ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অনলাইনের ভুল তথ্য থেকে শিশুকে রক্ষা করবেন কীভাবে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাই শিশুকে ভালোভাবে লালন-পালন করা তথা উপযুক্তভাবে শিক্ষা দিয়ে, কর্মোদ্যোগী করে গড়ে তুলতে প্রতিটি দেশেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে সম্প্রতি অনলাইনে ভুল তথ্য শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর অন্যতম।

তথাকথিত ‘ডিপ ফেইক’ প্রযুক্তি তুলনামূলকভাবে সহজেই অডিও ও ভিডিও কনটেন্টের বিশ্বাসযোগ্য নকল তৈরি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কৌশল ব্যবহার করে। তাই বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির দ্বার যেখানে অবারিত খোলা সেখানে শিশুদের কীভাবে ভুল তথ্য থেকে রক্ষা করা যায়?

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক খোলা চিঠিতে বলেছে, ‘অনলাইনে ভুল তথ্য ইতিমধ্যে শিশুদের অনলাইনে যৌন হয়রানি, অমর্যাদা এবং অন্যান্য ধরনের নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে’।

চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, শিশুদের বেশিরভাগই বেড়ে উঠবে ভুল তথ্য মিশ্রিত ডিজিটাল পরিবেশের বাসিন্দা হিসেবে।

তবে সন্তানকে ভুল তথ্য থেকে রক্ষা করার জন্য একটি উপায়ের কথা জানালেন, রাজধানীর ধানমন্ডির নাসরিন জাহান। তার সন্তানের বয়স আট বছর।

ওই নারী বলেন, ‘ইউটিউবে আমার যে অ্যাকাউন্ট সেটা বাচ্চাকে ব্যবহার করতে দেই না। কারণ আমি যে ভিডিওগুলো দেখি সেটা তার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। সেজন্য আমার মোবাইলে জি-মেইলে তার জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছি’।

তিনি বলেন, ‘ওই ইউটিউব অ্যাকাউন্টে আমার বাচ্চার দেখার উপযোগী ভিডিও সার্চ দিয়ে রেখেছি। আর একবার কোনও বিষয় বা কন্টেন্ট সার্চ দিলে অটোমেটিক রিকমেন্ডেশন আসতে থাকে সেই বিষয় বা তার আশেপাশের বিষয় সম্পর্কে’।

এভাবে দেখা যাচ্ছে আমার বাচ্চা বিভিন্ন কার্টুন দেখে বিভিন্ন ভাষায়। ‘এখন স্প্যানিশ ভাষায় একটা কার্টুন দেখে দেখে সে স্প্যানিশ ভাষাটা কিছুটা শিখে ফেলেছে’, বলছিলেন তিনি।

নাসরিন জাহানের বাচ্চার বয়স অল্প, সেই কারণে তিনি ইউটিউব ছাড়া অন্যান্য সোশাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে যাওয়াটা নিয়ন্ত্রণ বা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু যেসব শিশুদের বয়স একটু বেশি তাদের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়াটা কঠিন।

এমনি একজন মা আফিফা ইসলাম। তার সন্তান কলেজে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘কলেজ, কোচিং, বন্ধু-বান্ধব সব মিলিয়ে তার জগতটা আলাদা। আর এখন যোগ হয়েছে ফেসবুক। সেখানে কি করে সেটা আমার পক্ষে দেখা সম্ভব হয়ে উঠে না’।

বাংলাদেশের নীতিমালা অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স সবাইকে পর্যন্ত শিশু ধরা হয়। এখন যারা স্কুল বা কলেজে যাচ্ছে তারা যাতে ইন্টারনেটে ভুল তথ্যের বেড়াজালে নিজেকে জড়িয়ে না ফেলে সেজন্য কয়েকটি উপায়ের কথা উল্লেখ করছেন গার্লস চাইল্ড অ্যাডভোকেসি ফোরামের সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার জলি।

তিনি বলেন, এখন যেহেতু তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, তাই শিশুদেরকে এখান থেকে আটকানো যাবে না বা সেটা ঠিক হবে না। বরং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার ইতিবাচক সমাধান করতে হবে।

জলি বলেন, ‘অভিভাবকদের অনেক বেশি সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। যখন তাদের বয়স ১২/১৩ তখন সন্তানদের সঙ্গে মুক্ত মন নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

‘কারণ ইন্টারনেটে কখন কি দেখছে সেটা সব সময় পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না। এরচেয়ে বরং তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে কোনটার ভালো দিক কি এবং কোনটার খারাপ দিক কোনটা।

তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিভাবকদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে যেসব বিষয় আমরা সচরাচর কথা বলি না সেসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে স্কুল, কলেজের একটা ভূমিকা রয়েছে। কারণ এই বয়সের শিশুরা এই গণ্ডির মধ্যেই থাকে। বন্ধু-বান্ধব হয় এখান থেকেই বেশি।

অ্যাডভোকেসি ফোরামের এই সেক্রেটারি বলেন, ‘নিয়মিত ক্লাসের বাইরে একটা ক্লাস নেয়া যেতে পারে সেখানে ফেক নিউজ বা ভুল তথ্য তাদের কীভাবে বিপথগামী করতে পারে এবং ভালো তথ্য তাদের কতটা অগ্রগামী করবে সেটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত’।

‘সময়টাই যেহেতু ইন্টারনেট বা অনলাইনের সেজন্য এই বিষয়ে শিক্ষাক্ষেত্রেও বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত’।

(বিবিসি অবলম্বনে)


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি