ট্যানারি স্থানান্তর
অসম্পূর্ণতার কারণে কাজে আসছে না সম্ভাবনা
প্রকাশিত : ১০:৩১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১১:৪০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
দেশের রফতানি আয়ের পরিধি বাড়াতে তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে চামড়া শিল্পকে। শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের আশা করা হচ্ছে। সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সরকার গত বছর এ খাতকে ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছে। সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ট্যানারি পল্লী। কাঙ্ক্ষিত সে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরিত এ চামড়া শিল্প নগরী কতটা প্রস্তুত। নতুন এ শিল্প নগরীতে পরিবেশ, বিনিয়োগ বা ব্যবসায়ীদের দাবিগুলোও কতটুকু আদায় হয়েছে এসব দিক নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদের সঙ্গে। ইটিভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অসম্পূর্ণতা রেখেই স্থানান্তরিত হয়েছিল চামড়া শিল্প নগরী। এখনও কিছু কিছু অসম্পূর্ণতা রয়েই গছে। যার কারণে আমরা চামড়া শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছি না। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইটিভি অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম।
ইটিভি অনলাইন: স্থানান্তরিত নতুন চামড়া শিল্প নগরীর বর্জ থেকেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে সম্প্রতি স্থানীয়রা আন্দোলন করেছে। সম্প্রতি একটি পরিবেশবাদী সংগঠনও এ নিয়ে আদালতে মামলা করেছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
শাহিন আহমেদ: পরিবেশ দূষিত হওয়ার জন্য বরাবরই আমাদের দায়ী করা হয়। কারণ এ ব্যবসার সাথে আমরা জড়িত। কিন্তু একটা বিষয় দেখা হয় না যে এ খাত থেকে আমাদের রফতানি আয় কত আসছে। এ খাতে কত লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে।
তবে আমরাও চাই না যে পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো ব্যবসা করি। আর তাই অসম্পূর্ণতার মধ্যেও আমরা আমাদের কারখানাগুলো সাভারে স্থানান্তর করেছি। কিন্তু প্রথমে যে অসম্পূর্ণতা ছিল তার জের এখনও রয়ে গেছে। অর্থাৎ সে অসম্পূর্ণতার কারণে নতুন করে বর্জ শোধন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার রেশ ধরে আবারও আমাদের উপর দায় চাপানো হচ্ছে।
ইটিভি অনলাইন: মূলত কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনি অসম্পূর্ণতা দেখছেন?
শাহিন আহমেদ: নতুন শিল্প নগরীতে এখনও দুটি সিইটিপি’র বর্জ্যশোধন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাতে পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। এছাড়া অবকাঠামো, পর্যাপ্ত রাস্তা ও প্লট হস্তান্তর বা রেজিস্ট্রেশনসহ নানাবিধ কার্যক্রম এখনও ঝুলে আছে। পরিবেশ দূষণ ও সুযোগ সুবিধার অপ্রাপ্তিতে আমাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
ইটিভি অনলাইন: সরকারের এতোবড় প্রকল্প অসম্পূর্ণতার ভিতরেই স্থানান্তরিত হলো। যার কারণে সৃষ্ট ক্ষতির দায়ভার আবার আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) উপর চাপানো হচ্ছে। আপনি কী এটা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে করেন?
শাহিন আহমেদ: এক সময় দেশের রফতানি আয়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল পাট। নানাবিধ ষড়যন্ত্র সেটাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। আবার বর্তমানের পোশাক শিল্প নিয়েও অব্যাহত ষড়যন্ত্রের প্রমাণ আছে। অতীতের এ উদাহরণ থেকেই অনুমান করা যায় যে উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় এ শিল্পের পিছনে কতটুকু ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তবে হাজারো ষড়যন্ত্রের ভিতরে আমরা আমাদের কাজ (ব্যবসা) এগিয়ে নিতে চাই। কিন্তু আমরা চাইলে কী হবে, ষড়যন্ত্রকারীরা তো আমাদের কাঙ্ক্ষিত রফতানি লক্ষ্যকে অর্জন করতে দিবে না। কারণ ট্যানারি পল্লীতে বর্জ্য শোধনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হলে আমাদের কাজ থমকে যাবে। তাতে পরিবেশের দোহায় দিয়ে খ্যাতনামা ক্রেতারাও আমাদের দেশে আসবে না।
ইটিভি অনলাইন: আপনি কী মনে করেন বর্তমানের অবস্থা থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে?
শাহিন আহমেদ: আগামী ২০২১ সালের মধ্যে আমরা যে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্য নিয়েছি, তা অর্জন তখনই সম্ভব হবে যখন আমাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের মাধ্যমে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারবো। আর বর্তমানে ট্যানারি শিল্পের যে অবস্থা চলছে এ অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী দুই বছরে পজেটিভ গ্রোথ কোনভাবেই সম্ভব নয়।
ইটিভি অনলাইন: এই মুহূর্তে ট্যানারি শিল্পে রফতানি আদেশ রয়েছে কী পরিমাণ?
শাহীন আহমেদ: ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যখন রফতানির চুক্তি হয় তখন তারা একটি শিপমেন্ট ডেট দেয়, সেই সঙ্গে এক্সট্রা আরও ১৫ দিন সময় দেয়। যাতে শিপমেন্টের ডেট কোনো কারণে মিস করলে, বাড়তি সময়ে অন্তত পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে। এই মুহূর্তে সাভারের ট্যানারিগুলোতে দেড় হাজার কোটি টাকার চামড়া রফতানির আদেশ রয়েছে। কিন্তু চলমান সঙ্কটের কারণে হয়তো আদেশগুলো ঝুলে যাবে।
টিকে
আরও পড়ুন