ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

অনলাইন ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪০, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

কোভিড-১৯ মহামারীকালে বিশ্বব্যাপি জনজীবন অস্বাভাবিক হয়ে পড়লে মানুষ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড সাধনের বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান করতে থাকে। সেসময় বাকি সবকিছুর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ঘোষিত হয়, যা বিশ্বজুড়ে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তেমনি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমূলক সকল ব্যবস্থা। অনেক শিক্ষার্থী এসময় সেশনজটেরও সম্মুখীন হয়। তথাপি শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পদ্ধতিগুলো এবং এর ব্যবহার বৃদ্ধিও পায় ঝড়ের গতিতে। 

কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে বিশ্বের অনেক দেশ অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যাবতীয় শিক্ষাসেবা প্রদান শুরু করে। শুরুর দিকে কিছুটা পিছিয়ে থাকেলও এক্ষেত্রে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ছিল দেশে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, প্রান্তিক ও প্রযুক্তিবঞ্চিত সমাজ থেকে আগত এবং আরেকটি কারণ ছিল ইন্টারনেটের যথাযথ প্রাপ্যতা না থাকা। যদিও আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি যে, দেশের সিংহভাগ অঞ্চলই আজ ইন্টারনেট সুবিধার আওতাধীন। লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল, ইন্টারনেটের গতি সর্বত্র সমান না থাকলেও থেমে থাকেনি দেশের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম এবং সময়ের সাথে সাথে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরাই এর সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে। 

বিশ্বব্যাপি, বিশেষ করে বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো হলো;

গুগল মিট - এটি পূর্বে ‘হ্যাঙআউটস মিট’ নামে পরিচিত ছিল। ৭২০ পিক্সেল পর্যন্ত রেজল্যুশনসহ দ্বি-মুখী এবং বহুমুখী অডিও-ভিডিও কল করতে সক্ষম প্ল্যাটফর্মটি শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, কর্পোরেটসহ সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। 


কনভে – ওয়েব আরটিসি দিয়ে তৈরি কনভে প্লাটফর্ম কম গতির ইন্টারনেটেও দারুণ পারফর্ম্যান্স প্রদান করে। বাহিরের আওয়াজ থেকে সুরক্ষিত রেখে চমৎকার কনফারেন্সের অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য কনভে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। 

এছাড়া, পার্টিসিপেন্ট লগ, এইচডি কোয়ালিটি অডিও এবং ভিডিও, এ আই পাওয়ারড অডিও ক্লারিটি এবং ডাটা সুরক্ষিত রাখতেও এটি বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। কনভে-এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো একটি হলো, এখানে ভিডিও মিটিংয়ে এক হাজার জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারে, যা একে ছোট-বড়-মাঝারি যেকোন আকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম করে তুলেছে। তবে শুধু স্কেল নয়, কনভে সেরামানের অডিও ও ভিডিও কোয়ালিটি এবং ন্যূনতম ব্যান্ডউইথের সাথে এইচডি ওয়েব মিটিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে। একইসাথে এটি সাশ্রয়ী এবং ব্যবহারকারী দেশের যেকোনো ব্যাংক, কার্ড বা এমএফআই-এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। 

জুম ক্লাউড মিটিং –এর মাধ্যমে ১৫০ জন অংশগ্রহণকারী ৪০ মিনিট সময় ধরে সম্পূর্ণ বিনামূল্য টেলিকনফারেন্সিং সুবিধা নিতে পারেন। কোভিড-১৯ চলাকালে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইন এডুকেশন, ওয়েবিনার ইত্যাদি কাজে জুম ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। 

মাইক্রোসফট টিমস - মাইক্রোসফট টিমস ‘মাইক্রোসফট ৩৬৫’ এর একটি অংশ, যা ওয়ার্কস্পেস চ্যাট, ভিডিও কনফারেন্সিং, ফাইল স্টোরেজ, অ্যাপ্লিকেশন ইন্টিগ্রেশন ইত্যাদি কারণে বিশ্বব্যাপি ব্যাপক জনপ্রিয়। একটি নির্দিষ্ট ইউআরএল বা টিম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের প্রেরিত ইনভিটেশনের মাধ্যমে দলগতভাবে যোগদান করে এখানে কাজ সম্পাদন করা যায়।

এতোদিন অনলাইন ক্লাস না করার পেছনে যেই বিষয়টি শিক্ষাকদের ভাবিয়েছিলো তা হলো শিক্ষার্থীদের যথাযোগ্য মুল্যায়ন ব্যবস্থা। উপযুক্ত প্লাটফর্মে তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী তা নিয়ে অনেক শিক্ষকদের মধ্যে মত-বিরোধ ছিল। কেননা কোভিড=১৯ এর সময় এই চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের পুরোটাই ছিলো অ্যাসাইনমেন্ট নির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীকে যাচাই করার একমাত্র পন্থা। এক্ষেত্রে, তথ্যের নিরাপত্তা ও নকলবিহীন শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করা শিক্ষকদের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। 


সর্বোপরি, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য ভার্চুয়াল মিটিং প্ল্যাটফর্মগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এখনও অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার হচ্ছে। এই সুবিধার ফলে, শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লাইভ ক্লাশে অংশগ্রহণ করতে ও পারস্পরিক মতবিনিময় করতে পারে, যা তাদের মাঝে আলোচনা নির্ভর পড়াশুনায় আগ্রহী করে তোলে এবং পারস্পরিক সহায়তার স্পৃহা জাগিয়ে তোলে। পাশাপাশি বিষয়-ভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে গতানুগতিক প্রশ্ননির্ভর পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন ব্যবস্থার ওপর থেকে চাপ কমে যায়। তাই সকলের উচিৎ শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহার বৃদ্ধি ও সর্বস্তরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলা। তবেই দেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি