ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

আমার জীবনের পাঠশালা

প্রকাশিত : ২১:২৪, ১০ মে ২০১৮

হ্যাঁ, এই বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন ছাত্রী হিসাবে আমি অত্যন্ত গর্বিত। ভাবতে বড় ভালো লাগছে যে, আমার বিদ্যালয়টির বয়স একশ’ বছর পূর্ণ হলো। সাথে সাথে আমার শ্রদ্ধাভাজন প্রধান শিক্ষক জনাব আবদুন নূর চৌধুরী স্যারকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। স্মরণ করছি শ্রদ্ধেয় রশীদ স্যার, শ্রদ্ধেয় খালেক স্যার, শ্রদ্ধেয় নৃপেন্দ্র স্যার, শ্রদ্ধেয় সুরেশ স্যার, শ্রদ্ধেয় আফিল উদ্দিন স্যারসহ অন্যান্য স্যারকে। 

প্রাইমারি শ্রেণিগুলো শেষ করেছি শায়েস্তাগঞ্জ জুনিয়র গার্লস স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ভর্তি হলাম শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ এক অপূর্ব অনুভূতি! বালিকা শাখা থেকে উত্তীর্ণ বালক-বালিকা মেশানো বিদ্যালয়। শুরুতে ভীষণ ভয় অনুভব হতো। তবে বড় ভাই হিসাবে, অভিভাবক হিসাবে যাঁদের আশীর্বাদ, উপদেশ এবং সৌজন্যমূলক আচরণ পেয়েছি, তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রদ্ধেয় রণজিৎ স্যার, শ্রদ্ধেয় শিমুল স্যার ছিলেন আমার পাড়ার বড় ভাই, তার সাথে যোগ হলো ‘গুরু’। ভীষণ ভয় পেতাম। তবে ভীষণ আদরও পেতাম। কষ্ট হয় স্মৃতিচারণ করতে। কারণ তাঁদের দুজনের একজনও আজ পৃথিবীতে নেই।


স্মৃতির পাতায় আটকে আছে কিছু সহপাঠী বন্ধু। যাঁদের মধ্যে বেশি মনে পড়ে শোয়েব, আবদাল, মাসুদ, নীলু, অর্চনা, স্মৃতি, মানিক, শেখর, তরুণসহ আরও অনেককে। সহপাঠীরা কোথায় আজ হারিয়ে গেল, যার যার মতো অবস্থানে।


বাবা সরকারি চাকরি করতেন বিধায় বিভিন্ন কর্মস্থলে অবস্থান করতে হয়েছে। একেক জায়গার একেক রকম স্মৃতি। কিন্তু আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে আমার ‘শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়’। এ বিদ্যালয়ের উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো সত্যিই গর্বের ধন। এমনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আমার প্রিয় দাদা শ্রদ্ধেয় অশোক মাধব রায়। এ বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর শিক্ষাদানের কৌশল, উপদেশ, হাসিমাখা আচরণ, বড় ভাই, বড় আপুদের বন্ধুসুলভ ব্যবহার, সহযোগিতা, সহপাঠীদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল বিভিন্ন ঘটনা, একসাথে হাঁটা, সমাবেশে অংশগ্রহণ, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা সবই ছিল অত্যন্ত মধুর ও আনন্দের।


বতর্মানে আমিও শিক্ষকতায় আটকে গেছি। শিক্ষা গ্রহণ আর শিক্ষাদান এর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। আমার শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন দেখে মনে হয় আমিও এতদিনে একজন প্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠেছি। শিক্ষাদানের কৌশলগুলো ‘আমার জীবনের পাঠশালা’ থেকে শিখেছিলাম। আমার শ্রদ্ধেয় গুরুজনদের দেয়া শিক্ষাদানের কৌশলগুলো আমার কৌশলে রূপান্তরিত ও বাস্তবায়ন করতে পারছি। আমি লিখতে পারি না। লিখেন তো হুমায়ূন ভাই। চমৎকারভাবে লিখে আমার সহপাঠী আবদাল ও মাসুদ। আমি আজকের দিনে শুধু স্মৃতিচারণ করছি আমার পাঠশালাকে। যেটা আমার মনে সত্যিই স্থায়ী চিত্র। বিদ্যালয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। শ্রদ্ধাভরে নিবেদন করছি শ্রদ্ধেয় গুরুজনদের, আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিনন্দন আমার পাঠশালার শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়া ও আপুদের। ‘বুলবুল’ আপু আমার অনেক প্রিয়। আপু তো আমাকেই ছোট বোন মেনে নিতেন, যার জন্য ‘নীলুটা’ খুব হিংসে করত (বুলবুল আপু আমার সহপাঠী নীলুর বড় বোন)। সহপাঠীদের অনেক ভালোবাসা, তাদের সংস্পর্শে যে সময়গুলো কাটিয়েছিলাম। সবাই স্মৃতিতে আজও জাগ্রত। মলিন হয়নি এখনো। বন্ধুরা, এখনো খুব মনে পড়ে। অভিনন্দন রইল তোমাদের।


‘আমার জীবনের পাঠশালা’ হবে আরো উন্নত আরো বিশাল। এটা যে এই বিদ্যাপীঠের সত্যিকারের বৈশিষ্ট্য। তাই তো গর্ববোধ করি। এ গর্ব যে শুধু আমার নয়, সর্বজনের।

লেখক : ব্যাচ-১৯৭৮-এর শিক্ষার্থী ও প্রধান শিক্ষক, সুহিলপুর মধ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি