আজমতের পুঁজি অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরের তরুণ ভোটার
প্রকাশিত : ১৯:০৯, ৫ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১১:০৩, ৮ এপ্রিল ২০১৮
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের এখনও ঢের দেরি। তবে নির্বাচনের আগেই প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে জমে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই। এ যেন ভোটের আগেই ‘আসল ভোট’। অফিস - আদালত থেকে কাঁচাবাজার, রাস্তা ঘাট, অলি গলি সবখানেই এখন নির্বাচনী উৎসবের আমেজ। সবার আলোচনার বিষয় মেয়র পদে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল থেকে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যখন মনোনয়ন ঘিরে জল্পনা কল্পনা তখন প্রার্থীরা ব্যস্ত নিজ অবস্থান জানান দিতে। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা মহানগরী। কৌশলে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন কোনো কোনো প্রার্থী।
নগরবাসী মনোনয়নকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ভোটের দিক থেকে। সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক প্রায় সবাই মনে করছেন দুই দলের মেয়র পদে মনোনয়ন থেকেই ভোটের লড়াই স্পষ্ট হয়ে যাবে। প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো দল ভুল করলে নির্বাচন জমে উঠবে না। তাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল মনোনয়ন নিয়ে এক ধরনের দোটানায় পড়ে গেছে। এর কারণ দুই দলেই এমন দু’জন করে প্রার্থী মনোনয়ন দাবিদার যাদের রয়েছে শক্ত রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড। কেউ অভিজ্ঞতায় এগিয়ে তো কেউ তারুণ্যের শক্তি দিয়ে। কেউ কেন্দ্রে এগিয়ে তো কেউ তৃণমূলে। প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগে আজমত উল্লাহ খান ও জাহাঙ্গীর আলম। আর বিএনপিতে অধ্যাপক এম এ মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকার।
জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সিটির এই ভোট সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ। তাই মনোনয়ন নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মনোনয়ন আলোচনায় এগিয়ে থাকা আজমত ও জাহাঙ্গীর নির্বাচন করতে নিজ নিজ অবস্থানে অনঢ়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান এগিয়ে অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক দক্ষতায়। প্রবীণ আওয়ামী লীগাররা মেয়র নির্বাচনে আজমতের বিকল্প অন্য কাউকে ভাবতে নারাজ। অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পুঁজি তরুণ ভোটাররা। জাহাঙ্গীর সমর্থকরা মনে করেন, গাজীপুর মহানগরের ১১ লাখ ভোটারের মধ্যে একটি বড় অংশ তরুণ ভোটার। আর নানা ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়ে তরুণদের সম্পৃক্ত করে তাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন জাহাঙ্গীর।
জমে উঠেছে দুই অ্যাডভোকেটের লড়াই
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর একজন অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। এর আগে তিনি তিন মেয়াদে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন তার কমিটির সভাপতি ছিলেন বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচের এই ছাত্র (আজমত) টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন টানা তিনবার। সারা বাংলাদেশের পৌরসভা মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন আজমত। তাকে বলা হতো মেয়রদের মেয়র। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তবে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে হেরে যান লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে। মাথার চুল পাকার সঙ্গে সঙ্গে তার অভিজ্ঞতার ভিত্তি যেমন মজবুত হয়েছে তেমনি গাজীপুরের প্রতিটি অলিগলি, পাড়া মহল্লার রাজনীতি ও উন্নয়ন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার ঝুড়ি বেশ ভার। আজমত উল্লাহর সমর্থকরা মনে করেন গাজীপুরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে আজমত উল্লাহর নেতৃত্ব বড়ই প্রয়োজন। তিনিই পারেন পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সিটিকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলতে।
