অপুষ্টি দূর করে কচুশাক
প্রকাশিত : ১৪:২১, ২৬ জুন ২০১৯
যুগ যুগ ধরে কচুশাক জনপ্রিয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আয়রনসমৃদ্ধ এ শাকের পুষ্টিগুণ অনেক। যার জন্য শহরবাসীর চেয়ে গ্রামবাসীর রোগবালাই কম। তবে ইদানিং শহরেও কচুশাকের চাহিদা বেড়েছে। গর্ভবতী মা ও শিশুদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এছাড়া হৃদরোগ, রাতকানা ও কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগেও বেশ উপকারী।
এই কচুশাকই আপনার দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে। কচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উৎস। রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন-এ এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-সিও। তাই মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে পুষ্টির পরিমাণ
শর্করা ৬.৮ গ্রাম, প্রোটিন ৩.৯ গ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) ০.২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন) ০.২৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১২ মিলিগ্রাম, স্নেহ বা চর্বি ১.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২২৭ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি ৫৬ কিলোক্যালরি।
কচুশাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
- এই শাকে নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচুশাক গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্যও কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বলা চলে।
- কচুশাকে ভিটামিন-এ থাকে যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
- কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা কচুশাক খেতে পারেন।
- কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তাছাড়া ভিটামিন-সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুশাক খাওয়ানো উচিত।
- আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচুশাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
- কচুশাকের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। এগুলো আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- তাছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে, তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।
কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা যায়। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির মাত্রা বেশি তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।
তথ্যসূত্র : নিউট্রিশন অব বাংলাদেশ
এএইচ/