ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪

অবহেলিত চারণ কবি বিজয় সরকারের বসতভিটা

প্রকাশিত : ১২:০১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ০৯:১৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণ কবি বিজয় সরকারের মৃত্যুর ৩৩ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র। নির্মিত হয়নি স্মৃতি সংগ্রহশালা ও গানের একাডেমি। স্বরলিপির অভাবে এ প্রজন্মের শিল্পীরা বিজয় সরকারের গানের চর্চা ঠিকমত করতে পারছেন না। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা থাকায় কবির বাড়িতে যেতে দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় ১০ বছর আগে ছোট্ট পরিসরে ‘বিজয় মঞ্চ’ নির্মিত হলেও বেশির ভাগ জায়গা ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে। ভেতরে পোকামাকড়ের মলসহ নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। কবিয়াল বিজয় সরকারের বসতভিটা নড়াইলের নিভৃত পল্লী ডুমদি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে এমন অবহেলা ও দুর্দশার চিত্র দেখা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নড়াইল সদরের ডুমদি গ্রামে বিজয় মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। প্রায় পাঁচ বছর আগে বিজয় মঞ্চের টাইলস, জানালা, পিলার ও দেওয়ালে ফাটল ধরলেও তা সংস্কার হয়নি। দেখার কেউ না থাকায় দিন দিন নষ্ট হচ্ছে বিজয় মঞ্চ, কবির ব্যবহৃত খাটসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রায় দেড় বছর আগে ডুমদি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছালেও কবির বাড়িতে নেই সুপেয় পানি এবং টয়লেট ব্যবস্থা।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামের ইয়াসিন শেখ ও তরিকুল ইসলাম বলেন, দুর-দুরান্ত থেকে ভক্তরা বিজয় সরকারের বাড়ি দেখতে আসেন। কিন্তু এখানে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। গ্রাম্য রাস্তায় যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়। নড়াইল শহরের মনিকা একাডেমির পরিচালক চিত্র ও কণ্ঠশিল্পী সবুজ সুলতান বলেন, অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিজয় সরকারের বসতভিটা। পর্যটকরা এসে হতাশ হন। কবির ব্যবহৃত কোনও জিনিসপত্র এখনও সংরক্ষণ হয়নি। স্বরলিপি না থাকায় যে যার মতো বিজয়গীতি গেয়ে যাচ্ছেন। এতে অনেক সময় তার গান বিকৃত হয়ে যাচ্ছে।

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিনা আক্তার বলেন, ডুমদি গ্রামে কবির বাড়িতে এসে তার সম্পর্কে জানার মতো কোনও উপাদান ও পরিবেশ নেই এখানে। কোনও টিউবওয়েল, বাথরুম এবং বসার ব্যবস্থা নেই।

বিজয় সরকার জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন পর্ষদ প্রচার কমিটির আহ্বায়ক নড়াইল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, নড়াইলের আনাচে-কানাচে তথা দেশ-বিদেশে বিজয় সরকারের গানের ব্যাপক সমাদর থাকলেও তার বসতভিটা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। কবির মৃত্যুর ৩৩ বছরেও ডুমদি গ্রামে ‘বিজয় সরকার স্মৃতি সংগ্রহশালা ও গান একাডেমি’ নির্মাণের দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী বলেন, বিজয় সরকারের গান অবলম্বনে ৫০টি ছবি এঁকেছি। তার সুরের মূর্ছনা রঙতুলির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বিজয় সরকারের স্মৃতি সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনও উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, বিজয় সরকারের কর্মময় জীবন ও আদর্শকে এগিয়ে নিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাবো। এছাড়া তার (বিজয় সরকার) ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজকের (শনিবার) জারিগান ও আলোচনা অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও সার্থক করতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, বিজয় সরকারের বসতভিটা রক্ষণাবেক্ষণসহ তার স্মৃতি সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তাটিও পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদরের নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের হাওড়ার বেলুডে পরলোকগমন করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন বিজয় সরকার। এক হাজার ৮০০ বেশি গান লিখেছেন তিনি। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। গানের কথা ও সুরের মাঝে বিজয় সরকার আজও বেঁচে আছেন হাজারো মানুষের হৃদয়ে।

এদিকে বিজয় সরকারের ১১৭ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে নড়াইলের ডুমদিতে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, নগরকীর্ত্তন, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়গীতি পরিবেশন করা হয়। এছাড়া ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি আলোচনা সভা ও বিজয়গীতি পরিবেশন করা হয়েছে। আজ শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে কবির বসতভিটা ডুমদিতে জারিগান এবং বিকেলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি