিছু প্রজাতির পাখির দেখা মেলে বছরজুড়েই।
শীত শেষে বসন্তের আগমণী বার্তা, অপেক্ষায় পাখিরা। সফর শেষে দূরদূরান্ত পাড়ি দিয়ে ফিরবে আপন ভূমিতে। আর পাখিপ্রেমীদের অপেক্ষা আসছে বছর শীতের…
এসবি/