আপনি গবলিন মুডে নেই তো?
প্রকাশিত : ১৩:২৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৩:২৬, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
ইংরেজিতে গবলিন মুড একটি কথ্য শব্দ। গবলিন আসলে ইউরোপীয় লোককথায় বর্ণিত কুৎসিতদর্শন, গুমোট জায়গায় চরম নোংরাভাবে বসবাসে অভ্যস্ত কল্পিত দানবের নাম। বাস্তবেও কিছু মানুষের সঙ্গে এই কল্পচরিত্রের জীবনাচরণে মিল বোঝাতে বলা হচ্ছে গবলিন মুড।
অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী- গবলিন মুড মানে সমাজের নিয়মকে, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেওয়া। আলসে, অপরিচ্ছন্ন, যা কিছু সামাজিকতা-বিরোধী, সে সব হওয়া এবং সেই জন্য মনে খারাপ লাগা না রাখা।
প্রতি বছর অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি একটা নির্দিষ্ট শব্দকে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ আখ্যা দেয়। অক্সফোর্ডের তথ্যকেন্দ্রে প্রায় ১৯ বিলিয়ন শব্দ আছে সেখান থেকে নানা পরিসংখ্যান ঘেঁটে তাদের গবেষকেরা সাধারণত একটি বেছে নিতেন। তবে ২০২২ সাল থেকে অনলাইনে ভোটাভুটির মাধ্যমে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন শুরু হয়েছে।
২০২২ সালে প্রায় তিন লাখ চল্লিশ হাজার ভোটের পর শতকরা ৯৩ ভাগ ভোট পেয়ে ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছে গবলিন মুড।
একবার ডেভ ম্যাকনেমি নামে টুইটার ব্যবহারকারীর গবলিন মুড নিয়ে করা এক টুইট ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তিনি গার্ডিয়ান পত্রিকার কাছে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গবলিন মুড হলো যখন আপনি রাত দুইটার সময় ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে ঢুকলেন স্ন্যাক খেতে, তখন আপনার পরনে কেবল ঢোলা একটা টি-শার্ট।
লস অ্যাঞ্জেলসের সাইকোথেরাপিস্ট সুসান জিনের মতে, গবলিন মুডে মানুষ তার নিজের অনুভূতি দূরে সরিয়ে রাখতে সম্ভাব্য সবকিছুই করতে পারে। হয়তো পপকর্ন হাতে নিয়ে বসে পড়ল নেটফ্লিক্সে টানা কোনো সিরিজ দেখতে, অথবা সারাদিন অর্থহীনভাবে সোশ্যাল মিডিয়া হাতড়ে গেল কেবল।
২০০৯ সালে কোনো এক টুইটে গবলিন মুড প্রথম উঠে আসে। বেনামি সেই টুইটে কেউ একজন বলেছিলেন, গত রাতে তিনি গবলিন মুডে ছিলেন। এরপর প্রায় তের বছর কোনো সাড়াশব্দ ছিল না। অনেকটা হঠাৎ করেই ২০২২ সালে এই শব্দ জনপ্রিয় হয়ে যায়। এবারও সেই টুইটারের কল্যাণেই।
সে সময় গায়ক কেনিয়ে ওয়েস্ট আর অভিনেত্রী জুলিয়া ফক্স তখন তাদের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন।
তখন জুলিয়া ফক্সকে উদ্ধৃত করে এক ব্যবহারকারী লেখেন, কেনিয়ে ওয়েস্ট তাকে জানিয়েছেন, জুলিয়া ফক্সের গবলিন মুডে চলে যাওয়া তার একেবারেই পছন্দ হয়নি। তাই তিনি সম্পর্কের ইতি টেনেছেন।
মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই টুইট। শেষ পর্যন্ত ফক্স তার ইন্সটাগ্রামে লিখতে বাধ্য হন তিনি কখনোই এমন কিছু বলেননি। তবে কে শোনে কার কথা, গবলিন মুড তরতর করে উঠে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
কেন গবলিন মুড হঠাৎই এমন জনপ্রিয় হয়ে উঠল? সময়টা চিন্তা করুন, প্যান্ডেমিকের বিধিনিষেধ কমে মানুষ মাত্রই আবার আগের জীবনধারায় ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু প্যান্ডেমিকের সময়কার জীবনযাত্রার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া অনেকেই এতে বিরক্ত হয়েছিলেন, বিশেষ করে হোম অফিস ছেড়ে সশরীরে অফিসে যাওয়া অনেকের কাছেই উপাদেয় ঠেকেনি।
অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজের একজন ডাইরেক্টর ক্যাথেরিন কনর মার্টিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গবলিন মুড এই ধারণাই দেয় যে প্যান্ডেমিক চলে গেলেও এর প্রভাব রয়ে গেছে এখনও। প্যান্ডেমিক-পূর্ব সময়ে যা স্বাভাবিক বলে ধরা হতো, সেই ব্যাপারগুলো প্যান্ডেমিকের সময় অনেকটাই উল্টে গেছে। এই উল্টে যাওয়াই অনেকের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
কিন্তু গবলিন মুড কেন? এটা উদ্ভুত ইউরোপিয়ান মিথোলজির প্রাণী গবলিনদের থেকে এসেছে। অনেকটা মানুষের মতো দেখতে ডানাওয়ালা ছোট এই প্রাণীগুলো নানা ধরনের দুষ্টু কাজকর্মের জন্য কুখ্যাত। বলা হয়, এরা আরামদায়ক কোনো স্থানে থেকে খেতে আর খেলতে ভালোবাসে। প্যান্ডেমিকের সময় ঘরের কোণায় আবদ্ধ হয়ে পড়া আমরাও হয়তো তাদের মতোই হয়ে গিয়েছিলাম খানিকটা।
অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজের প্রেসিডেন্ট ক্যাস্পার গ্রান্থওয়ল মনে করেন, এই শব্দগুচ্ছ আরো অনেক দিন মানুষের মনে থেকে যাবে। ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার ঘোষিত হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে গেছে।
তবে নিউ ইয়র্কের নিউরোসাইকোলজিস্ট ড. সানাম হাফিজের মতে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। মাঝে মাঝে গবলিন মুডে চলে যাওয়া স্বাভাবিক হলেও সবসময় এই মুডে থাকা বিষণ্নতার পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
সূত্র: ইন্টারনেট
এমএম/