ঢাকা, সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আমাদের সেকাল

সরদার রেজাউল করিম

প্রকাশিত : ১৬:১৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

বাড়ির সামনে ফকির হাট, ফকির হাটে গরুর হাট, কী আশ্চার্য! পার্শ্ববর্তী এতবড় সীতাকুণ্ড হাটে গরুর হাট নেই। ফকির হাটে সিম, টমেটো, কচুরছড়া, ঝিংগা, ছিছিংগার সাথে মাছ মাংস যেমন পাওয়া যায়, তেমনই একপাশে বড় মাঠে গরুও বিক্রয় করা হয়। তিন কুড়ি থেকে ছয়কুড়ি পর্যন্ত একেকটা গরুর দাম। সেই গরুর হাট আমাদের ফকির হাটে আছে, সীতাকুণ্ডে নেই, এটা মনে মনে একটা গর্বের বিষয় ছিল। 

ষাটের দশকের মাঝামাঝি। সপ্তাহে হাট বসতো দু’দিন- রোববার ও বুধবার। রোববার সপ্তাহের বন্ধের দিন আব্বাসহ ফকির হাটে যেতাম, বুধবারে আমি একা যেতাম বাজার করতে। সাথে থাকতো আট্টো লাই (বাজার সওদা আনার জন্য বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে তৈরি এক প্রকার ছোট লাই, লাই এর কি অন্য কোন প্রমিত শব্দ আছে? আমার জানা নাই।) ব্যাগ বা চটের থলের প্রচলন তখনো শুরু হয়নি। ধরার সুবিধার জন্য আট্টোলাই এর দু’পাশে দুটো তোড়া থাকতো, সেই দু’টো আবার পরস্পরের মধ্যে মোটা কাপড় বা গামছা দ্বারা সংযুক্ত থাকতো, যেটার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে কব্জি ও কনুই মাঝখানে নিয়ে স্বচ্ছন্দে হাটা চলা করে বাজার আনা হতো। মা বাজারের জন্য দিতেন এক টাকা, পাঁচসিকে অথবা বড়জোর দেড় টাকা। এতেই আট্টোলাই ভর্তি করে বাজার আনা যেতো। বাজার করে আসার সময় একটা ‘লেবেঞ্চুস’ চুষতে চুষতে জিব্বা লাল করে হেঁটে হেঁটে বাড়ি আসতাম।

তবে হাটে গেলে বাজারের ফাঁকে গরুর হাটের ঐদিকে একবার হলেও উঁকি দিয়ে দেখে আসতাম গরুর হাট কেমন জমছে। কিন্তু এত ছোট হাটে গরুর হাট বসে অথচ সীতাকুণ্ডের মতো বড় হাটে গরুর হাট বসে না কেন এই চিন্তাই আমি ঘুরপাক খেতাম, কোন সমাধান আমি খুঁজে পেতাম না। 

গরু বেচাকেনা হতো, রাস্তাদিয়ে গরু আনার সময় এখনকার কোরবানির ঈদের মতো সবাই দাম জিজ্ঞাসা করতো। আঁকারভেদে গরুর দাম ছিল তিন কুড়ি থেকে ছয় কুড়ি টাকা। যেমন তিন কুড়ি পাঁচ টাকা বা চার কুড়ি দশ টাকা, ইত্যাদি। ছয় কুড়ি পর্যন্ত দাম উঠতো যেগুলো চার/ পাঁচ কেজি দুধ দিতো সেগুলো। তবে সেগুলো সংখ্যায় ছিল খুবই কম। তবে কোন একটা গরুর দাম শোনার পর এতে মোট কত টাকা হয় সেটা কড়ে আংগুলে গুনতে গুনতে বাড়ি ফিরে আসতাম। কোন দিন হিসাব মিলতো, কোন দিন মিলতো না।

কী সমস্যা! ছয় পয়সায় এক আনা, ষোল আনায় এক টাকা, অর্থাৎ ছিয়ানব্বই পয়সায় এক টাকা। এখন আবার বলাবলি করে এক’শ পয়সার ভাড়তি চার পয়সার কি হবে? পাঁচ পয়সার একটা তামার কয়েন এবং এক পয়াসার একটা তামা/লোহার কয়েন দিয়ে এক আনা হয়। সেই হিসেবে চব্বিশ পয়সায় চার আনা, কিন্তু সরকারে কয় পঁচিশ পয়সায় চার আনা! গোলমাল সর্বত্র লেগে যাবার অবস্থা! এই সময়ে আবার দশমিক পদ্ধতির (Matric System) প্রচলন শুরু হলো, এতে ঝামেলা অনেকটা কমে গেল।

নতুন দশ পয়সার এলুমিনিয়াম এর মুদ্রা বাজারে এলো। চকচকে সাদা একগুচ্ছ দশ পয়সার মুদ্রা পেয়ে অনেকেই আত্মহারা! বিঘত খানেক লম্বা সুতার জালি ব্যগের ভিতর এগুলো সংরক্ষণ করে কোমরে কাপড়ের উপর প্রদর্শনের ভংগিতে ঝুলিয়ে হাটাচলা করতো কেউ কেউ। এটাও একটা বাহাদুরির কাজ ছিল তখন। 

এক পয়সা থেকে শুরু করে দু পয়সা, পাঁচ পয়সা, দশ পয়সা চার আনা, আট আনার ধাতব মুদ্রা ছিল। এক পয়সার কয়েনটাও কখনো সখনো কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।

সেই দিন যে গেলো আর কখনো কি আসবে?
(এইসব রাস্তার পাশের হাটবাজারগুলো যুদ্ধের সময় বিচ্ছিন্নভাবে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন সেখান থেকেও আস্তে আস্তে এই বাজারগুলো উঠে গেছে বা যাচ্ছে।)

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি