ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

আঠাশ বছর পর আমরা গড়ব নতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত : ১৭:৪২, ২৪ মার্চ ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আসিফ তালুকদার। ভীষণ জনপ্রিয় এ ছাত্রপ্রতিনিধি নিজের জায়গা থেকে উপলব্ধি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যাগুলোকে। নতুন পরিকল্পনায় নতুন উদ্যোমে সে সকল সমস্যা সমাধান নিয়ে করনীয় কী হতে পারে তা নিয়ে লিখেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য।

দীর্ঘ ২৮ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে কথা বলার জন্য কার্যকর অর্থে ছাত্র প্রতিনিধি গড়ে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষনীয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধা মনন আর প্রগতিশীল চর্চা এবং তার বিকাশ যেন বাধা পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতার বেড়াজালে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের অব্যক্ত কথা গুলো বলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি৷

ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবার আমি যখন শিক্ষক ছাত্র কেন্দ্র (টিএসসি) প্রবেশ করি তখন টিএসসি আমার চোখে ভিন্নভাবে ধরা পড়েছে৷ আগেও টিএসসি গিয়েছি, আড্ডা দিয়েছি কিন্তু কখনোই টিএসসি কেন্দ্রীক শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও অভাব অনুযোগ গুলো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দেখার সুযোগ ছিল না৷ সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ৷

ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনমুখী কাজ গুলোই আমার কাছে মূখ্য বিষয় যার অধিকাংশই টিএসসি কেন্দ্রীক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গঠনের পরে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের কলেবর। কিন্তু সেই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়েনি টিএসসির অবকাঠামোগত শিক্ষার্থীবান্ধব সুযোগ সুবিধা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে যে সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন এবং আমরা শিক্ষার্থীরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকি তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর নিজস্ব রুম নেই, মৌলিক কিছু বিষয় যেমন ওয়াশরুম, চেয়ার, টেবিল, সাউন্ড সিস্টেম থেকে শুরু স্ব স্ব সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো পরিচালনার জন্য যে মৌলিক বিষয়গুলো প্রয়োজন সেগুলো প্রাপ্তি থেকেও আমরা বঞ্চিত।

টিএসসির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সার্বিক পরিস্থিতি কোন ভাবেই শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বলে আমি মনে করি৷ ডাকসু নির্বাচনের পরে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে চেষ্টা করছি টিএসসির প্রশাসন এবং সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব টিএসসি গড়তে৷

দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু কার্যকর না থাকায় আমাদের অনেক মান অভিমান ও যৌক্তিক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে৷ জবাবদিহিতার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে দায়িত্বে অবহেলার প্রবণতা৷ টিএসসির ইলেকট্রিক সিস্টেম আমি যখন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম রীতিমতো হতবাক হয়ে গেলাম৷ জটপাকানো তার, তার ছিড়ে ভেতরের তামার অংশ বের হয়ে আছে, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন মাঠ, মাঠের চারপাশ, অডিটোরিয়ামের আশেপাশে পুরোনো অব্যবহৃত জিনিস পত্রের স্তুপ, দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেন ব্যবস্থা, ডাস্টবিন গুলো স্ব স্ব যায়গায় না দিয়ে সুইমিং পুলে ফেলে রাখা, ধূমপানমুক্ত এলাকা হওয়া স্বত্বেও টিএসসির ভেতরে অবলীলায় ধূমপান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীদের ভাই-বন্ধু পরিচয় দিয়ে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ, টিএসসির সামনের রাস্তায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি, শুক্রবার-শনিবার টিএসসি প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, টিএসসির সামনে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং সব কিছু মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রেমময় বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করছে৷

টিএসসির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সার্বিক সমস্যা সমাধানে প্রধান বাধা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন রেজিস্ট্রার ভবন৷ টিএসসির সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয় রেজিস্ট্রার ভবনে৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই চিঠি গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার অভাবে বাধা পড়ে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে। যা হোক নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটিয়ে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে, টিএসসির রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং দূর করতে, হেঁটে হেঁটে ধূমপানরত ভাই-বোনদের বুঝিয়ে টিএসসিকে ধূমপানমুক্ত করতে। সর্বোপরি একটি প্রেমময় বন্ধুত্বের টিএসসি গড়তে৷

দীর্ঘদিনে যে অনিয়ম সৃষ্টি হয়ে পাহাড়সম রূপ ধারণ করেছে তার সামনে আমার একক প্রচেষ্টা অতি নগণ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর আন্তরিক প্রচেষ্টা আর প্রশাসনের একটু দায়িত্বশীলতাই পারে শিক্ষার্থী বান্ধব টিএসসি তথা স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে৷ আমি একটি স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখি যা চোখ বুঝলে আমাদের হৃদয়পটে ভেসে ওঠে এবং আমি আমার তথা আমাদের স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে বদ্ধপরিকর।

(লেখক: সংস্কৃতি সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ)

আআ/এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি