ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অথ: হস্ত সমাচার

সেলিম জাহান

প্রকাশিত : ১৫:০৭, ৩ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৬:৪৩, ৩ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, Freedom for Choice প্রভৃতি।

হাত নিয়ে বড় সমস্যায় আছি। আসলে আমি যে এক জোড়া হাত বয়ে বেড়াচ্ছি, সে সম্পর্কেই তো সচেতন ছিলাম না দৈনন্দিন জীবনে। কিশোর বয়সে একবার খুব খারাপ করে হাত কেটেছিল আমার, তখনই প্রতিনিয়ত আমার হাত জানান দিত যে, সে আছে। ভালো হয়ে যাবার পরে আবার হাতকে ফিরিয়ে দেয়া হল বিস্মৃতির অতলে জলে। সে ‘অতল জলের আহ্বান ‘ তারপর শুনিনি বহুদিন। 

কিন্তু করোনা সঙ্কট শুরু হওয়ার পরেই আমার হস্তদ্বয় পুনরায় আমার জীবনের মধ্যমণি হয়ে উঠল। বুঝতে পারলাম যে, এই সঙ্কট সময়ে আমার হাত দু’টো আমার শত্রু-মিত্র দু’টোই। আমার হাত একদিকে যেমন আমার চরম শত্রু, অন্যদিকে তেমনি সে’দুটো আমার পরম মিত্রও বটে। অনেকটা সেই ‘সর্প হইয়া দংশন কর,  ওঝা হইয়া ঝাড়োর’ মতো অবস্হা।

বারবার সতর্ক করা হচ্ছে যে করোনা সংক্রমনের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে আমার এতোদিন বিস্মৃত হওয়া হস্তদ্বয়। করোনার বীজ যত্র-তত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে, তাতে ক্ষতি নেই। সেখানে বসে বসে একসময়ে সে নিজেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যে মুহূর্তে আমার হাত সে সংক্রমণ বীজ ধারনকারী বস্তু - তা সে পোশাক-আশাকেই হোক কিংবা দরজার হাতলই হোক, প্লাস্টিকের মগই হোক কিংবা কাঠের বাটিটিই হোক - ছোঁবে, সে মুহূর্তেই সে হস্তদ্বয় একটি মৃত্যুবাণ হয়ে যেতে পারে। 

কারণ হাত তো নিঃসঙ্গ থাকতে পারে না। সে তার বান্ধব মুখের কাছে যাবেই ছোঁবে মুখস্হিত নানান বস্তু - নাক, ঠোঁট, চোখ। ব্যস্, তারপরেই থেকে শুরু হয়ে যাবে করোনার তাণ্ডব। সংক্রমণের আভাস পাওয়া যাবে, উপসর্গ দেখা দেবে একে একে। কোন কোন ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানুষটি সুস্থ হয়ে উঠবেন ধীরে ধীরে, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে তা হয়ে যাবে প্রাণঘাতী। বোঝাই যাচ্ছে, এ পুরো প্রক্রিয়ায় হাত যে আমাদের বড় শত্রু, তা আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না - ‘সর্প হইয়া আমাদের দংশন করতে পারে।’

কিন্তু আবার এ পুরো প্রক্রিয়া প্রতিরোধে হাত আমার সবচেয়ে বড় মিত্র হয়ে উঠতে পারে। সবাই বলছেন যে, ক্রমাগত সাবান দিয়ে হাত ধুলে এবং হাত আর মুখের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটালে, এই সংক্রমণ-শেকল ভেঙ্গে দেয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হস্ত প্রক্ষালনের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে হবে এবং বাইরে বেরুলে যে কোন মানুষের সঙ্গে ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডের জন্যে ন্যূনতম সময়ের জন্যে বাইরে তো বেরুতেই হবে - খাবার কেনার জন্যে, ওষুধ তোলার জন্য, ব্যায়ামের জন্যে। কিন্তু বাইরে বেরুলে যদি ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা যায় এবং সেইসঙ্গে যথাযথ প্রক্ষালনের সঙ্গে সঙ্গে হাতকে যদি পরিস্কার রাখি, তবে আমার হাত আমার সবচেয়ে বড় মিত্র হয়ে উঠবে - ‘ওঝাহইয়া ঝাড়বে’ এ দুঃসময়ে। 

সুতরাং বর্তমান সময়ে হস্ত নিয়ে সততঃ ব্যস্ত আমি। যে হাতের অস্তিত্বই আমি প্রায়ই বিস্তৃত হয়েছিলাম - ঐ অনেকটা বাতাসের মধ্যে থেকে বাতাসের অস্তিত্ব ভুলে যাওয়ার মতোই - সেই হাতের পরিচর্যা করতে আমি সদাব্যস্ত এখন। কতবার যে সাবান দিয়ে হস্তদ্বয়কে ধুচ্ছি, কতবার যে তাতে পরিস্কারক লাগাচ্ছি, কত সময়ে যে তাকে দস্তানা দিয়ে ঢাকছি, তার কোন ইয়ত্তা নেই। 

হস্ত পূজোই করছি বলা যেতে পারে, শুধু ডান-হাতের ব্যাপার সারতেই নয়, বরং বেঁচে থাকতেই বলা চলে। শিবিরাম চক্কোত্তির ভাষায় - ‘হাতের সঙ্গে হাতাহাতিতেই’ ব্যস্ত আমরা সবাই।

এমবি//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি