আগুন নেভার পর যা দেখা গেল সচিবালয়ে
প্রকাশিত : ০৯:২৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সচিবালয়ে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। পুড়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সব নথি। গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বড়দিনের ছুটির রাতে আগুনের লেলিহান শিখায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় ৭ নম্বর ভবনের ছয়, সাত, আট, নয়-এ মোট চারটি তলা।
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, ছয় তলায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দীর্ঘ প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় গভীর রাতে লাগা আগুন নেভে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায়। তবে পুরো আগুন নেভাতে লেগেছে প্রায় ১০ ঘণ্টা। আগুন নেভাতে এসে মারা গেছেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। নানান মহল থেকে এ অগ্নিকা কে রহস্যময় বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নানা প্রশ্ন উঠছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার টক অব দ্য কান্ট্রি ছিল সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড। আগের দিন বুধবার ছিল বড়দিনের ছুটি। ছুটির রাতের এ আগুন নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে জনমনে। কয়েক ঘণ্টা ধরে জ্বললেও তা টের পাননি অদূরে থাকা অনেকেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনেছেন আগুনের কথা। কেউ বলছেন ষড়যন্ত্র, কেউ বলছেন পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। উৎসুক জনতারও প্রশ্ন- সচিবালয়ের আগুন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেন জ্বলল? এখানে না কোনো কেমিক্যাল আছে, না কোনো তেলের পাম্প; রাস্তাও পুরান ঢাকার মতো সরু নয়। এমন জায়গায় ৬-৭ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলাটাই তো সম্পূর্ণ রহস্য।
গতকাল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস থাকায় অফিসসূচি অনুযায়ী সকালেই সচিবালয়ে হাজির হন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মী। পাঁচটি গেটের মধ্যে কেবল একটি খোলা থাকায় প্রচণ্ড ভিড় লেগে যায়। সে ভিড় পেরিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে ঢুকলেও দাপ্তরিক কার্যক্রম না হওয়ায় অনেকেই আবার বেরিয়ে যান। আগুন লাগার ঘটনায় সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবন বিদ্যুৎহীন ছিল। বেশির ভাগ লিফট বন্ধ ছিল। কিছু জেনারেটর চললেও অধিকাংশ স্থানে অন্ধকার পরিবেশ ছিল।
ভবনের মাঝখানের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে গিয়ে দেখা গেছে, একেবারে নিচ থেকে পানি এবং ছাইয়ের মিশ্রণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পাঁচ তলা পর্যন্ত আগুনে কোনো ক্ষতি হয়নি। আগুনে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ছয়, সাত, আট ও নয় তলার ফ্লোর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রতিটি কক্ষের সবকিছু ভস্মীভূত হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে। সিঁড়ি ধসে গেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোড়া আসবাবপত্রের ধ্বংসস্তূপ। ভিতরের এ অবস্থা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে দেখা গেছে, এসব তলায় আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এ ভবনের ছয় তলায় শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সাত তলায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। আট তলায় রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের কিছু অংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কিছু অংশ। এ ভবনের নয় তলায় রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জানালার ভাঙা কাচের গুঁড়া। ভবনের দক্ষিণ পাশে মরে পড়ে আছে কয়েকটি কবুতর। পুড়ে যাওয়া অংশ থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সচিবালয়ের ভিতরে টহল দিতে দেখা যায় সেনা সদস্যদের। আগুনের ঘটনায় পৃথক দুটি কমিটি করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি এবং ভবিষ্যতে যে কোনো দুর্ঘটনার ফলে উদ্ভূত ক্ষয়ক্ষতি রোধকল্পে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি জানতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। পল্লী ও সমবায় বিভাগের জন্য আলাদা কমিটি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য মন্ত্রণালয় এ ধরনের ক্ষতির হিসাব করতে কমিটি করবে বলেও জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সদস্য জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে তাঁদের পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে।
সচিবালয়ের ফটক দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভিতরে ঢোকাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
এসএস//
আরও পড়ুন