ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অফিস টাইমে ক্লিনিকে দেখেন রোগী, ডিগ্রি ছাড়া করেন অপারেশন

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:১৭, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ১৮:২১, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নোয়াখালীর সিনিয়র লেকচারার ডা. শায়লা সুলতানা ঝুমার বিরুদ্ধে অফিস টাইমে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ ওঠেছে। 

গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগ  ও স্বাচিপের নেতাদের ম্যানেজ করে নোয়াখালী জেলায় বিভিন্ন পোস্টে চাকরি করে বাড়তি সুবিধা গ্রহণ করেন ডা. শায়লা সুলতানা। দফায় দফায় পেয়েছেন পদোন্নতিও। অথচ গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি নিজেকে বৈষম্যের স্বীকার বলে দাবি করেন। 

এনিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এছাড়াও অভিযোগ আছে তিনি গাইনোকলজিস্ট না হয়েও হিস্টেরেক্টমি বা জরায়ু অপারেশনের মত জটিল অপারেশন করে থাকেন। যার ফলে বিভিন্ন সময় রোগীর অপূরণীয় ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কর্মস্থলে থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে তার বহু আগেই তিনি অফিস থেকে বের হয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ইনডোরে রোগী দেখেন। দীর্ঘদিন ধরে নিজের মতো করেই সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট চেম্বার করে যাচ্ছেন তিনি। 

তারপরও রহস্যজনকভাবে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নোয়াখালী কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন ম্যাটসের হাজিরা খাতায় সাক্ষর দিয়ে মাসিক সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে তেমন গুরুত্বই দিচ্ছেন না তিনি। কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন হাজিরা দেয়ার পর নাম মাত্র ক্লাস নিয়ে চলে যাচ্ছেন প্রাইভেট চেম্বারে। 

এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ম্যাটস’র শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ম্যাটস এ কর্মরত শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

তাছাড়া, অভিযোগ আছে তার কথার অবাধ্য হলে শিক্ষার্থীদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন। এই ভয়ে কিছু বলছেন না শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, ২০১১-১২ সালের দিকে আওয়ামী লীগের চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)র সাথে সখ্যতা তৈরি করে নোয়াখালী ২৫০ শয্য জেনারেল হাসপাতালে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে পদায়িত হোন ডাঃ শায়লা সুলতানা ঝুমা। পরে একই কর্মস্থলে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) হিসেবে যোগদান করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ডাঃ ঝুমাকে। 

স্বাচিপের জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে তাদের সুপারিশে ২০১৯ সালের দিকে হন সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। পরে ২০২১ সালে হন জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

এরপর মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)র সিনিয়র লেকচারার পদশূন্য হলে নোয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর ডিও লেটারের মাধ্যমে সুপারিশ নিয়ে সেখানে পদায়ন পান ডা. ঝুমা। এভাবেই তিনি গত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাদের ও স্বাচিপের নেতাদের ম্যানেজ করে নোয়াখালী জেলার মধ্যে বিভিন্ন পোস্টে চাকরি করে আলাদা সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন। অথচ তিনি এখন নিজেকে বৈষম্যের স্বীকার বলে দাবি করছেন।

এই বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)র নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহবুবুর রহমান জানান, ‘স্বাচিপের সুপারিশে তৎকালীন ডাঃ ঝুমা বিভিন্ন পদে পদায়িত হয়েছে এটা সত্য, স্বাচিপের সুপারিশেই তিনি ১৪ বছর নোয়াখালী জেলায় চাকরি করছেন। তবে এখন শুনতেছি তিনি নাকি বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন। আসলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই হিসেবে তার পরিবর্তন হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।’

এছাড়াও অভিযোগ আছে তিনি গাইনোকলজিস্ট না হয়েও হিস্টেরেক্টমি বা জরায়ু অপারেশনের মত জটিল অপারেশন করে থাকেন। যার ফলে বিভিন্ন সময় রোগীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এই ব্যাপারে গাইনোকলজিস্ট চিকিৎসকদের সংগঠন (ওজিএসবি) ও সিভিল সার্জন থেকেও ডাক্তার ঝুমাকে এসব অপারেশন না করার জন্য নিষেধ করা হয়।

এ বিষয়ে গাইনোকলজিস্ট চিকিৎসকদের সংগঠন (ওজিএসবি) নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ আবু নাছের জানান, ১ বছরের ট্রেনিং থাকলে সিজার অপারেশন করতে পারবে তবে হিস্টেরেক্টমি বা জরায়ু অপারেশন করার জন্য পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি লাগবে। পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি ছাড়াও কিছু ডাক্তার জরায়ু অপারেশন করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আমরা এসব সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি, সিভিল সার্জন নির্দেশনা দিয়েছেন, তবে ওনার নির্দেশনা এসব ডাক্তাররা মানছে না।

ডাঃ আবু নাছের আরও জানান, ডাঃ শায়লা সুলতানা ঝুমার পোস্ট গ্রাজুয়েশন না থাকায় সিভিল সার্জন তাকে জরায়ু অপারেশন করতে একাধিকার নিষেধ করেছেন, যার কপি আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু তিনি তা পাত্তা দিচ্ছেন না। তারা কয়েকজন ভিতরে ভিতরে এই অপারেশন করছে বলে জানান তিনি।

এবিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ মাসুম ইফতেখার জানান, সরকারিভাবে বলা আছে ১ বছর ট্রেনিং থাকলে সিজার করতে পারবে। তবে জরায়ু অপারেশনের জন্য অবশ্যই পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি লাগবে। এরপরেও যদি কেউ পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি ছাড়া অপারেশন করে, তবে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে অফিস টাইমে কিভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন জানতে চাইলে ম্যাটস’র অধ্যক্ষ ডাঃ বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না, তবে কেউ আমাকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি, যদি অভিযোগ করে তাহলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তিনি প্রতিবেদককে সরাসরি ম্যাটস এ এসে খোঁজ নিতে অনুরোধ জানান। এর বেশি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডাঃ শায়লা সুলতানা ঝুমাকে একাধিক বার কল দিলেও মোবাইলে পাওয়া যায়নি। এজন্য তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি