আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার সফলতা অর্জন করেছি: পলক
প্রকাশিত : ১৭:৪৩, ৬ নভেম্বর ২০২২
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে সম্মানজনক এবং মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ‘ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি)’ এর এবারের আয়োজক দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রায় প্রতি বছরই তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষভাবে আয়োজিত হয় এই কনটেস্ট, যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সাল থেকে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নেতৃত্বে আইসিপিসি এর ৪৫তম আসরের নির্বাহক এজেন্সি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং বাংলাদেশের থেকে হোস্ট ইউনিভার্সিটি ‘ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)’।
এরই মধ্যে বাংলাদেশে এই আয়োজন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল প্রকার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে এবং চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী ৮ নভেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হবে।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আইসিপিসি আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোসহ কী কী আয়োজন থাকছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয় রোববার (৬ নভেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে। ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) অডিটরিয়ামে ‘আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা’ আয়োজনকে ঘিরে প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
অনুষ্ঠানে প্রেস ব্রিফ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং আইসিপিসি নির্বাহী পরিচালক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার।
অন্যান্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস কনটেস্ট এর পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক কামরুল আহসান, হুয়াওয়ের কর্পোরেট কমিউনিকেশনস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ড ভিকি ঝ্যাং, জেট ব্রেইনের বিনিয়োগ বিভাগের এসভিপি এবং গবেষণা ও শিক্ষা বিষয়ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্ড্রে ইভ্যানভ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার এই প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ আয়োজনটি আইসিটিতে আমাদের সক্ষমতা প্রদর্শনের দারুণ একটি সুযোগ। একই সঙ্গে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ আইসিটি নেতৃত্বদের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে দেওয়ারও একটি সুযোগ। আমরা সবাইকে বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও আতিথেয়তার স্বাদ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
পলক আরো বলেন, ১৩ বছরে আইসিটি খাতে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। ১৩ বছর আগে আমাদের মাত্র ৫ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, যা এখন ১৩০ মিলিয়ন। ১৩ বছর আগে কোনো আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি ছিল না, প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। এখন সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং সার্ভিস সেক্টর থেকে সব মিলিয়ে প্রতি বছরে সেটি ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে এসে দাড়িয়েছে। তিনি বলেন যে, একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ হলো অনলাইন সোর্স অব ওয়ার্কার এর তালিকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ।
সবশেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার সফলতা অর্জন করেছি এবং সেই সফলতার ভিত্তিতে ২০৪১ সালের মধ্যে এখন আমরা টেকসই, জ্ঞাননির্ভর ও সৃজনশীল 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তুলতে চাই’।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. উইলিয়াম বি. পাউচার বলেন, আইসিপিসি বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অন্যতম বিশেষ আয়োজন। আমাদের লক্ষ্য ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের শক্তির উপর নির্ভর করে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলা। আর এর জন্য শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। এ জন্য আইসিপিসির মতো অনুষ্ঠানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় আমি খুবই উচ্ছ্বসিত।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বাংলাদেশ নতুন প্রযুক্তিকে খুব দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ ও মানিয়ে নিতে সক্ষম। আমাদের দেশ আইসিটি খাতকে দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইসিটিতে আমাদের কাজের আয় ২৬ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং এই সংখ্যাটি এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউএপির উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, আইসিপিসি হলো সবচেয়ে পুরানো, বৃহত্তম এবং মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রিমিয়ার গ্লোবাল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, যা ‘প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার অলিম্পিক’ হিসাবে বিবেচিত হয়। এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা ইউএপি-এর জন্য অনেক বড় সম্মান, কারণ বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এত বড় কিছু আয়োজন করা হয়েছে।
আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু বলেন, পুরো বিশ্বের সেরা প্রোগ্রামিং বিষয়ক সমস্যা সমাধানকারীদের মধ্য থেকে সেরাদের নিয়ে আমরা এই আয়োজন উদযাপন করতে এসেছি। কারণ ভবিষ্যতে এই মেধাবী সমস্যা সমাধানকারীদের খুবই প্রয়োজন। আমাদের এই মেধাবী সমস্যা সমাধানকারীদেরকে নিয়েই ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।
বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার বলেন, এই চমৎকার ফাইনাল আয়োজনের জন্য ঢাকা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আইসিপিসির মতো প্রোগ্রামিং ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট আয়োজনের সামর্থ্য ও সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪৪তম আইসিপিসি প্রতিযোগিতায় এশিয়া পশ্চিম অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সম্মান অর্জন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ বছর ৭০টি দেশ থেকে প্রায় ১৩৭টি দল থেকে মেধাবী প্রতিযোগীরা এই কনটেস্টের চূড়ান্ত রাউন্ডে অংশ নিচ্ছে।
এই আয়োজনকে ঘিরে ইতোমধ্যে ২০০ জন আইসিপিসি রিজিওনাল কনটেস্ট ডিরেক্টর ছাড়াও কর্মকর্তাসহ অন্তত এক হাজারেরও বেশি বিদেশি অতিথির আগমন হচ্ছে বাংলাদেশে। আইসিপিসি রিজিওনাল ডিরেক্টরবৃন্দ বিভিন্ন সিম্পোজিয়ামসহ সেমিনারে অংশ নেবেন।
ঢাকার বসুন্ধরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) তে আগামী ৮ নভেম্বর ২০২২ থেকে শুরু হচ্ছে এবারের ‘আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা ২০২২’। কনটেস্টের মূল প্রবলেম সলভিং অংশটি অনুষ্ঠিত হবে ১০ নভেম্বর, যেখানে ৬ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণকারীগণ সমস্যা সমাধান করবেন তাদের দক্ষতা ও মেধার মাধ্যমে। আয়োজনটির চ্যাম্পিয়নের নাম ঘোষণা করা হবে ১০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে।
এশিয়ার মধ্যে চীন, জাপান, থাইল্যান্ড এর পর ৪র্থ দেশ হিসেবে এবারই প্রথম বাংলাদেশ নামটি আইসিপিসি আয়োজক দেশ হিসেবে হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। বিশ্ব আসরে বাংলাদেশ ১৯৯৮ সাল থেকে আইসিপিসি-তে প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করে আসছে।
বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে মোট ৮টি মেধাবী দল অংশ নিচ্ছে। চূড়ান্ত পর্বকে লক্ষ্য করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক এ বছরের অক্টোবর মাসে আয়োজন করা হয় একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ। এবারের আয়োজনেও বাংলাদেশ থেকে ভালো অর্জন আশা করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
কেআই//
আরও পড়ুন