ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

অবশেষে দিগন্তে আশার আলো

সেলিম জাহান

প্রকাশিত : ২১:১৪, ৩ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ২১:১৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, Freedom for Choice প্রভৃতি।

আর মাত্র সাত দিন, তারপরই শুরু হবে বৈশ্বিক একটি বিশাল ও ভয়ঙ্কর মানবঘাতী শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ের শুভসূচনা। আগামী সপ্তাহ থেকেই ফাইজার ও বায়োএনটেক আবিস্কৃত কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক টিকা দেয়া শুরু হবে যুক্তরাজ্যে। দেশটির ঔষধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইতোমধ্যেই টিকাটি অনুমোদন করেছেন।

বিশ্বে যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশ, যেখানে এই প্রতিষেধক প্রথম প্রয়োগ করা হবে। আগামী সপ্তাহেই যুক্তরাজ্যে আসছে ৮ লাখ মাত্রা প্রতিষেধক। বছর শেষ হওয়ার আগেই যোগ হবে আরও ১ কোটি মাত্রা। ধাপে ধাপে দেয়া হবে এ প্রতিষেধক টিকা। প্রতিষেধক প্রাপ্তির প্রথম কাতারে থাকছেন বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, সেবিকা, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা, বয়োবৃদ্ধরা, যাঁদের কিছু মৌলিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাঁরা ইত্যাদি। সবাইকে দিতে দিতে হয়তো আগামী গ্রীষ্ম এসে যাবে। ততদিন আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দ্বারপ্রান্তে আশার আলো দেখে আমরা যাতে আমাদের কর্তব্য ভুলে না যাই।

আজ এ আনন্দের মুহূর্তে আমরা যাতে ভুলে না যাই- কোভিড-১৯ মহামারীতে এ পর্যন্ত বিশ্বে সাড়ে ১৪ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রাণহানি ঘটেছে ১৫ লক্ষ মানুষের। সেই সব ঝরে যাওয়া প্রাণকে আজ বিনম্রচিত্তে স্মরণ করি। পরম কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি হাজার হাজার চিকিৎসক, সেবিকা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীকে, যাঁরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধেসহ মানুষদের রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুর স্বীকার হয়েছেন। ভুলি কি করে সে সব চিকিৎসক, সেবিকা অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীকে- যাঁরা এখনও অন্যদের বাঁচানোর লড়াইয়ে ব্যস্ত?

বহু বিজ্ঞানীর দিন-রাত্রিব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রমে এ অসাধ্য সাধিত হয়েছে। তাঁদের সবার প্রতি সমস্ত মানবজাতির অতল কৃতজ্ঞতা। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দু’একজনকে চিহ্নিত করে আমরা অন্যদের খাটো না করি। 

ফাইজার ও বায়োএনটেক আবিস্কৃত এ প্রতিষেধকের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য একাধিক প্রতিষ্ঠানে এ জাতীয় প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়েছে। যে অবিশ্বাস্য গতিতে এবং স্বল্পতম সময়ে এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে, তা অভাবিত।

এই আনন্দের মুহূর্তে ক’টি সতর্কবাণী। এক, প্রতিষেধক দেয়া শুরু মানে অন্যান্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা যেন আমরা বাদ না দেই। প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক ব্যবস্থা একে অন্যের পরিপূরক। 

দুই, আমরা যেন প্রতিষেধক টিকা নেয়া থেকে বিরত না হই। জানি, প্রতিষেধকের ব্যাপারে নানা গোষ্ঠী নানান ভয় দেখাবে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা বলা হবে। আমরা যাতে সে সব মিথ্যাচারে না টলে যাই। 

তিন, কোনও কোনও দেশ দাবী করছে যে, তারাও প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে। সে সব প্রক্রিয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি। সে সব থেকে আমরা যাতে দূরে থাকি।

যে আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে আমাদের দিন কেটেছে, তা আমরা কখনও ভুলবো না। বিভীষিকাময় একটি সময়ের শেষে আজ সুড়ঙ্গের শেষে সত্যিই আলো দেখা যাচ্ছে। সমস্ত মানবজাতি উল্লসিত ও আশাবাদী। দিগন্তে আজ আশার সুবর্ণ রেখা। আগামী সপ্তাহে যখন মানুষেরা তাঁদের বাহুতে টিকা নেবে, তা শুধু একটি মহামারীর বিরুদ্ধে প্রতিষেধক নয়; তা আশার, আস্থার এবং একটি সুনন্দ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার টিকাও বটে।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি