অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে দরকার সমতায়ন : স্পিকার
প্রকাশিত : ১৫:১৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১০:৫৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন দৃশ্যমান। দৃশ্যমান এ প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে হলে সমাজ জীবনে নারী-পুরুষের সমতায়ন নিশ্চিত করা দরকার। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন- ২০১৭’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা’কে মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের তিনদিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী। এতে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিশ্বায়নের প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করেই নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। এক্ষেত্রে নারী সামাজকে অর্থনীতির মূল ধারায় অন্তভূক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর যোগসূত্র রয়েছে। আমাদের চিন্তা করতে হবে আমরা কিভাবে অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করছি। অনেকে এটাকে একে অপরের প্রতিদ্বন্ধী মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি কীভাবে চলবে, এটি কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবকিছু নির্ধারিত হবে নাকি সেখানে আইনী কোনো পদক্ষেপ প্রয়োজন আছে, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। অর্থনীতিতে অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়েই অগ্রসর হয়। এটাকে স্বার্থপর বলা উচিত নয়। আমরা অনেক সময় চাহিদা ও যোগানের যোগসূত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে দারিদ্র নিরসনের কাজ করতে পারি।
স্পিকার বলেন, দারিদ্র বিমোচন এবং বৈষম্য নিরসনের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই উন্নত দেশগুলোতেও অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রবল। এমনকি সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও (এমডিজি) অর্থনীতির বৈষম্যের কথাটি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। তবে বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনের কথাটি একটি বড় বিষয় হিসেব গুরুত্ব পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি’র বক্তৃতায় অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাতে হলে রাজনীতিতে অর্থনৈতিক দুর্বিত্তায়ন নিরসন করতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনা দরকার।
তিনি বলেন, রাজনীতিতেও অসমতা রয়েছে। এখন যাদের হাতে টাকা আছে তারাই নেতা হচ্ছেন। কিন্তু এই রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন করেননি। রাজনীতিতেও অর্থনীতির নৈতকতার বিষয়টি ভাবতে হবে।
এ বছর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র পক্ষ থেকে তিনজনকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। এরমধ্যে অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন (মরণোত্তর), অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, ও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীকে এই পদকে ভূষিত করা হয়।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, মানবসভ্যতার শুরু থেকেই অর্থনীতি শাস্ত্র ও নৈতিকতার বিষয়টি বারবার প্রতিবিম্বিত হয়েছে সমাজ মানুষের জীবনে। আমাদের প্রতিরোধ, দেশ-প্রেমের লড়াইয়ের ইতিহাস ব্যক্তি-সমাজ জীবনের প্রতি পরতে-পরতে জড়িয়ে গেছি। আমাদের অবিচল বিশ্বাস এ দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বয়ে আনবে নতুনতর ভাবনা-চিন্তার অজস্র সম্ভাবনা। বদলে যাবে অন্তর্জীবন ও বহির্জীবনের জলছবি। দেশ-কালের সীমা ছাড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে শুদ্ধতম রাজনীতি।
আরকে/এমআর
আরও পড়ুন