অপমান সইতে না পেরে ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
প্রকাশিত : ২২:৫০, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮
পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে অপমানের জের ধরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যা করেছে। আজ সোমবার রাজধানীর শান্তিনগরে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রী। পরিবারের লোকজন দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকেল ৪টার দিকে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, আজ (সোমবার ) আমি ও আমার স্ত্রী অরিত্রিকে নিয়ে স্কুলে যাই। প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনি আমাদের ‘অপমান’ করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আগামীকাল মেয়ের টিসি (ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন । এরপর আমরা প্রিন্সিপালের কক্ষে যায়, তিনিও একই আচরণ করলেন। যেখানে স্কুল পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যও উপস্থিত ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় অরিত্রি দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে আমরা বাড়ি গিয়ে দেখি অরিত্রি তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।’
এই সম্পর্কে পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান বলেন, সুরতহাল করে অরিত্রির লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যু কারণ জানা যাবে।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তার গলায় দাগ ছিল। তার ‘নেক টিস্যু’ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
অরিত্রির মৃত্যুর সংবাদ শুনে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান ভিকারুননিসার প্রিন্সিপাল নাসরিন ফেরদৌস। সেখানে তিনি অরিত্রির স্বজনদের তোপের মুখে পড়েন।
জানা গেছে, পরীক্ষায় নকলের অপরাধে শিক্ষক অপমান করায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি। সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা, তবে প্রতিবাদের সরব সহপাঠীরা। প্রশ্ন তুলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের নৈতিকতা ও গভর্নিং বডির ভূমিকা নিয়ে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে আগামীকাল থেকে পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে অরিত্রির সহপাঠীরা।
অরিত্রীর বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল সে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেছিল। এ জন্যে আজকের পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করে অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে তাদের সামনেই অরিত্রীকে অপমান করা হয়।
অভিভাবকদের বলা হয়, পরীক্ষায় নকল করার জন্য মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সে। এ কারণে তাকে স্কুল থেকে বদলির সার্টিফিকেট (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, স্কুল থেকে তাদের ডেকে নিয়ে মেয়েকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। মেয়েকে ক্ষমা করার জন্য চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হন। এই ঘটনার পর সে বিমর্ষ হয়ে আত্মহত্যা করে।
এ ব্যাপারে ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, অরিত্রী ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছিল। মোবাইল ফোন দিয়ে সে অসদুপায় অবলম্বন করছিল। এই অবস্থায় শিক্ষকরা তাকে হাতেনাতে ধরে সোমবারের পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করেন।
কেআই/এসএইচ/
আরও পড়ুন