আত্মসমর্পণের বদলে জঙ্গি আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণ, গুলি
প্রকাশিত : ২৩:০৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৪:৫২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম থানার কাছে বর্ধনবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকায় ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণ করেননি। দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর মঙ্গলবার রাতে তিন থেকে চারটি বোমার বিস্ফোরণ এবং গুলি ছোড়া হয়। এ সময় আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। ভবনটির উপর আগুনের শিখা জ্বলে উঠার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়।
এর আগে ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর প্রতিশ্রুতি পেয়ে সদস্যরা র্যাব সদস্যরা আত্মসমর্পণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। কিন্তু রাত ৯টা ৪৬ মিনিটের দিকে সেখানে ভারী বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায় এবং রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ওই ভবনটির কাছে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়।
‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই বাড়িটি থেকে সাংবাদিকদের ১০০ গজ দূরে সরিয়ে দেন র্যাব সদস্যরা। উৎসুক জনতাকে আরও দূরে অর্থাৎ দেড় থেকে ২০০ গজ দূরে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়।
র্যাব সদস্যরা বাড়িটির চারপাশে অবস্থান নেন। আশেপাশের বাড়ির ছাদেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটির সামনে লাইট লাগানো হয়। যদিও এর আগে পুরো এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
কিন্তু নির্ধারিত সময় রাত ৮টা পেরিয়ে গেলেও আত্মসমর্পণ করেননি ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ। বরং উল্টো বোমা ফাটিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান জানান, তারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি। আমরা অপেক্ষায় আছি। আত্মসমর্পণ করলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
সেখানে উপস্থিত টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানদের ফুটেজ নেয়ার সুযোগ দেন র্যাব সদস্যরা।
বিস্ফোরণের আগে রাত ৯টা ১৩ মিনিটে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ তার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তারা ধ্বংসাত্মক কিছু করতে পারে কি না- সেই বিষয়ে র্যাবের কড়া নজরদারি রয়েছে। র্যাবও সতর্কাবস্থায় আছে।
সোমবার গভীর রাতে ওই বাড়িটি থেকে ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর বোন আত্মসমর্পণ করেন। পরে তার মাধ্যমে আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়। দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পর ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানায় র্যাব।
র্যাবের দাবি, ওই ‘আস্তানায়’ দুর্ধর্ষ জঙ্গি আব্দুল্লাহ, তার দুই সহযোগী, দুই স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মোট সাতজন অবস্থান করছেন।
এর আগে বাড়িটির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এছাড়া টেলিফোন, ডিস ও ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। মানসিকভাবে চাপে ফেলতে এবং তারা (জঙ্গিরা) যাতে বাধ্য হয় আত্মসমর্পণ করতে- এ কারণে এসব করা হয়েছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ঘিরে ফেলা হয় রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডে বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি।
বাড়িটিতে মোট ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে এরই মধ্যে নারী ও শিশুসহ সব বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ভেতরে কী পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে জানতে চাইলে মঙ্গলবার দুপুরে ঘনটাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের তথ্যমতে ভেতরে ৫০টিরও বেশি দেশীয় তৈরি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি বোমা) রয়েছে। এছাড়া অ্যাসিডসহ বিস্ফোরক তৈরির বিভিন্ন দ্রব্যাদি তার কাছে মজুদ আছে। ছোট একটা পিস্তল আছে বলেও আমরা ধারণা করছি।
আব্দুল্লাহর পরিচয় জানতে চাইলে র্যাবের ডিজি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আব্দুল্লাহ ১৫ বছর ধরে এই ভবনের পঞ্চম তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি কবুতর পালন এবং আইপিএসের ব্যবসার আড়ালে দুর্ধর্ষ জঙ্গি হয়ে উঠেছেন।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার রাতে এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবির জঙ্গি’ দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটকের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে মিরপুরে র্যাবের এই অভিযান শুরু হয়।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন