আমরা কি আরেকটু মানবিক হতে পারি না?
প্রকাশিত : ২৩:৩১, ২ এপ্রিল ২০২০
বিশ্বব্যাপী যে করোনা মহামারী চলছে তা মানুষের মধ্যে নানামুখী আচরণ সৃষ্টি করছে। বিশেষত বাংলাদেশের মানুষ ব্যাখ্যার অযোগ্য কিছু আচরণ করছেন। অধিকাংশ মানুষ ঘরে থাকছেন, ফোনে আত্মীয় স্বজনের খোঁজ নিচ্ছেন, প্রতিবেশীর ভাল মন্দ সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখছে। অনেকে নিজের কষ্টে উপার্জিত অর্থ খরচ করে গরীব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করছেন। বিভিন্ন সংগঠন তাদের সাধ্য মতো চাঁদা তুলে তাদের সহায়তা করছেন।
এমনকি কোন কোন রাজনৈতিক উঠতি নেতা ট্রাক ভারে খাবার নিয়ে ট্রাকের চার দিকে বড় বড় ছবি দিয়ে গরীবকে বিতরণ করছেন। প্রমাণ হিসেবে ফেইসবুকে লাইভ দিচ্ছেন। দেখে আনন্দে চোখে পানি চলে আসে। আহারে, আমি তেমন কিছুই করতে পারছি না। নিজেকে ছোট মনে হয়। বড় কিছু করতে না পেরে সবার জন্য দু’আ করি।
কিন্তু যখন দেখি, অসুস্থ্যেএকজন মানুষ সারা রাত চেষ্টা করে একজন ডাক্তার পান না, তার স্ত্রী’র শত চেষ্টায়ও কেউ মুখ তুলে একবার বলেন না, কি হয়েছে তখন কান্নায় বুক ফেটে যায়। আমরা কি মানুষ? শুধু তাই নয়, বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা যাওয়ার পর কিছু মানুষ তাকে দাফন করতে দিতেও নারাজ। এরা কি মানুষ?
যে চিকিৎসক সমাজ, মানব সেবাকে ব্রত করে ডাক্তার হয়েছেন। মানব সেবার নাম করে সরকারী চাকরির পাশাপাশি প্রাইভেট প্রাকটিসকে হালাল করে নিয়েছেন, যিনি মাঝ রাত পর্যন্ত রোগী দেখেন সারা বছর, আজ মানব জাতির সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকালে তাদের প্রয়োজন হলো ছুটি কাটানো। অধিকাংশ প্রাইভেট প্রাকটিস তারা বন্ধ করে দিলেন। যেন করোনা ছাড়া আর কোন অসুখ এ সময় মানুষের হবে না। আপনার হার্ট এটাক হলেও এখন বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হবে। আর যদি আপনার ঠান্ডা জ্বর বা নিউমেনিয়া হয়, তাহলো তো আপনাকে এলাকা ছাড়া করবে। ডাক্তারকে আপনি ধরতে পারবেন না, সে আপনার জ্বর শুনেই পালাবে।
হায়রে মানুষ আমরা!
আল্লাহ মহামারি কারো জন্য শাস্তি, কারো জন্য রহমত এবং কারো জন্য পরীক্ষা হিসেবে প্রেরণ করেন। যারা পাপিষ্ট তাদের জন্য এটি শাস্তি। যারা সবর করে এ রোগে মারা যাবে তাদের জন্য এটি রহমত। অন্যদের জন্য এটি পরীক্ষা। আপনারা যারা, ডাক্তার এবং বিপ্লবী মানুষ, রোগীর চিকিৎসা করছেন না, জ্বর ঠান্ডা শুনলেই তাকে এলাকা ছাড়া করছেন, লাশ দাফনে বাধা দিচ্ছেন, এই করোনা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। আপনার মনুষত্বের পরীক্ষা। দেখুন এ পরীক্ষায় পাশ করছেন কিনা।
আরকে//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।