ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আজ সেই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৭ বছর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৯, ২৩ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ০০:৪৮, ২৪ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

আজ শুক্রবার সেই রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৭ম বার্ষিকী। সাত বছর আগের এই দিনে ভয়াবহ এক ভবন ধসের ঘটনায় আঁতকে উঠেছিলো সারা বিশ্বের মানুষ। পৃথিবীর শিল্প কারখানার ইতিহাসের অন্যতম এই ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগে নিমিষেই সাভারের রানা প্লাজা হয়ে উঠেছিলো দুঃখ ও বেদনার এক শোকগাঁথা। 

কিছু কিছু ঘটনা এতটাই বেদনাবিধুর হয় যে, স্মৃতিও কিছু ঘটনা কখনোই মুছে ফেলতে পারে না। মানুষ তাই প্রতিবছরের বিশেষ সময়ে তাকে মনে করতে বাধ্য হয়। আমাদের জাতীয় জীবনে ২৪ এপ্রিল তেমনই এক বেদনা বিজড়িত দিন। দেশ তথা সারা বিশ্বের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন আরও কয়েক হাজার শ্রমিক।

সেদিনের সেই ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন তার মাকে, কেউ তার বাবা, কেউ তার ভাই, কেউ বোন, কেউ তার স্ত্রী, কেউ আবার স্বামীকে।

দেশের ইতিহাসে মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় বিপর্যয় এটাই। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের ৯ তলা রানা প্লাজা ভবন। ভবনটির তৃতীয়তলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা। এতে প্রায় ৪ হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন। ভবন ধসের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে চাপা পড়েন চার হাজার পোশাক শ্রমিক। তাদের কান্না আর আহাজারিতে শোকের মাতম নেমে আসে পুরো সাভারে।

খবর পেয়ে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাধারণ উদ্ধার কর্মী, দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যরা। 

ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বের হতে থাকে জীবন্ত ও মৃত মানুষ। উদ্ধার হওয়া আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে মহাসড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় অ্যাম্বুলেন্স। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ছুটে আসে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী।

ধ্বংসস্তূপ থেকে একে একে বের হতে থাকে জীবন্ত, মৃত ও অর্ধ-মৃত মানুষ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়; হাসপাতাল মর্গ ভরে ওঠে লাশে। পরে এসব লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে। স্কুল বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে লাশ রেখে দেওয়া হয়। লাশের সংখ্যার হিসাব রাখার জন্য ঝুলানো হয় স্কোরবোর্ড। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয় কফিনের বাক্স।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে চাপা পড়া লোকদের স্বজনেরা ছুটে আসেন রানা প্লাজার সামনে। তাদের কান্না আর আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে ওঠে।

প্রিয়জনকে জীবিত না পেলেও তার মৃতদেহ নেওয়ার জন্য স্বজনেরা ভিড় জমান অধরচন্দ্র স্কুল মাঠে।

ধসের পর দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হতে থাকে। তবে উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি দেখে, কোনও কিছু না ভেবেই উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। উদ্ধারকাজের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না কারও। তবু ভবনের নিচে আটকে পড়া মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ঢুকে পড়েন ধ্বংসস্তূপের ভেতরে। পচা লাশের গন্ধ উপেক্ষা করে তারা সন্ধান করেন জীবিত প্রাণের। সেই মানুষগুলোর কারণেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ২৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় ১১৩৮ জনের।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি