অর্থপাচার নিয়ে প্রচারিত সব তথ্যই সত্য নয় : ডেপুটি গভর্নর
প্রকাশিত : ১৭:৫৮, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেছেন, আমদানি-রপ্তানিভিত্তিক অর্থ পাচারের অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রেই এই অভিযোগটা সবচেয়ে বেশি। তবে অর্থ পাচার নিয়ে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা অনেকাংশেই সত্য নয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে করপোরেট ইথিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইন ব্যাংকসঃ বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। এতে অন্যান্যের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী, মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় ডেপুটি গভর্নর বলেন, সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে পরিমাণ অর্থ রাখার কথা বলা হয়, তার পরিমাণ অতো বেশি হবে না। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় কঠোর অবস্থানে। সব ধরণের অর্থপাচার ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান আরও বলেন, ব্যাংকিং ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে আস্থার উপর নির্ভরশীল। আমানতকারীদের আস্থার সংকট শুরু হলে ব্যাংকিং ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি ব্যাংকে আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা সংকটের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গ্রাহকরা আমানতের অর্থ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও ব্যাংকটি চাহিদামতো সেই অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারছে না। এই সংকট ব্যবস্থাপনা ব্যাংকটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। উপস্থাপিত এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বাড়ছে। অনিয়ম করলেও শাস্তি না হওয়াকে আর্থিক অনিয়মের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব, নৈতিকতা বিষয়ে উৎসাহ প্রদানের অভাব এবং ব্যাংকারদের অল্প বেতন-ভাতা এর জন্য দায়ী। এ গবেষণা প্রতিবেদনের জন্য ২০০ জন ব্যাংকারের সাক্ষাৎকার নেয় বিআইবিএম। এতে প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনাগুলো বেড়েই চলেছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানকার বোর্ড সুশাসন বাস্তবায়নের পরিবর্তে ঋণ অনুমোদন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকের বোর্ডের মূল কাজ হলো নীতি প্রণয়ন এবং নজরদারি করা। কিন্তু বাংলাদেশে সুশাসনের সংস্কৃতির প্রচলন নেই।
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মানুষের কষ্টের কথা শোনার জন্য আর্থিক ন্যায়পাল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, একটা ব্যাংকের স্টেকহোল্ডার হলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড এবং অপরাধ চক্র। আজকের এই আয়োজনে তারা কেউ নেই। একটি বিদেশী ব্যাংকের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মাত্র একজন ব্যক্তির অপরাধের কারণে ২০০ বছরের একটি ব্যাংক ধসে পড়েছে। ব্যাংকের আস্থা সংকট খেলাপি ঋণের চেয়েও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, পারিবারিকভাবেই নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতা খুবই জরুরী। এখানে অন্যের টাকায় ব্যবসা করা হয়। সবক্ষেত্রেই কাউকে রোল মডেল হিসেবে নিতে হবে। তবে ব্যাংক ম্যানেজার যদি অপরাধী হয় তাকে রোল মডেল বানানো যাবে না। এই অপরাধীর চেয়েও বড় অপরাধী ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা। এদের শাস্তি হওয়া উচিত। পৃথিবীর সব দেশে এদের শাস্তি হয়।
আরকে//
আরও পড়ুন