আমার ভাবনা
প্রকাশিত : ১৯:১৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মরুর দেশ অনেকে দেখেছেন, আরো দেখবেন। জানি না, কারো অনুভূতিতে বিষয়টি আঘাত করেছে কিনা? দেড় হাজার বছর আগে প্রিয় নবীজি যে এলাকায় জন্ম নিয়েছিলেন, সে এলাকাটি দেখে, দেড় হাজার বছর আগের পরিবেশের কথা ভেবে আমি কেঁদেছি। আমার মন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি এতো কঠিন পরিবেশে মানুষ বাস করে কিভাবে? বাঁচে কিভাবে?
মহান আল্লাহর বিচিত্র লীলার এক মহান লীলা মক্কা ও মদীনা এবং তায়েফ। দেখেছি বলে বলছি, এই পাথরময় জগতটায় মানুষরা জীবন যাপন করেন কিভাবে? প্রচণ্ড রোদ্দুরে নাক, চোখ, মুখ পুড়ে যায়,পায়ে ফোস্কা পরে, শরীর মুহূর্তে শুকিয়ে পানির তেষ্টা পায়, হে আল্লাহ আপনি কিভাবে মা হাজেরাকে এবং তাঁর শিশু বাচ্চা ইসমাইলকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন?
ইব্রাহিম (আ.) ও কি করে এখানে তাঁর সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীকে একাকী রেখে গেলেন? আমি চমকিত হই, আমি কেঁদে উঠি, আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই।
তায়েফে মহানবীর উপর এমন আঘাত করা হয়েছিল বলা হয় তাঁর দুটো পবিত্র জুতা মুবারক রক্তে ভরে গিয়েছিল। হায় আল্লাহ! তারপরও তিনি ঐ সকল মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করেছেন, আল্লাহর দরবারে দু হাত তুলে। তাঁরা যেন তাদের ভুল বুঝতে পারে।
আমি দেখে এসেছি কতো বড় বড় পাথর সমৃদ্ধ পাহাড়, যা যে কোনো সময় মানুষকে আঘাত করলেই শেষ....।
একবার ভেবেছি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করতে নবীজি কী কষ্টটাই তিনি করেছেন হযরত আবু বকর (রা.) কে নিয়ে। এবড়ো থেবড়ো পাথর আর উত্তপ্ত বালুকনার মধ্যে উট চলছে কিভাবে? কিভাবে এতোটা পথ পার হলেন, যেখানে এসি বাসে করে আমরা ৬-৭ ঘণ্টায় মদীনা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।
চারিদিকে শত্রুর আনাগোনা, সন্ধানী চোখ, তার ভিতর থেকে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যাওয়া, অচেনা অজানা পরিবেশে গমন, কী নিদারুণ নির্মম অবস্থা? আমি যখন এসি বাসে চড়ে মক্কা ছেড়ে মদীনায় যেতে শুরু করি, আমার মন বলছিল, ওয়াহিদ মুরাদ দেখো, একটু ভাবো নবীজিও উটে চড়ে আবু বকরকে সাথে চলছেন, তুমি কতো দ্রুত এসি বাসে বসে থেকে ছুটছো, আমি হযরত মুহাম্মদ (স.) কতো ধীরে প্রচণ্ড রোদ্দুরে এলোমেলো অচেনা পথ ধরে শত্রুর চোখ এড়িয়ে এগুচ্ছি, একবার ভাবতে পারো?
আমি অভাগা। আমার শুধু চোখের পানি সম্বল। এর বেশি কিছুই জবাবে দিতে পারিনি। আজ আমি তিলেতিলে মর্মে মর্মে অনুভব করি, কেনো মাইকেল হার্ট নবীজিকে তাঁর শত মনীষীর বইয়ে এক নম্বরে স্থান দেন। কেনো কবি গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবী বইখানা যুগ যুগ ধরে জনপ্রিয়।
মক্কা মদিনা আর তায়েফের পাথরের পাহাড়ের গায়ে কোনো গাছ গাছালি, লতা পাতা,পশু পাখি নাই, বার বার উচ্চারণ করেছি, এখানকার মানুষরা কোথায় ফসল জন্মাতো? কী খেতো? দুয়েক টা খেজুর গাছ বিনে আরতো কিছু দেখলাম না। এখন ছোট ছোট নিম গাছ লাগানো হয়েছে, যা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বহন করে।
আমার দু চোখে কেবল পানি আসে এতো কবুতর কেনো আল্লাহ মক্কায় রেখেছেন, কারণ কী? এর পিছনে কী রহস্য? সেকি নূহের আমলে প্লাবনের পানি কতোটা কবুতর মেপেছিল বলে? আল্লাহ ভালো জানেন। আমি মুর্খ, কি করে বুঝবো?
আজ মরুভূমির দেশ সৌদি আরব দারুণ উন্নত দেশ। কিন্তু আমি কোথাও একটা ইংরেজি বা উর্দু দৈনিক পত্রিকা পেলাম না কিনতে,কারণ বোধ গম্য নয়। আমার দেশের কথা বার বার মনে হয়েছে,
আমার সোনার বাংলা (তার চেয়েও বেশি কিছু) আমি তোমায় ভালোবাসি। এতো পানি, এতো গাছ, এতো লতাপাতা, এতো পশু পাখি? সত্যি, প্রিয় বাংলাদেশ, আমি তোমায় ভালোবাসি।
মক্কা মদীনায় যারা যখন যাবেন, তারা একটি কথা শুধু মনে রাখবেন, ওগো মদীনা মনোয়ারা/ কে বলে তুমি মরুভূমি, কে বলে তুমি সবহারা?
যেখানে মহানবীর জন্ম, যেখানে জমজম কুয়া, যেখানে ওহুদের পাহাড়, যেখানে মহানবী গোত্রের বিবাদ মিটাতে আলোচনা সভা করেছেন, যে হিলফুল ফুজুল এর আদলে আজকের দুনিয়ায় জাতিসংঘ, যে মদীনায় মসজিদে নববী, মা আয়েশার ঘরটুকু বেহেশতের টুকরো নামে পরিচিত, যেখানে মহানবীর পবিত্র রওজা শরীফ, হযরত আবু বকর, হযরত ওমর- এর পবিত্র সমাধি, সে দেশ, সে এলাকা আমাদের হৃদয়ে স্থান করে বেঁচে থাকবে মরণের শেষ সময়ও। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
এমএম//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।