ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

অমিতাভ-জয়ার বিয়েতে ভীষণ অসন্তুষ্ট হন রাজেশ খান্না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৬, ৪ জুন ২০২০

করোনায় থাবায় বিপর্যস্ত গোটা দেশ। আবার অন্যদিকে শুরু হয়েছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ।তার মাঝেও বুধবার সকাল থেকে বলিউডে চলছে বিশাল হইচই। অমিতাভ বচ্চন-জয়া ভাদুড়ি এই দিনে ৪৭ বছর আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। কর্ণ জোহর, বিপাশা বসু হয়ে বলিউডের সমস্ত তারকা, বচ্চন-অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় ভাসছে বিগ বি-র সোশ্যাল হ্যান্ডেল। তিনি নিজেও বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সামনে এনেছেন তাঁদের বিয়ের অজানা গল্প। বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন না হুকুম করলে বিয়েই নাকি হত না অমিত-জয়ার!

সত্যি? জানতে গেলে পিছু হাঁটতে হবে ডাউন মেমরি লেন ধরে...সালটি ১৯৭১। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ সুপারহিট। নায়ক-নায়িকা সমীর ভঞ্জ-জয়া ভাদুড়ি। সাল ১৯৭৩। পরিচালক প্রকাশ মেহরার ‘জঞ্জির’ ছবি ব্লকবাস্টার হিট। এরও নায়ক-নায়িকা অমিত-জয়া। মাঝেরদু’টো বছর অনেকটা বদলে দিয়েছে তাঁদের পর্দার কেমিস্ট্রি। রিল রোম্যান্স ধীরে ধীরে পাখা মেলছে বাস্তবেও। ‘গুড্ডি’-র সেটের ভাললাগা ততদিনে গভীর ভালবাসায়। আরবসাগরের তখনকার ‘বম্বে’-তে ফিসফিস, কানাকানি অমিত-জয়ার প্রেম নিয়ে। অমিতের বাবা কবি হরিবংশ রাই বচ্চনের কানে হালকা খবর পৌঁছলেও কতটা গাঢ় ছেলে-হবু বউমার রসায়ন, তখনও জানেন না।

‘জঞ্জির’ প্রথমে হিট, তারপর সুপারহিট। এবং তখনকার বেশ কিছু ছবির রেকর্ড ভেঙে ব্লকবাস্টার তকমা ছুঁইছুঁই। এর তো সেলিব্রেশন চাই! সঙ্গে রয়েছে প্রেমের দু’বছর পূর্তি। সব মিলিয়ে হাওয়ায় উড়ছেন অমিত-জয়া। গোপনে ঠিক করে ফেলেছেন, দুই পর্ব মিলিয়ে জমাটি সেলিব্রেশন হবে। তবে এখানে নয়, লন্ডনে। সেই খবর কানে পৌঁছল হরিবংশ রাইয়ের, ছেলে লন্ডনে উড়ে যাওয়ার আগের দিন। সত্যি যাচাই করতে তিনি ডেকে পাঠালেন অমিতকে। স্পষ্ট করে জানতে চাইলেন, ‘‘কোথায় যাচ্ছ? কাকে সঙ্গে নিয়ে?’’

বাবাকে সেদিন সত্যি উত্তর দিয়েছিলেন অমিত—জয়া আর তিনি যাচ্ছেন। আর কেউ নয়। শোনার পরেই হরিবংশ রাইয়ের হুকুম, ‘‘লন্ডন সেলিব্রেশন পরে। আগে বিয়ে কর। বিয়ে না করে এভাবে সেলিব্রেশন আমি মেনে নেব না!’’ হরিবংশ হুকুম দিয়ে খালাস। কিন্তু এক রাতের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা হয় কী করে? নিরুপায় অমিত না ফেলতে পারেন বাবার নির্দেশ না সরাতে পারেন জয়ার আকর্ষণ। ফলে, বাবার কাছে থেকে বিয়ের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরেই তিনি ছুটলেন জয়ার বাড়ি। রাজি করালেন সাংবাদিক-লেখক তরুণ ভাদুড়ি-ইন্দিরা ভাদুড়িকে। তাঁদের মত নিয়ে ১৯৭৩-এর ৩ জুন রাতারাতি বিয়ে সেরেছিলেন অমিত-জয়া। সেই রাতেই উড়ে গিয়েছিলেন ডেস্টিনেশন লন্ডনে। অনেকেই বলেন, বাবার কড়া হুকুম না থাকলে গাঢ় প্রেম থাকলেও বিয়ে হত কিনা সন্দেহ!

এই বিয়ে নিয়ে আর একটি মজার গপ্পোও আছে। অমিত-জয়ার প্রেমের শুরুতে জয়া বলিউডের মস্ত সেলেব। অমিতাভ তখন এ দিক-সে দিক জুতো ঘষটাচ্ছেন। এমন অসম প্রেম নিয়ে নাকি ভয়ানক আপত্তি ছিল রাজেশ খন্নার! হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাবুর্চি’ ছবির সেটে ঘনঘন দেখা যাচ্ছিল অমিতকে। আর তাঁকে দেখলেই রেগে লাল হতেন রাজেশ খন্না। তার আগে অবশ্য জয়াও পাত্তা দিতে চাননি অমিতকে। যখন শুনলেন, তিনি হরিবংশ রাই বচ্চনের ছেলে, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারেননি! তাই দু’জনের প্রেম যখন বিয়ে পর্যন্ত গড়াল ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন রাজেশ।

আর এক বিপরীত ছবি বলিউড দেখেছিল হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। কাজের প্রথম দিন থেকেই তাঁর সঙ্গে ভীষণ ভাল বন্ডিং তৈরি হয়েছিল জয়ার। জয়া তাঁকে বাবার সম্মান দিতেন। কিন্তু লজ্জায় অমিতের সঙ্গে প্রেমের কোনও কথাই জানাতে পারেননি। এদিকে জয়ার মাধ্যমে পরিচালকের সঙ্গে আলাপ-ঘনিষ্ঠতা অমিতের। তাই বিয়ে ঠিক হতেই সবার আগে তিনি প্রিয় হৃষিদাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, বরপক্ষের হয়ে বিয়েতে থাকতে হবে তাঁকে। প্রবীণ পরিচালক এককথায় রাজি। অমিতের পর জয়া কথা বলেন হৃষিকেশের সঙ্গে। পুরো ঘটনা জানিয়ে অনুরোধ করেন, জয়ার কন্যাদান তাঁকেই করতে হবে। কারণ, তাঁর কাছে পরিচালক পিতৃসম।

শুনেই এককথায় জয়ার প্রস্তাব নাকি নাকচ করে দিয়েছিলেন হৃষিকেশ। গম্ভীর হয়ে জানিয়েছিলেন, আগেই বরকর্তা হিসেবে একই দিনে একই সময়ে তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে আর একটি বিয়েতে। তিনি কথা দিয়েছেন। শুনেই কেঁদে ফেলেন জয়া! বলেন, ‘‘আমার ভরসা ছিল, আপনি কন্যাদান করবেন। সেই ভরসাতেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। এবার আপনিই থাকবেন না! কী করে বিয়ে হবে আমার?’’ তখন হাসতে হাসতে মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি জয়াকে আশ্বস্ত করেন, ‘‘আরে পাগলি! তোর বিয়েতে আমি থাকব না, হয় নাকি? আমি থাকব বরপক্ষের হয়ে। কারণ, অমিত আমায় আগে বুক করেছে!’’

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি