আবার বিতর্কে মাশরাফি
প্রকাশিত : ১২:৫৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
আগেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে খেলোয়াড়দের যোগদান হয়েছে। কিন্তু তারা রাজনীতিতে এসেছেন অবসর গ্রহণের পর। কিন্তু মাশরাফি যখন রাজনীতিতে এলেন তখন তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা একটু বেশিই।
২০১৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। দুঃস্থ মানুষকে আর্থিক সাহায্য, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি-বীজ বিতরণ, সোলার প্যানেল বিতরণ, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। আসলে মাশরাফি খেলাধুলার পাশাপাশি নিজ এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজে জড়িয়েছেন রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অনেক আগেই।
তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাশরাফি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ক্রয়ের পর এ নিয়ে চলেছিল ব্যাপক বিতর্ক। বিরোধী শিবির বিএনপি এবং জামাতপন্থীদের সোশ্যালমিডিয়া গ্রুপগুলোতে তাকে নিয়ে চলে নানা সমালোচনা। আবার আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা স্বাগত জানায় রাজনীতির মাশরাফিকে। অবশেষে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য হলেন তারকা ক্রিকেটার।
ইংল্যান্ডে আগামী ৩০ মে শুরু হবে বিশ্বকাপের বিশ্ব আসর। তার আগে আগামী ৭ মে আয়ারল্যান্ডে (বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড) ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে টাইগাররা। এর মধ্যে নেট দুনিয়ায় বিতর্কের ঝড় মাশরাফিকে নিয়ে।
আসলে সম্প্রতি আচমকা নিজ এলাকার হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে কোনও চিকিৎসককে উপস্থিত পাননি নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। এরপর এ সব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। যেখানে হাসপাতালে অনুপস্থিত সেই ডাক্তারকে ফোন দিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন করতে দেখা যায় ম্যাশকে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোবে ফুঁসে উঠেছেন ডাক্তাররা। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নড়াইল এক্সপ্রেসের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব প্রখ্যাত বিতার্কিক ডা. আব্দুন নূর তূষার।
চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়, ১১ জনের দলে ৪ জন নিয়ে ক্রিকেট খেলতে রাজি হবেন? তাহলে ২৭ জনের জায়গায় ৭ জন দিয়ে হাসপাতাল চলে কিভাবে সে প্রশ্ন সংসদে করেন!
প্রশ্ন করেন ৩০০ বেডের হাসপাতালে ১ হাজার ৮০০ রোগী ভর্তি করলে, ডাক্তার নার্স কেন ছয়গুণ বেশি নিয়োগ দেওয়া হয় না। স্টোরে গিয়ে প্রশ্ন নয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন হাসপাতালে স্টোরগুলো কি যথাযথভাবে ওষুধ সংরক্ষণের জন্য মানসম্মত?
চিঠিতে বলা হয়, ‘মেরুদণ্ডহীন ডাক্তার সমাজকে’ ওএসডি করা যতো সোজা, রোগীর জন্য সেবা নিশ্চিত করা ততো সোজা না। আপনার জেলা হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট আছে, তার জন্য সব যন্ত্রপাতি আছে কি না প্রশ্ন করেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, চিকিৎসক কর্মস্থলে যান না, সেটার জন্য নিয়মানুযায়ী শাস্তি হবে, প্রতিকার হবে, হোক। কিন্তু তাকে ধমকানো তো সরকারি বিধান নয়। ডাক্তারদের অন্যায় থাকলে সেটার শাস্তি হোক। কিন্তু এলাকার লোককে তো স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। তাই প্রশ্ন করতেই হবে। উত্তরও দরকারি। ডাক্তার কোনও ফেরেশতা না। কিন্তু সবখানে অনিয়ম রেখে হাসপাতালকে শুধু স্বর্গোদ্যান বানানো সম্ভব না।
অবশ্য সামাজিক মাধ্যমে মাশরাফি বিন মর্তুজার ভাইরাল হওয়া কাজটিকে প্রশংসা করছেন নেটিজেনরা।
তবে এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবার সামনে চলে এসেছে। এক হিসাবে দেখা যায়, দেশের সরকারি স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানে চাকরিরত ডাক্তারের সংখ্যা জনসংখ্যার অনুপাতে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসাপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৭৯ জন। আর বিএমডিসি থেকে সনদপ্রাপ্ত (সরকারি-বেসরকারি) ডাক্তারের সম্মিলিত অনুপাতে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে সেবাপ্রার্থী ১ হাজার ৮৪৭ জন।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে বলছেন, আসলে একজন রোগীকে কতটুকু কোয়ালিটি টাইম দেওয়া দরকার একজন ডাক্তারের?
অনেকে বলছেন, ডাক্তারদের যদি রোগী দেখার সময় বেধে দেওয়া হয় তবে সেটা অনেক ভালো হবে। কারণ ডাক্তারদের যে পরিমাণ রোগী দেখতে হয়, তাতে কোয়ালিটি টাইম দেওয়া সম্ভব হয় না।