আজাব সম্পর্কে কুরআনের ঘোষণা জেনেনিন
প্রকাশিত : ১৭:৫২, ২২ মে ২০১৯
শুরুতেই কুরআন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে পড়তে ও জানতে। কুরআন অজ্ঞতাকে অভিহিত করেছে মহাপাপ রূপে। মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে জ্ঞানের পথে, মুক্তবুদ্ধির পথে। এমনকি বিশ্বাসের স্তরে পৌঁছার জন্যেও মানুষের সহজাত বিচারবুদ্ধির প্রয়োগকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কুরআন। বৈষয়িক ও আত্মিক জীবনকেও একই সূত্রে গেঁথেছে কুরআন। সুস্পষ্টভাবেই বলেছে, আল্লাহর বিধান অনুসরণ করো। দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি সম্মানিত হবে। বিপথগামী হলে আজাব (শাস্তি) কেমন হবে সেটাও কুরআনে আল্লাহ বলে দিয়েছেন।
যারা সত্য অস্বীকার করেছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করেছে, পাপে নিমজ্জিত হয়ে সত্যের প্রতি কর্ণপাত করেনি তাদেরকেই আল্লাহর আজাব গ্রাস করবে। যারা বিশ্বাসের সঙ্গে সৎকর্ম করেছে কেবল তারাই সব ধরনের সুফল উপভোগ করবে।
কুরআনে কবরের আজাব (শাস্তি) সম্পর্কে আল্লাহ যা বললেন : ‘(হে নবী! ওদের) বলো, আল্লাহ ইচ্ছে করলেই ঊর্ধ্বলোক বা জমিনের গভীর থেকে তোমাদের ওপর আজাব পাঠাতে পারেন, অথবা তোমাদের বিভিন্ন দলে ভাগ ও সংঘাত সৃষ্টি করে একে অপরের আতঙ্কের স্বাদ গ্রহণ করাতে পারেন। (হে মানুষ!) দেখ, একটা বাণীকে আমি কতভাবে ব্যাখ্যা করে তোমাদের কাছে উপস্থাপিত করছি, যাতে জীবনের নিগূঢ় সত্যকে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।’ (সূরা আনআম ৬৫)
‘কত (অবাধ্য পাপভারাক্রান্ত) জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি! সেখানে আমার আজাব নাজিল হয়েছে হঠাৎ করে, কখনো রাতে আবার কখনো বা দুপুরে দিবানিদ্রা উপভোগ করার সময়। যখন আমার আজাব ওদের ওপর নেমে এসেছিল, তখন ওদের মুখে কোন কথা ছিল না। শুধু ওরা আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল, হায়! ‘নিশ্চয়ই আমরা সীমালঙ্ঘন করেছিলাম।’ (সূরা আরাপ ৪-৫)
‘ওরা কি সত্যিই মনে করে যে, আল্লাহর সর্বগ্রাসী আজাব থেকে বা ওদের অজান্তেই কেয়ামতের আকস্মিক উপস্থিতি থেকে ওরা নিরাপদ?’ (সূরা ইউসুফ ১০৭)
‘পাপে নিমজ্জিতদের অন্তরে সত্যের প্রতি কর্ণপাত না করার অভ্যাস সৃষ্টি হয়। আসলে ভয়ঙ্কর আজাব প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ওরা বিশ্বাস করে না। আর এই ভয়ঙ্কর আজাব অকস্মাৎ আপতিত হয় ওদের ওপর। তখন ওরা আর্তনাদ করে বলে, ‘আমাদেরকে কি একটা সুযোগ দেয়া হবে না?’ (সূরা শু’আরা ২০০-২০৩)
‘ওরা তোমাকে আল্লাহর শাস্তি ত্বরান্বিত করার জন্যে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে? দিক! আল্লাহ যদি শাস্তির জন্যে সময় নির্ধারিত করে না রাখতেন, তবে অনেক আগেই আজাব ওদের গ্রাস করত! অবশ্যই আকস্মিকভাবে অসতর্ক অবস্থায়ই আজাব ওদের গ্রাস করবে।’ (সূরা আনকাবুত ৫৩)
আজাবের রূপ যা হবে : ‘ওদের পূর্ববর্তীরাও একইরকম বিভ্রান্তির ধুম্রজাল ছড়িয়েছিল। ওরা ষড়যন্ত্র করেছিল সত্যের বিপক্ষে। ওরা যা-কিছু নির্মাণ করেছিল তার ভিত্তিমূলে আল্লাহ আঘাত হানলেন। ফলে পুরো ছাদই ধসে পড়ল ওদের ওপর। ওরা ভাবতেও পারেনি, এভাবে আজাব আসবে। (সূরা আন-নহল ২৬)
‘অতঃপর প্রতিশ্রুত আজাব ওদের আঘাত হানলো। ভয়ঙ্কর শব্দ। সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়কে তরঙ্গতাড়িত ঝরাপাতার আবর্জনার ন্যায় ছড়িয়ে মিশিয়ে দিলাম।’ (সূরা মুমিনুন ৪১)
‘অতএব তোমরা অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী এসে গ্রাস করবে সমগ্র মানবজাতিকে। (পাপীরা চিৎকার করে বলবে)‘এ এক কঠিন আজাব!’ ওরা তখন আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই আজাব থেকে রেহাই দাও। আমরা অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করব।’ (সূরা দোখান ১০-১২)
‘এরপর আমি ওদের ওপর আজাব পাঠালাম। এক ভয়ানক আওয়াজ-ওদের সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল খোঁয়াড়ের বেড়ার জরাজীর্ণ কাঠের মতো।’ (সূরা কামার ৩১)
জাহান্নামে আজাবের রূপ : ‘মুনাফেক ও সত্য অস্বীকারকারী নর-নারীর জন্যে আল্লাহ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড, যেখানে ওরা থাকবে চিরকাল। জাহান্নামই ওদের প্রাপ্য। কারণ আল্লাহ ওদের পরিত্যাগ করেছেন। ওদের জন্যে অপেক্ষা করছে অনন্ত আজাব।’ (সূরা তওবা ৬৮)
‘আল্লাহ ওদেরকে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত না নিলে দুনিয়াতেই অন্য শাস্তি দিতেন। আর পরকালে তো ওদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আজাব। কারণ ওরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতা করেছিল। আর কেউ আল্লাহর বিরোধিতা করলে আল্লাহ শাস্তিদানেও কঠোর।’ (সূরা হাশর ৩-৪)
‘যারা সত্য অস্বীকার করছে, ওদের বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দাও। জীবনের বিলাস-সামগ্রী ওরা ভোগ করছে, তা ভোগ করার জন্যে আরো কিছুটা সুযোগ দাও। ওদের জন্যে আমার কাছে আছে শৃ্ঙ্খল ও গনগণে আগুন, আছে এমন খাবার যা গলায় আটকে যায়, আছে আরো যন্ত্রণাদায়ক আজাব। আর তা বাস্তবরূপ লাভ করবে সেদিন, যেদিন পৃথিবী প্রকম্পিত হবে, পাহাড়-পর্বত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পরিণত হবে উড়ন্ত ধূলিকণায়।’ (সূরা মুজাম্মিল ১১-১৪)
যারা আজাব থেকে রক্ষা পাবে : ‘শুধু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আল্লাহ-সচেতন ছিল, তাদের আমি রক্ষা করেছিলাম।’ (সূরা হা-মিম-সেজদা ১৮)
‘জান্নাতে নিরাপদ প্রশান্ত আরামে তারা (পৃথিবীতে যে সৎকর্ম করেছে তার) সব ধরনের সুফল উপভোগ করবে। মৃত্যু আর কখনো তাদের স্পর্শ করবে না। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। মূলত এটাই মহাসাফল্য।’ (সূরা দোখান ৫৫-৫৭)
আজাব থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা : ‘(হে নবী!) প্রার্থনা করো, ‘হে আমার প্রতিপালক! (তোমার সঙ্গে শরিককারীদের) তুমি আজাবের সতর্কবাণী প্রদান করেছ। বাস্তবে এ শাস্তি ঘটার সাক্ষী যদি আমাকে বানাতে চাও, তবে হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো না।’ (সূরা মুমিনুন ৯৩-৯৪)
‘যারা রাত কাটায় তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হয়ে বা সেজদারত অবস্থায়। যারা প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! জাহান্নাম থেকে আমাদের দূরে রাখো। জাহান্নামের আজাব সর্বনাশা আজাব। নিশ্চয়ই অস্থায়ী বা স্থায়ী নিবাস হিসেবে সবচেয়ে জঘন্য!’ (সূরা ফোরকান ৬৪-৬৬)
তাই আসুন আমরা সীমালঙ্ঘনকারী না হই, বিশ্বাসী হই, আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার জন্য প্রার্থনা করি।
এএইচ/