তারকালাপে ফখরুল বাশার মাসুম
‘আমাদের দুজনকে এক করেছে সুবর্ণা’
প্রকাশিত : ১৫:৪০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ০৯:৩৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭
ঢাকা থিয়েটারের প্রবীণ সদস্য ফখরুল বাশার মাসুম। নিয়মিত মঞ্চ ও টেলিভিশনে অভিনয় করছেন। ছোট পর্দার পাশাপাশি কাজ করছেন বড় পর্দায়ও। মাঝে মাঝে হচ্ছেন বিজ্ঞাপনের মডেল। অপরদিকে মিলি বাশার। ফখরুল বাশারের স্ত্রী। তিনিও অভিনয় করছেন সব অঙ্গনে।
অভিনয়ের পাশাপাশি এ তারকা দম্পত্তি সুখের সংসার সামলাচ্ছেন সমান তালে। অভিনয়, সংসার ও ভালোবাসার কথা নিয়ে ফখরুল বাশার মাসুম মুখোমুখি হয়েছিলেন একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনের সামনে। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : শুভ সকাল। কেমন আছেন?
ফখরুল বাশার মাসুম : ধন্যবাদ। অনেক ভালো আছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : বর্তমানে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে আপনার?
ফখরুল বাশার মাসুম : যেহেতু পেশাটাই আমার অভিনয়, তাই অভিনয়ের মধ্যেই ব্যস্ত আছি। সম্প্রতি বিজ্ঞাপনের কাজ করলাম। সিঙ্গেল নাটকের কাজ করছি। সিরিয়ালে কাজ চলছে। পাশাপাশি মঞ্চেও কাজ করছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনার শুরুটা কি মঞ্চ থেকে হয়েছিলো?
ফখরুল বাশার মাসুম : হ্যাঁ। আমার শুরু হয় ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গেই। ৭৪ সালে রাইসুল ইসলাম আসাদ, আমার বন্ধু। সেই আমাকে ঢাকা থিয়েটারে নিয়ে যায়। মঞ্চে আমার প্রথম অভিনয় সম্ভবত ১৯৭৬ সালে ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’র মধ্য দিয়ে।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : বর্তমানে আপনাদের থিয়েটারে কি কি প্রডাকশন চলছে?
ফখরুল বাশার মাসুম : বর্তমানে নতুন প্রডাকশনের মধ্যে একটি বিদেশি গল্পের অনুবাদ নিয়ে কাজ হচ্ছে। টমাস কিনেলির দি প্লেমেকার উপন্যাস অবলম্বনে টিম্বারলেক ওয়ার্টেন বেকারের রচনা ও হুমায়ুন কবির হিমুর নির্দেশনায় ‘আওয়ার কান্ট্রি ইজ গুড’ নাটকটি বর্তমানে চলমান প্রডাকশন। এটার মধ্য দিয়ে আমি ৩৫ বছর পরে আবারও মঞ্চে কাজ শুরু করেছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনি তো চলচ্চিত্রেও কাজ করছেন। সেখানে বর্তমানে ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
ফখরুল বাশার মাসুম : তিনটি সিনেমার শুটিং শেষ করেছি। জানুয়ারিতে একটি সিনেমার শুটিং শুরু হবে। এই সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধি বিষয়ক। নাম বলতে চাচ্ছি না। মহরত হলে জানতে পারবেন। আর দুটি সিনেমার জন্য কথা চলছে।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : বড় পর্দায় কাজকে কেমন উপভোগ করেন?
ফখরুল বাশার মাসুম : আমার কাছে বড় পর্দার কাজটা বেশ ভালো লাগে। কারণ হচ্ছে টেলিভিশন নাটকে যতবার শট কাটা হয় চলচ্চিত্রে ওই ভাবে কাটা হয় না। নিজেকে তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। টেলিভিশন নাটকে এই সুযোগটা নেই।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : মিডিয়ার ক্যারিয়ারে আপনার একটি দীর্ঘ বিরতি গেছে। হঠাৎ কেনো বিরতিতে গেলেন? ওই সময়টাতে কি অভিনয়কে মিস করতেন?
ফখরুল বাশার মাসুম : জীবিকার প্রয়োজনে পাড়ি দিয়েছিলাম সৌদি আরবে। তখন দেশ ও অভিনয়কে অনেক মিস করতাম। এগুলো আমার স্ত্রী খুব ভালো বলতে পারবে। কারণ ওকে প্রতিদিন একই কথা বলতাম। বলতাম ‘আমার ভালো লাগছে না’। আমি থাকবো না এই দেশে। চলে যাবো। আমরা অফিস শেষ করে লং ড্রাইভে চলে যেতাম। রাস্তায় গাড়িতে বসে গান না শুনে ডায়লগ দিতাম। আমরা যে নাটকগুলো করেছি সেগুলোর সংলাপ বলতে বলতে সময়টা চলে যেত। সে শকুন্তলাতে অভিনয় করেছে। আমিও করেছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনার স্ত্রী তিনিও অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত। দুজনে তো এক সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন। আপনাদের বোঝাপড়াটা কেমন? নিজেদের কাজ নিয়ে বাসায় আলোচনা-সমালোচনাটা কেমন হয়?
ফখরুল বাশার মাসুম : এটার সময়টা আসলে খুব কম পাওয়া যায়। আমার ছোট মেয়েটাও অভিনয় করে। সে আবার একটি পত্রিকায় চাকরিও করে। তার পক্ষে সময় দেওয়াটা খুব কঠিন হয়ে যায়। সে যখন বাসয় ফেরে তখন তার কথা বলার মুড থাকে না। আবার খুব সকালে চলে যায়। বাসায় সেভাবে আড্ডা দিয়ে খুব কমই কথা হয় কাজ নিয়ে।
তবে আমরা আলোচনা-সমালোচনা বেশি করি সুবর্ণা মুস্তাফার বাসায়। ওখানে প্রায়ই আমাদের একটা আড্ডা হয়। সেখানে আমরা চার পাঁচজন মিলে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলি।
আর আমাদের দুজনের কথা যদি বলি। এক সঙ্গে কাজ করতে গেলে বোঝাপড়াটা ভালোই হয়। কারণ কো-আর্টিস্টের সঙ্গে একটা ক্যমিস্ট্রি ডেভলপ তো করতেই হয়। ওর সঙ্গে সেটা আর দরকার হয় না।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনাদের দুজনের প্রেমের গল্পটা শুনতে চাই।
ফখরুল বাশার মাসুম : ১৯৭৭ সালের দিকের কথা। সে ঢাকা থিয়েটারে কাজ শুরু করে। ‘শকুন্তলা’র রিহার্সেল চলছে। সে এবং হুমায়ুন ফরিদী এক সঙ্গে শুরু করে। বছর দুই যাওয়ার পরে আমার মনে হলো মেয়েটা আমার লাইফ পার্টনার হলে ভালোই হয়। কিন্তু বলতে পারছিলাম না। কারণ ঢাকা থিয়েটারে তখন মেয়ের সংখ্যা কম। আমি যদি তাকে প্রস্তাব দি আর সে যদি রাজি না হয় তাহলে হয়তো দল থেকে চলে যাবে। আর রিহারর্সেলে আসবে না। দলে না আসা মানেই বাচ্চু ভাই আমাকে ধরবে।
কিছুতেই বলার সাহস পাচ্ছি না। এ সময় সুবর্ণার স্মরণাপন্ন হলাম। তখন সে আমার সব চেয়ে ভালো বন্ধু। এখনও আমার খুবই কাছের ফ্রেন্ড সুবর্ণা। সেও চিন্তায় পড়ে গেল। মিলি যদি রাজি না হয়, আর দলে না আসে তবে বাচ্চু ভাই আমাদের শেষ করে দেবে।
একদিন আমি, জহির উদ্দিন ও সুবর্ণা রিহার্সেল শেষ করে আজিমপুরে চলে যাই দীপা খন্দকার বাসায়। দীপা খন্দকার হচ্ছে নৃত্য পরিচালক। ওর বাসায় মিটিং করি। আবার বাসায় ফিরি। এভাবে চলে কয়দিন। কিন্তু কোনভাবেই সমাধান পাচ্ছি না।
সংক্ষেপেই বলি- একদিন রাতে দীপার বাসা থেকে ফিরছি। দীপা তখন কোরিয়া থেকে আসছে। কোরিয়া থেকে সে কিছু চকলেট নিয়ে আসে। আমি কিছু চকলেট দিয়ে বললো যে- যা এগুলো মিলিকে দিয়ে আয়। প্রচণ্ড বৃষ্টি। প্রায় সাড়ে নয়টা দশটা বাজে। আমি আর সুবর্ণা আজিমপুর থেকে রিক্সায় ফিরছি। মিলিরা থাকতো তেঁজগাও এর বেগুন বাড়ি। ওখানে রিক্সার মধ্যে সুবর্ণা বসে রইলো। আমাকে বললো -তুই দিয়ে আয়। আর বলবি যে তুই ওকে পছন্দ করিস। আমি কাঁচা আম আর কোরিয়ার চকলেট নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে গিয়ে দরজায় বেল দিলাম। মিলিই দরজা খুললো। আমি পুরা ভেজা। চকলেট দিয়ে আমি চলে আসি। হা হা হা।
সুবর্ণা আমাকে রিক্সা থেকে বলে- কি রে বলেছিস? আমি বললাম- না। তখন সে বলে- যা, আবার যা। আমি আবার গেলাম। পরের দিন আমাদে শো ছিল। আমি গিয়ে ওসব না বলে বলেছি- তুমি কি কাল শোতে আসবে? মিলি তখন বললো- ভাইয়া গেলে যাবো। তখন আমি বললাম- না ভাইয়া না, আমি এসে নিয়ে যাব। তখন সে বললো- আচ্ছা আমি যাবো। কিছু না বলেই ফিরে আসলাম।
তখন সুবর্ণা আবার জিজ্ঞাস করলো- কি রে বলেছিস? বললাম যে- না।
তারপরের দিন শো এর পরে সুবর্ণা নিজেই তাকে বললো- ও তো তোকে পছন্দ করে। এভাবেই শুরু। এরপর তিন চারদিন পরে আস্তে আস্তে রাজি হয়ে গেলো। আসলে আমাদের সম্পর্কটার পেছনে সুবর্ণার অবদানই বেশি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : অনেক কথা শুনলাম। অনেক ভালো লেগেছে। আপনাদের জন্য শুভ কামনা।
ফখরুল বাশার মাসুম : আমারও ভালো লেগেছে একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলে। ধন্যবাদ।
এসএ/