এসব শোনে মনে হচ্ছে, গাজীপুরের আওয়ামী সাম্রাজ্যে তিনিই বোধ হয় একক অধিপতি। হ্যাঁ, তা অবশ্য এক সময় ছিল। তবে মোঘল সাম্রাজ্যে যেমন সম্রাটের জীবদ্দশায় যুবরাজরা বিদ্রোহ করতেন তেমনি আজমত উল্লাহর মহানগরের রাজনীতির সাম্রাজ্যেও নতুন দিনের তরুণ নেতৃত্বের মুকুট নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন এক তরুণ নেতা। তার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনিও অ্যাডভোকেট। স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হলেও ছাত্ররাজনীতি থেকে যখন বিদায় নিচ্ছিলেন তখন তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে প্রার্থী হয়ে হেরে গিয়েছিলেন ৭ ভোটে। তাতে কী? দমে যাওয়ার পাত্র তিনি নন। ২০০৯ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হন। জাহাঙ্গীর ভোট পেয়েছিলেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ভোট। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে যিনি নির্বাচন করেছিলেনন তিনি (আলীমুদ্দিন বুদ্দিন) পেয়েছিলেন মাত্র ৮০ হাজার ভোট। এর মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম নিজের জনপ্রিয়তা জানান দেন। সেই জনপ্রিয়তার সুবাদে সারা বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোনিত হন তরুণ জাহাঙ্গীর। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন তরুণদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। একটি ভোটব্যাংকও তৈরি করেছেন তিনি। বিশেষ করে গত সিটি নির্বাচনের আগে সারা নগরী জুড়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে ভোটারদের নজর কাড়তে সক্ষম হন। তখন দলীয় ভোটারদের বাইরেও তরুণ ভোটাররা জাহাঙ্গীরের ছাতার নিচে এসে আশ্রয় নেয়। যদিও পরে দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের সরে দাঁড়ানো যে মন থেকে ছিল না সেটি প্রমাণ হয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আজমতের নির্বাচনী প্রচারণায় তার অশ্রুসজল বক্তৃতা। তাঁর এই কান্না ভালোভাবে নেননি তরুণ ভোটাররা। ধারণা করা হচ্ছে সেই ভোট আজমতে বাক্সে পড়েনি। তাই শোচনীয় জয় হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর।
ফিরে দেখা ২০১৩
২০১৩ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে আজমত ও জাহাঙ্গীর দু`জনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। দল নানা হিসেব নিকেশ করে আজমত উল্লাহর অভিজ্ঞাকেই গুরুত্ব দিয়ে তাকে প্রার্থী করে। তখন আওয়ামী লীগ ভেবেছিল আজমত টানা তিনবার পৌর মেয়র। তার আগের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু বিধি বাম। জাহাঙ্গীর তখন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান। স্বল্প সময়ে চষে বেড়ান গোটা নির্বাচনী এলাকা। বুদ্ধি-কৌশল ও তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হন। যদিও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন কমিটি করে এর আহবায়ক হয়ে আগে থেকেই নগরবাসীর খেদমতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নজর কাড়েন জাহাঙ্গীর।
২০১৩ সালের নির্বাচনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর আজমতের নির্বাচনী প্রচারণায় অশ্রুসজল জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ছবি
রাজনীতির বিজ্ঞ লোকেরা বুঝতে পারেন, জাহাঙ্গীর নির্বাচন করলে ভোটের কাটাকাটিতে লাভের ফসল ঘরে তুলবে বিএনপি। তখন অনেকটা সিনেমাটিক কায়দায় জাহাঙ্গীরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকদিন পর গণমাধ্যমের সামনে কান্নারত অবস্থায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন জাহাঙ্গীর। তরুণ এ নেতার সরে দাঁড়ানো যে স্বাভাবিক ছিলো না সেটি জনগণ সহজেই বুঝতে পারেন। বিশেষ করে শেষ মুহূর্তে আজমতের নির্বাচনী প্রচারণায় জাহাঙ্গীরকে অশ্রুসজল উপস্থিতি প্রমাণ করছিল তার ভেতরে বেদনার সাগর বইয়ে চলছে। তার সমর্থরাও সেটির জবাব দেন ব্যালটে। কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়ে শেষ রক্ষা হয় নি আজমতের। বিপুল ভোটে হারেন বিএনপির প্রার্থী এমএ মান্নানের কাছে।
দুই নেতার সমর্থকদের ভাবনা
এবার আবারো ২০১৩ সালের মতো মুখোমুখি অবস্থানে দুই এডভোকেট। দু`জন অবশ্য একই কমিটির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকও বটে। দু`জনের মধ্যে কে পেতে পারেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এমন প্রশ্নে কিছু যোগ বিয়োগ এসে যায়। প্রথমে বিয়োগের কথাই বলি। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খান হেরে গিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থীর কাছে। সেটি তার নির্বাচনী ক্যারিয়ারে একটি বড় দাগ। জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক মো. রুহুল আমীনের ভাষায়, আজমত সাহেব গত বার নিজে হেরে দলকে লজ্জায় ফেলেছেন। এবার তিনি মনোনয়ন চাওয়া কতটুকু শোভনীয় তা তার নিজেরই চিন্তা করা উচিত। তবে সমালোচকরা যাই বলুন না কেন আজমত উল্লাহ খান যে দমে যাওয়ার পাত্র নন এ কথার উত্তর দিলেন রাজনীতির ভাষায়। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তাতে কী? রাজনীতিতে জয়- পরাজয় থাকতেই পারে। ২০১৩ সালের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় উন্মাদনা উস্কে দিয়ে আমাকে পরাজিত করা হয়েছিল। তাছাড়া ওই সময় দেশের অন্য সিটি কর্পোরেশন গুলোতেও হেরেছিল আওয়ামী লীগ। দোষ শুধু আমার হবে কেন?
আজমত উল্লাহর যুক্তি ফেলে দেওয়া যায় না। তিন বার টঙ্গী পৌরসভার মেয়র থাকা তার মনোনয়ন পাওয়ার দাবিকে অনেক খানি এগিয়ে দেয়। টঙ্গীর প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল খালেক বলেন, আজমত সাহেব দু:সময়ের সারথী। হাতে গোনা কিছু লোক যখন আওয়ামী লীগ করতো তখন থেকে তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছেন। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত সব আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তার কথায় সুর মেলালেন স্থানীয় মসিউদ্দৌলা। তিনি বলেন, যিনি তিনবার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র এবং গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাধারন সম্পাদক থাকার অভিজ্ঞতা রাখেন তাকে জীবনে একবার হলেও মূল্যায়ন করা উচিত।
আবদুল খালেক বা মসিউদ্দৌলার যুক্তি খন্ডন করেন তরুণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার রায়। তিনি বলেন, ভাই আমরা সুখে দু:খে যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারব, যার সঙ্গে সব শেয়ার করতে পারব, সেই জনপ্রতিনিধি আমাদের দরকার। আর সেই চিন্তায় ‘জাহাঙ্গীর ভাই’ সেরা। তার সঙ্গে সুর মিলালেন উৎপল দত্ত। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর ভাইয়ের কাছ থেকে কেউ কখনো খালি হাতে ফেরে না। চরম শত্রুও এমন অপবাদ দিতে পারবে না। গাজীপুরের প্রতিটা সমাজসেবা মূলক কাজে রয়েছে জাহাঙ্গীর আলমের সরব উপস্থিতি। বিয়ে, অগ্নিদূর্ঘটনা, রাস্তা ঘাট মেরামত, মৃতের সৎকার, অসহায় মানুষের চিকিৎসা সব কিছুতে এগিয়ে আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তরুণদের খেলাধূলা, বিনোদন, পিকনিক এমনকি ওয়াজ মাহফিলে প্রচুর টাকা দিয়ে থাকেন জাহাঙ্গীর। এই ব্যয় করার মানসিকতা তাকে নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার শুন্য থেকে শীর্ষে। জাহাঙ্গীর আলমের একটি বড় গুণ তিনি হাসতে পারেন, মানুষের সঙ্গে মন খুলে মিশতে পারেন।
আজমত উল্লাহ খান যখন অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে হাঁটার চেষ্টা করেছেন, জাহাঙ্গীর আলম তখন `জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন` গঠন করে ছুটে গেছেন ঘরে ঘরে। নগরীর ৫৭ টি ওয়ার্ডের কোথাও আওয়ামী লীগের কমিটি নেই। তাতে কী? জাহাঙ্গীর আলম ফাউন্ডেশন সেই অভাব পূরণ করেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে ফাউন্ডেশনের ৫১ জন বিশিষ্ট কমিটি। জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন প্রতি বছর প্রতি ওয়ার্ড থেকে ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে ৫০ হাজার টাকা করে বিশেষ অনুদান দিয়ে থাকে। এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হয় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে। মহানগরীর যানজট নিরসনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। কয়েকশ’ জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। যারা সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে যানজট নিরসন করে। এজন্য জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মাসে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
তবে জাহাঙ্গীরের এসব তৎপরতার সমালোচনাও আছে। আজমত সমর্থকরা বলেন, জাহাঙ্গীর আলম কাচা টাকা বিলিয়ে রাজনীতিকে কলুষিত করে ফেলেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে গাজীপুরে জাহাঙ্গীর লীগ তৈরি করার চেষ্টায় আছেন।
জাহাঙ্গীর আলম যতো কাজই করুন, সব কিছুর পেছনে নির্বাচনী স্বার্থ আছে বলে দাবি করলেন এডভেোকেট আজমত উল্লাহ খান। তার ভাষায়, এগুলো লোক দেখানো। কয়দিন খরচ চালাতে পারবে? ভোটের পরে দেখবেন সব টুপ করে বন্ধ হয়ে গেছে। এ কথার জবাবে জাহাঙ্গীর আলম হাসিমুখে বিনয়ের সঙ্গে বললেন, আল্লাহ আমাকে যতোদিন সুযোগ দেন, ততোদিন আমি করব। তবে, ভালো কাজের নিয়ত করলে আল্লাহ সহায় হোন।
এই দুই ‘বাঘা’ নেতার মনোনয়ন লড়াই তুঙ্গে হলেও আরও মনোনয়ন প্রত্যাশী কিন্তু আছেন গাজীপুরে। তাদের একজন গাজীপুর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল। তার বিশ্বাস মনোনয়ন তিনিই পাচ্ছেন। কেন আজমত উল্লাহকে মনোনয়ন না দিয়ে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আজমত উল্লাহ নবীন- প্রবীনের সমন্বয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত নির্বাচনে হেরে গিয়ে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন। গত ৫ বছরে ৫৭ টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। নির্বাচনের বাকী মাত্র দেড় মাস। এই সময়ে তিনি মাঠ গুছাতে পারবেন না। এছাড়া নেতাকর্মীদের কারো সঙ্গে সুসম্পর্ক তিনি রাখেননি।
কামরুল আহসান সরকার রাসেল আজমত উল্লাহ সম্পর্কে এমন অভিযোগ করলেও জাহাঙ্গীর আলম সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। তবে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কড়া অভিযোগ আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আসাদুর রহমান কিরণের। তার অভিযোগ জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতিকে টাকা নির্ভর করেছেন। ফলে তরুণরা তার পেছনে ছুটছে। নিজে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তাঁর (কিরণ) ভাষায়, ‘আজমতের বিকল্প নেতৃত্ব গাজীপুর মহানগরীতে এখনও গড়ে উঠেনি’।
আজমত বা জাহাঙ্গীরের মধ্যে মনোনয়ন লড়াই যতোই তুঙ্গে হোক না কেন, রেফারীর শেষ বাঁশি বাজাবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ তারিখে তার নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড বসতে যাচ্ছে। মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকটা দিন।
/ এআর /
এ সংক্রান্ত আরও খবর