অনলাইনে ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের সঠিক নিয়ম
প্রকাশিত : ১৯:৪৮, ২২ জুন ২০২০
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিকস পাসপোর্টের (ই-পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশে করেছে বছরের শুরুতে। তবে জুনে সারাদেশের পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হয়েছে। আপনি চাইলেই ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে করতে পারছেন। আর এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে সহজ। কারণ পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় না। দালালের খপ্পড় বা পাসপোর্ট অফিসের কারও কোন সাহায্যে ছাড়াই একদম সরাসরি গিয়ে ছবি তুলে ও ফিঙ্গারিং করা যায়। এতে অনাহুত খরচের ঝামেলাও নেই।
কিভাবে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করবেন এবং এর নিয়মকানুনগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক...
প্রথম ধাপ : ব্যাংকে টাকা জমা
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে প্রথম যে ধাপ, তা হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দেয়া। এটি আপনাকে ব্যাংকে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে, কারণ অনলাইনে আবেদন ফর্মে ওই ব্যাংকের রিসিট নম্বর এবং জমার তারিখ সংযুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকের শাখাতে আপনি পাসপোর্টের ফি জমা দিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি আরও ৫টি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারবেন। সেগুলো হচ্ছে-ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংক। এসব ব্যাংকে অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইলের মাধ্যমেও পাসপোর্টের ফি পরিশোধ করা যাবে। রেগুলার পাসপোর্টের ফি ভ্যাটসহ ৩,৪৫০টাকা, ১ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে ভ্যাটসহ ফি ৬৯০০ টাকা জমা দিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ : অনলাইন পাসপোর্ট ফরম পূরণ
অনলাইনে ফরম পূরণ ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনলাইনে ফরম পূরণের জন্য প্রথমে http://www.dip.gov.bd/ লিংক দিয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। তারপর ‘I have read the above information and the relevant guidance notes’-এ টিক চিহ্ন দিয়ে ‘continue to online enrollment’ এ ক্লিক করতে হবে। এখানে আপনার নাম ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি দিতে হবে। যেমন : আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম। এই নামগুলো যেন শিক্ষাগত সার্টিফিকেট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একই হয়। কোনো তথ্য ভুল হলে পাসপোর্টে হতে সমস্যা হবে। মেইল অ্যাড্রেস ও মোবাইল নম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যেটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি দেয়া উচিত। টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নম্বর দিতে হবে।
পাসপোর্ট টাইপ কি হবে তা সিলেক্ট করতে হবে। রেগুলার না ইমার্জেন্সি তা উল্লেখ করতে হবে। যে অংশগুলো লাল স্টার মার্ক দেয়া রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সম্পূর্ণ ফরমটি পূরণ হলে পুনরায় এটি চেক করতে হবে, সব তথ্য টিক আছে কি না, তা যাচাই করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। সফলভাবে সাবমিট করা হলে পূরণ করা ফরমের ডাউনলোড করার লিঙ্ক পাবেন। ফর্মটি ডাউনলোড করে নিন। পিডিএফ কপি যে ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে ফরম পূরণ করা হয়েছে, সেখানে চলে আসবে। অনলাইনে একাউন্ট খোলার পরপরই আপনাকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেবে। সেটা সংরক্ষণ করুন।
তৃতীয় ধাপ : আবেদন ফর্মের প্রিন্ট এবং সত্যায়ন
পূরণকৃত ফর্মের পিডিএফ কপির ২ সেট কালার প্রিন্ট করাতে হবে। যেসব জায়গা হাতে পূরণ করতে হবে সেগুলো করে ফেলুন। এতে আবেদনকারীর স্বাক্ষর করার স্থানে সই করতে হবে। এবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং নিজের পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি একটি করে উভয় ফর্মে আঠা দিয়ে লাগানোর পর দুটো ই-পাসপের্টের আবেদন ফর্মই সত্যায়িত করাতে হবে। পরিচিত কোনো প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে। পরিচিত কাউকে দিয়ে সত্যায়ন করালেই ভাল। কারণ ওই কর্মকর্তার নাম, যোগাযোগ ও ফোন নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ফরমে লিখতে হয়। ছবিটি এমনভাবে সত্যায়িত করতে হবে যেন সত্যায়নকারীর স্বাক্ষর এবং সীলমোহরের অর্ধেক অংশ ছবির উপর আর বাকি অর্ধেক অংশ ফরমে থাকে।
চতুর্থ ধাপ : পুরো ফরম রি-চেক
সত্যায়িত ছবি এবং ব্যাংকের রিসিট আঠা দিয়ে ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপিটিও প্রিন্ট করা ফরমটির সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে।শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করলে অবশ্যই স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি সত্যয়িত করে ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে দিতে হবে। এসব ধাপ শেষ করলে ফর্মটি জমা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
পঞ্চম ধাপ : ফরম জমা এবং ছবি তোলা
অনলাইনে ফর্ম পূরণের ১৫ দিনের মধ্যে ফর্মের প্রিন্ট কপি, সত্যায়িত ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (অবশ্যই অরিজিনাল কপি সঙ্গে নিবেন, দেখতে চাইতে পারে) এবং স্টুডেন্ট হিসেবে আবেদন করলে আইডি কার্ডের ফটোকপি পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে। পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার সময় বা ছবি তোলার সময় সাদা পোশাক, সাদা টুপি এবং চোখে চশমা পরা যাবে না। আবেদনপত্রটির ভেরিফিকেশন যাচাই ও জমা দেওয়ার আগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবেদনপত্রে সিলসহ স্বাক্ষর করবেন। এরপর আবেদনপত্রটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা দিতে হবে। পাসপোর্ট অফিসেই বেশ কয়েকটি বুথ আছে, সেখানেই জমা দিয়ে দিন।
আবেদনপত্রটি জমা দেয়ার সময় পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বরত ব্যক্তি আপনার তথ্যগুলো কম্পিউটারে এন্ট্রি করে রাখবেন। এরপর তিনি আপনাকে একটি টোকেন দেবেন। সে টোকেনসহ আবেদনপত্রটি নিয়ে ছবি তোলার জন্য আরেকজন কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য যেভাবে ছবি তোলা হয়েছিল, এখানেও একইভাবে নির্দিষ্ট মাপের ছবি তোলা হবে। এছাড়াও দুই হাতের আঙুলের ছাপও দিতে হবে ইলেকট্রনিক মেশিনে। এরপর নেয়া হবে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর। তবে, ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর আবেদনপত্রের স্বাক্ষরের সঙ্গে যেনো মিল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ছবি, স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ প্রদানের পূর্বে একটি রশিদ প্রদান করা হয় তাতে পাসপোর্টে প্রদর্শিত সকল তথ্য দেওয়া থাকে। উক্ত রশিদে আপনার তথ্য সঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন এবং কোন তথ্য ভুল থাকলে সংশোধন করে নিতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, পাসপোর্ট আবেদনকারীর ছবি, স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ প্রদানের পর মূল ডেলিভারী রশিদ প্রদান করা হয় এবং এরপর সংশোধনের আর কোন সুযোগ থাকে না। ছবি তোলার ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের কাজ শেষ হলে পাসপোর্ট রিসিভের একটা রিসিট দেয়া হবে। সেটা যত্ন করে রাখুন।
ষষ্ঠ ধাপ : পুলিশ ভেরিফিকেশান ও পাসপোর্ট গ্রহণ
আপনার যদি স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয়, তবে দুই জায়গাতেই পুলিশ ভেরিফিকেশান হয়ে থাকে। ভেরিফিকেশনের সময় আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের
ফটোকপি ও বিদ্যুৎ বিল/ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশান সাপেক্ষে, রিসিট পাওয়ার একমাস বা ১৫ দিনের মধ্যেই আপনি পাসপোর্ট পাবেন। ভেরিফিকেশান শেষ হলে আপনার মোবাইলে এসএমএস আসবে। যেদিন এসএমএস আসবে তারপরেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
পাসপোর্টে আপনার তথ্য সঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন এবং কোন তথ্য ভুল থাকলে সংশ্লিষ্টকে জানিয়ে তাৎক্ষণিক পাসপোর্ট সংশোধন করে নিতে পারবেন। ভুল হয়ে গেলে ই-পাসপোর্ট, পাসপোর্ট (এমআরপি) রি-ইস্যু/তথ্য পরিবর্তন/পাসপোর্ট সংশোধনের নিয়মাবলী ও আবেদন ফরম, পাসপোর্ট নবায়নের জন্য এই ফরমটি পূরণ করে বর্তমান পাসপোর্টের ফটোকপি ও ব্যাংকে টাকা জমার রশিদ সংযুক্ত করতে হবে এবং মূল পাসপোর্টটি অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
পাসপোর্ট নবায়ন করতে হলে, নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রশিদটি ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে পাসপোর্টসহ জমা দিতে হবে।
এএইচ/এসি