অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে ড. ইউনূস যা জানালেন
প্রকাশিত : ১৬:৪০, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
জুলাই আগস্ট আন্দোলনের সময় ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর ঢাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা ড. ইউনূসকে ফোন করে বলেন, আপনাকে সরকার প্রধান হতে হবে, কিন্তু ড. ইউনূস তা প্রত্যাখান করে তাদের বলেন, ‘না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না। আমি এরসঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না। তারা নাছোড়বান্দা কিছুতেই ছাড়লেন না, শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম’ এমনটাই বলছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। সে সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে জানান, সরকার প্রধান হওয়ার আগের নানা ঘটনাবলী।
‘রাখমান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্টে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
সেখানে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ফোনকল পাই, তখন আমি প্যারিসের হাসপাতালে ছিলাম। আমার ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) ফোন দিল। যদিও আমি বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেসব খবর প্রতিদিন মুঠোফোনে দেখতাম। তখন তারা বলল, তিনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে, আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।’
কারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা। আমি তাদের কাউকেই চিনতাম না। কখনো তাদের সম্পর্কে শুনিনি। কাজেই আমি তাদের বিকল্প কাউকে খোঁজার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তাদের বলেছিলাম, বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন। তোমরা তাদের খুঁজে নাও। তারা বলছিল, না, না, না। আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কাউকে পাইনি। আমি বলেছিলাম, জোরালো চেষ্টা করো। তারা বলল, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই। তখন বলেছিলাম, অন্তত একটা দিন চেষ্টা করো। না পেলে ২৪ ঘণ্টা পর আমাকে আবার ফোন করো।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা (ছাত্রনেতারা) আবার আমাকে ফোন করল। বলল, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, দেখো, তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছো। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে। তোমরা সম্মুখসারিতে আছো। যেহেতু তোমরা এসব করতে পেরেছ, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। আর এটাই সেই সময়। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তারা আর কোনো কথা বলেনি।
সেই দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ঘণ্টা দুয়েক পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন। তিনি আমাকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন ওই নার্স বললেন, আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’, আমরা এটা জানতাম না। আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, “সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’। আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা জানলাম।”
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘এরও ঘণ্টা দুয়েক পর ওই বোর্ড সদস্যরাদসহ হাসপাতালের প্রধান আসেন। তারা ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আমাকে শুভেচ্ছা জানান। সঙ্গে এটাও বলেন যে বিকেলের আগে আমাকে হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হবে না।
এসএস//
আরও পড়ুন