ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

অর্থনীতি সচল করতে এখনই ভাবছেন জার্মান বিশেষজ্ঞরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫২, ৯ এপ্রিল ২০২০

দুই বিশ্বযুদ্ধ দুনিয়ার অর্থনীতিকে যে সংকটে ফেলেছিল, করোনা ভাইরাসের কারণে সেরকম সংকট দেখা দেবে। তবে এই মহামারী ঠেকিয়ে কীভাবে সুনির্দিষ্ট কারখানা ও কর্মীদের কর্মকাণ্ড শুরু করা যায় সে বিষয়ে একটি সুপারিশ তৈরি করছেন ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল।

নভেল করোনা ভাইরাসের মহামারী নিয়ন্ত্রণে মানুষকে ঘরে রাখতে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধসহ বিশ্বজুড়েই সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় অচল থাকায় ক্ষতির বোঝা প্রতিদিনই বাড়ছে। এই মহামারী কবে নাগাদ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে সে বিষয়ে এখনই কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে কর্মকাণ্ডে কড়া বিধি-নিষেধ চালু থাকলে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে কারণে মহামারী ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকার মধ্যেই কীভাবে প্রাদুর্ভাব কমানোর সুযোগ নিয়ে কল-কারখানা, অফিস-আদালত ও স্কুল আস্তে আস্তে খোলা যায় তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে অনেক দেশ।

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে এরই মধ্যে অস্ট্রিয়া ইস্টার উৎসবের পর দোকানপাট চালু করার ঘোষণা দিয়েছে বলে সিএনএন জানিয়েছে। জার্মানিতে এখন এক লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই হাজার জনের বেশির মৃত্যু হয়েছে।

সিএনএন বলছে, গত সপ্তাহে আইএফও ইনস্টিটিউট ফর ইকনোমিক রিসার্চে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞ দলটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কোনো কার্যকর চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন ২০২১ সালের আগে আবিষ্কার করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন না। তাই এই রোগের বিরুদ্ধে জার্মানিকে ‘স্প্রিন্টের বদলে ম্যারাথন’গতিতে লড়ার সুপারিশ করেছেন তারা।

তারা লিখেছেন, ‘এমনভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সেগুলো সুস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মেয়াদের সময়কালের জন্য টেকসই হয়। রাজনীতি, প্রশাসন, কোম্পানি ও অন্য সব সংস্থার ক্ষেত্রেই এ রকমের রূপান্তর প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত।’

অর্থনৈতিক মন্দার দোরগোড়ায় থাকায় জার্মানি মহামারী ঠেকাতে অন্তত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল রেস্তোরাঁ খেলার মাঠ ক্রীড়াঙ্গন এবং অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রেখেছে। এই বিধিনিষেধ উঠিয়ে দেওয়ার কোনো সময়সূচি এখনও বলে সরকারের মুখপাত্র স্টিফেন সিবার্ট বলেছেন।

আইএফও-এর পূর্বাভাস বলছে, লকডাউন পরিস্থিতি আরো তিন মাস অব্যাহত তাহলে জার্মানি অন্তত ২০ শতাংশ জিডিপি হারাবে।

অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া, কোম্পানির কিছু অংশ অধিগ্রহণ করা এবং শ্রমিকদের ছুটিতে ভর্তুকির মতো পদক্ষেপসহ প্রায় ৮২৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জনজীবনে আরোপিত বিধি নিষেধ কবে নাগাদ সহজ করা যায় এবং কারখানাগুলোতে কখন উৎপাদন শুরু করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশমালা তৈরি জন্য বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে জার্মানির বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা টেলিযোগাযোগ ও অটোমোবাইল উৎপাদনের মত কারখানাগুলো প্রথমে চালু করা যায়। অন্যদিকে বাড়িতে থেকে যে সমস্ত কাজ করা যায় সেগুলো দূরে থেকেই সারা উচিত। শিশুদের মধ্যে তেমন মারাত্মক উপসর্গ এখনো পর্যন্ত দেখা না দেওয়ায় নার্সারি ও স্কুলগুলো দ্রুত খুলে দেওয়া যায়। কিন্তু শিশু সেবা কেন্দ্র এবং স্কুল চালু না হলে পিতামাতাদের কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ রাখা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের মানদণ্ড নির্ধারণ করা যায়। গ্রামীণ এলাকাসহ সেসব অঞ্চলে নিম্ন পর্যায়ে সংক্রমণের হার ও ঝুঁকি কম রয়েছে, সেগুলোতে প্রথমে বিধি-নিষেধ শিথিল করা যায়। এরপর যেসব এলাকায় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে সেগুলোতে বিধি-নিষেধ কমিয়ে দেওয়া যায়।

তবে এর জন্য অবশ্যই সমন্বিত ও বৃহদাকারের করোনাভাইরাস পরীক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সমন্বিত প্রশিক্ষণ এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে নতুন নীতিমালা গ্রহণও জরুরি।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক ও মাস্কের উৎপাদন ব্যাপক বাড়ানো ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষমতা বাড়ানো এবং কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত করার ওপর জোর দিয়েছেন জার্মানির বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, অর্থনীতি পুনরায় চালু করার বিষয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স সুপারিশ দিলেও কখন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।

তবুও উৎপাদন ও কাজ শুরুর বিষয়টি এখনই কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রথমত প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলো নিজেরাই করবে। 

 

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি