ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আমি, ক্যাসিনো এবং জীবন...

তাহিয়া রুবাইয়াত অপলা

প্রকাশিত : ১০:৫০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১০:৫৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

তখন আমি অফিসের কাজে সিঙ্গাপুরে। সারাদিন কাজ করে কয়েকজন ঘুরতে বের হলাম। ঘুরতে ঘুরতে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে স্যান্ড ক্যাসিনোতে চলে গেলাম। আমার সাথের সবাই ক্যাসিনোর ভেতরটা দেখতে চাইলো। কিন্তু গেটে থাকা সুন্দর একটা পুলিশ অফিসার আমাকে আটকায় দিলো। 

আমার পাসপোর্ট নিয়ে বলল ‘তুমি আন্ডার এইজ। (সিঙ্গাপুরে ২১ বছরের নীচে ক্যাসিনোতে ঢোকা নিষিদ্ধ) তুমি ভেতরে যেতে পারবে না’ আমিও অসহায়ের মতো বললাম, ‘দেখো আমার সব বন্ধুরা ভেতরে যাচ্ছে। আমি একা হয়ে যাব। আমাকেও যেতে দাও।’ 

এত সুন্দর করে বলার পরেও পুলিশের মন গলানো গেল না। উনি বেশ কড়া ভাষায় বলল ‘নিষেধ করার পরেও যদি ভেতরে যাও, তোমার পাসপোর্টের ওপর ৫০০ ডলার জরিমানা করা হবে’। বেচারা আমি গেট থেকেই ফিরে এলাম। আমার সাথের ওরা বললেন তারা ঘণ্টাখানেক এর মধ্যেই ফিরে আসবেন। এরপর ১,২,৩,৪, ঘণ্টাতেও তারা আসেন না। এতক্ষণে মেট্রো বন্ধ হয়ে গেছে। আর অ্যাপার্টমেন্টের লিফটে ওঠার কার্ডও কাছে নেই। তাই আমি ক্যাসিনোর বাইরে শপিং মলে ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। 

রাত ৩টা। ফোনের চার্জ শেষ। দুই একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেগুলোতে শুধু শুকরের মাংস ছাড়া আর কোনো খাবার নেই। ক্যাসিনোর সামনে অনেকগুলো চেয়ার। শেষ পর্যন্ত ওখানে এসেই বসলাম।

একজন বৃদ্ধ লোক ওখানে সেই সন্ধ্যা থেকে বসে আছেন। এর আগেও ওনাকে ওখানে দেখেছি। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম ‘তুমি এতটা সময় এখানে একা একা বসে বোর হচ্ছ না?’ বৃদ্ধ খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো ‘তুমি কি ইন্ডিয়ান’ আমি বললাম ‘না, আমি বাংলাদেশি’ বাংলাদেশ কোথায় বৃদ্ধ জানে না, তবুও চেনার ভান করে আমার সাথে গল্প শুরু করে দিলেন। জীবনের শুরুতে উনি এখানে প্রায়ই আসতেন। এমনকি মাসের প্রথম বেতন পেয়েই ওনার প্রথম জায়গা ছিল এই ক্যাসিনো। 

এখানে আসার কারণে ওনার ছেলে মেয়েরা ওনাকে ছেড়ে চলে যায়। ওনার স্ত্রীও চলে যায় ওনাকে ফেলে। ওনার জীবনের সকল ইনকাম, সকল সঞ্চয় এই ক্যাসিনোতে এসে উনি শেষ করে ফেলেছেন। এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুধু জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো উনি এই ক্যাসিনোর বাইরে বসে কাটান। এখানে বসে উনি ভাবেন। ভাবতে ওনার ভালো লাগে। পুরোনো দিনের কথা ভাবেন। ক্যাসিনো না আসলে জীবন কতটা সুন্দর হতো সেটা ভাবেন।

ক্যাসিনোর বন্ধুগুলো টাকার সাথে সাথে কিভাবে হারিয়ে গেছেন সেটাও ভাবেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ক্যাসিনোর ওই সুন্দর পুলিশ অফিসারটা আমাকে ডাকছে। একটু আগে ওনাকে বলেছিলাম আমার ফোনে চার্জ নেই। উনি আমার জন্য কোথায় থেকে একটা চার্জার খুজে নিয়ে এসেছেন। তিনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন আমাকে ঢুকতে দিতে না পেরে। 
আমার জন্য জুসও নিয়ে এসেছেন। বেচারা আসলে ভালোই। আমার এখনো ওই পুলিশের কথা মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। সাথে ওই বৃদ্ধ লোকের পুরো জীবনটা চোখের সামনে ভাসে।

এত ছোটো পৃথিবীতে এই দুইজনের সাথে আমার আর কখনো দেখা হবে না!!!

লেখক: সাংবাদিক


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি