ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘আমার সন্তানরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৪৯, ২ জানুয়ারি ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

আমার মা বাবার বয়স হয়েছে। তারা এখন অসহায়। তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য আমি দিন রাত পরিশ্রম করছি। তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। নিজের সাধ্যানুযায়ী এখন চেষ্টা করছি তাদের জন্য কিছু করার। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পিঠা বিক্রি করতে করতে এসব কথাগুলো বলছিলেন ৩৮ বছর বয়সী মো. ইউছুফ।

মো. ইউছুফ প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরমের মৌসুমে জুস আর শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রি করেন। ধুলো-বালি আর ময়লা ঝড় সব কিছুই তার কাছে সমান। কারণ তাকে কাজ করতে হয়। যা আয় হয় সেটা প্রতি সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে পাঠান মা বাবার ঔষুধ, পথ্য কেনার জন্য। আর নিজেও সপ্তাহ বা পনের দিন পর পর তাদের দেখতে গ্রামের বাড়িতে যান।  

মো. ইউছুফের গ্রামের বাড়ী নোয়াখালী। থাকেন ঢাকার মালিবাগের এক মেসে। শান্তিনগর ও কাকরাইলে ভ্যান গাড়িতে করে এখন বিক্রি করেন পিঠা। মো. ইউছুফের বাবা একসময় ভ্যানে করে আঁখের রস বিক্রি করতেন। তিনি ছিলেন তার বাবার কাজের সহযোগী। এক সময় বাবা অসুস্থ হয়ে গেলে তিনি নিজেই ব্যবসা শুরু করেন।

মো. ইউছুপ জানান, ‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে কখনো পিঠা কখনো জুস বিক্রি করি। এতে যে আয় হয় সেটা প্রতি সপ্তাহে গ্রামে আমার মা বাবার জন্য পাঠিয়ে দেই। যাতে তারা খাবারে কষ্ট না পায়। তাদের ঔষুধগুলো কিনতে পারে। আমি চাই তারা ভালো থাকুক। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে সেটা দিয়ে তাদের জন্য করার চেষ্টা করি।’

মানুষ স্বপ্ন দেখে। মো. ইউছুফও স্বপ্ন দেখছেন। তার দুই মেয়ে সন্তান। দুজনই মাদ্রাসায় পড়ে। তিনি নিজে পড়ালেখা করতে পারেন নাই। তাই তিনি চান তার সন্তানেরা পড়ালেখা করে একদিন অনেক বড় হবে। এই আশা সব সময় বুকে ধারণ করে মো. ইউছুফ। বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করতে পারি নাই। আমি চাই আমার সন্তানরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। তারা যেন সমাজের উপকারে আসে।’ মো. ইউছুফ মা বাবার সুবিধার জন্য নিজের পরিবারকে গ্রামের বাড়িতেই রেখেছেন।

মানুষের সেবা করতে ভালো লাগে জানিয়ে মো. ইউছুপ বলেন, “আমি চেষ্টা করি কাজের পাশাপাশি মানুষের সেবা করার। প্রায়ই দেখা যায় অনেকে খাবার খেয়ে বলে টাকা নেই। তখন আমি আর কিছু বলতে পারি না। সমস্যা থাকলে তো আর কিছু করার নেই। আমার এই পানির জন্যও কোনো টাকা নেই না। মানুষ পানি খেয়ে যদি দোয়া করে সেটাই আমার অনেক পাওয়া। নিজে চেষ্টা করি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার। ধুলা-বালিতে কাজ করতে অনেক কষ্ট হয় তবু মা বাবা সন্তানদের জন্য দিন রাত পরিশ্রম করি। তারা যেন সুখে থাকে। ভালো থাকে।”

মো. ইউছুফ জানান, তিনি দৈনিক ৬ থেকে ৭ কেজি চাউলের পিঠা বিক্রি করেন। প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়েই চাউল ভিজিয়ে তার কাজ শুরু করেন। দৈনিক ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মত তার আয় হয়।

তিনি আরও জানান, ‘আমার যে আয় হয় সেখান থেকে পুলিশকে কিছু দিতে হয়। এরপর নিজের খরচ, মা বাবা, পরিবার ও সন্তানদের পড়ালেখা সবকিছুই এই আয় থেকে করতে হয়। এরপরও আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছে। অনেক সময় পাগল বা ক্ষুদার্থ লোক এসে কিছু চাইলে আমি তাদেরকে ফেরৎ দেই না। কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি মনে করি এতে আল্লাহ আমার রিজিক হয়ত আরো বাড়িয়ে দেবে।’  

 

এসি/ টিকে


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি