আত্মনিমগ্নতায় সৃষ্টি হোক শুকরিয়া ও আনন্দের প্লাবন
প্রকাশিত : ১৬:০৫, ৮ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৬:০৯, ৮ আগস্ট ২০২১
দিনের কিছুটা সময় নীরবে কাটান। মেডিটেশন করুন, ধ্যানমগ্ন হোন। ডুব দিন নিজের ভেতর। সুখময় ভাবনার টলটলে স্বচ্ছ জলে ভাসিয়ে দিন নিজেকে। অযাচিত রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ, বিষাদ আপনাকে ছেড়ে যাবে। আপনি ভারমুক্ত হবেন। সুস্থতা ও নিরাময়ের জন্যেই এটি দরকার।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, নিয়মিত মেডিটেশন করেন যারা, তাদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স দারুণভাবে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। আর মস্তিষ্কের এ অংশটি থেকেই উৎসারিত হয় আমাদের সুখ-আনন্দের মতো ইতিবাচক আবেগগুলো। মেডিটেশনকালে ব্রেন থেকে নিঃসরিত হয় আনন্দবর্ধক সেরোটনিন ও এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিক পদার্থ, যা দেহ-মনে চমৎকার সুখানুভূতি সৃষ্টি করে।
নিয়মিত মেডিটেশন আপনার শুকরিয়ার অনুভূতি বাড়িয়ে দেবে। গভীর আত্মনিমগ্নতায় আপনি লাভ করবেন শুকরিয়ার নতুন উপলব্ধি। হয়ে উঠবেন প্রশান্ত পরিতৃপ্ত এক সুখী মানুষ।
মেডিটেশন ॥ শুকরিয়া
১. নিয়মমাফিক মনের বাড়ির দরবার কক্ষে গিয়ে বসুন।
২. আপনি জানেন, শুকরিয়া মনকে প্রশান্ত করে। মুহূর্তে আপনার চিন্তার জগতকে বদলে দেয়। আপনি সচেতন হয়ে ওঠেন বর্তমান উপকরণ সম্পর্কে। ভাবতে পারেন পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। এবার এক এক করে তালিকা করুন—কী কী আছে আপনার? কোন কোন বিষয়ের জন্যে আপনি শোকরগোজার হবেন? আপনি কী কী পারেন? আপনার বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
নিজের দিকে না তাকিয়ে অন্যের দিকে তাকাই আমরা। কিন্তু আপনি জানেন, অন্যের দিকে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই। আপনাকে তাকাতে হবে নিজের দিকে। যত নিজের দিকে তাকাবেন তত বিস্মিত হবেন। তত দেখবেন যাদের সাফল্য আপনাকে ঈর্ষান্বিত করে তোলে, তাদের প্রাপ্তির পেছনের সকল উপকরণ আপনারও আছে। যা দিয়ে আপনি অনায়াসে শুরু করতে পারেন।
৩. আজ যে আপনি সুস্থ দেহে ঘুম থেকে উঠেছেন সেজন্যে শুকরিয়া আদায় করুন। গতকাল কয়েক লক্ষ মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। আপনি বেঁচে আছেন। কাজ করার, জীবনকে উপভোগ করার আরো একটি দিন পেয়েছেন। আপনার শোকরগোজার হওয়ার জন্যে এটাই যথেষ্ট।
আপনার ঘরে পরের বেলার খাবার আছে, পরনে কাপড় আছে, রাতে ঘুমাবার একটা জায়গা আছে। আপনার সৌভাগ্যের জন্যে অভিনন্দন। কারণ আপনি পৃথিবীর বহু মানুষের চেয়ে বিত্তবান। আপনি এখনো দম নিতে পারছেন। ভাবুন, হাসপাতালের সেই অসহায় রোগীটির কথা যিনি দমও নিতে পারছেন না, যাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।
দেহের কথাই ভাবুন। দেহে আছে পাঁচ শতাধিক মাংসপেশি, দুই শতাধিক হাড়, ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন দেহকোষ। প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে যাচ্ছে শিরা ও ধমনীর ৬০ হাজার মাইল দীর্ঘ পাইপ লাইন দিয়ে। রয়েছে ফুসফুসের মতো রক্ত শোধনাগার।
আপনার হার্ট কোনোরকম ক্লান্তি ছাড়াই প্রতিদিন প্রায় লক্ষবার স্পন্দনের মাধ্যমে ১৬শ গ্যালনের চেয়েও বেশি রক্ত পাম্প করে দেহকে সচল রাখছে। রয়েছে একজোড়া ছোট চোখ, যা দিয়ে বিশাল পৃথিবীকে দেখছেন আপনি। আপনার মস্তিষ্ক যে-কোনো কম্পিউটারের চেয়েও কমপক্ষে ১০ লক্ষ গুণ শক্তিশালী। কম্পিউটারের দামের অনুপাতে আপনার মস্তিষ্কের মূল্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
৪. বিশ্বের প্রায় সাতশ কোটি মানুষের মধ্যে আপনি অনন্য। আপনার মতো হুবহু কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্রষ্টা আপনার মতো আর কাউকেই সৃষ্টি করেন নি। আপনাকে এমন কিছু মেধা দিয়েছেন, যা আর কাউকে দেন নি। যত নিজের দিকে তাকাবেন তত দেখবেন আপনার সাফল্যের জন্যে যে যে উপকরণ প্রয়োজন, তার সবই আপনার রয়েছে।
এ উপকরণগুলো ব্যবহার করেই আপনি নির্মাণ করতে পারেন আপনার সাফল্যের পৃথিবী। আপনার জীবন শুরু করতে হবে আপনার যা আছে তা নিয়ে। প্রতিটি সফল মানুষ তার যা ছিল, তা নিয়েই জীবন শুরু করেছেন। অতএব আপনিও শুরু করুন যা আছে তা নিয়ে।
৫. এবার অবলোকন করুন, কী আছে আপনার যা দিয়ে আপনি শুরু করবেন? বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন যা আছে তার জন্যে। ভাবুন, শুকরিয়ার প্লাবন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আপনার অতৃপ্তি অস্থিরতা বিরক্তি ক্ষোভ সন্দেহ আশঙ্কা শূন্যতা হাহাকার আর বিষণ্নতাকে। শুকরিয়ার সাগরে আপনার অতৃপ্তি-অস্থিরতাগুলোকে ছোট ছোট দ্বীপ হিসেবে কল্পনা করুন।
অবলোকন করুন, শুকরিয়ার প্লাবন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই দ্বীপগুলোকে। অস্থিরতা অশান্তি আশঙ্কা সন্দেহ ক্ষোভ সব ভেসে যাচ্ছে আপনার থেকে অনেক অনেক দূরে। আপনার মনে সৃষ্টি হয়েছে এক অভূতপূর্ব আনন্দ-অনুরণন। শুকরিয়ার প্লাবনে আপনি অনুভব করছেন কল্যাণশক্তির জাগরণ যা সকল অশান্তিকে প্রশান্তিতে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে, রোগকে সুস্থতায় রূপান্তরিত করছে।
৬. জীবনে শুকরিয়ার গুরুত্বকে নতুনভাবে উপলব্ধি করেছেন আপনি। শোকরগোজার মনই প্রশান্ত মন। প্রশান্ত মন সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে। সহজেই সংযুক্ত হয়ে যায় শক্তির মূল উৎসের সাথে। শক্তির মূল উৎস থেকেই উৎসারিত হয় সাফল্যের ফল্গুুধারা। সেজন্যে পৃথিবীর সকল ধর্মে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
তাই সবসময় বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! ভোরে ঘুম ভাঙতে বলুন, ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ হরি ওম/ প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ/ থ্যাংকস গড! বেশ ভালো আছি। প্রতিদিন আমি সবদিক দিয়ে ভালো হচ্ছি, সফল হচ্ছি, সুখী হচ্ছি।’ সবসময় শোকরগোজার মানুষদের সংস্পর্শে থাকুন, সৎসঙ্ঘে থাকুন যা আপনাকে সবসময় প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত রাখবে।
৭. এবার ০ থেকে ৭ গণনা করে স্বাভাবিক জাগ্রত অবস্থায় ফিরে আসুন।
লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া।
আরকে//