আর্থিক খাতে ভরসার বড় অভাব: আতিউর রহমান
প্রকাশিত : ১৬:৫১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:১৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, টাকার অভাব বড় অভাব নয়, অভাব ভরসার। বর্তমানে যদি আমরা ব্যাংকিং বা আর্থিক খাতে কোন অভাব দেখতে পাই, সেটা ভরসার অভাব- বিশ্বাসের অভাব, অর্থের অভাব নয়। শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ’র মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা: বিশেষ প্রায়োগিক ক্ষেত্রসমূহ’ শীর্ষক বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের ‘কর্ম অধিবেশন-২’ এ সভাপতিত্ব করেন ড. আতিউর রহমান। অধিবেশনে অর্থনীতি বিষয়ে গবেষকরা তাদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
গবেষকদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে ড. আতিউর রহমান বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনাটাই চলে বিশ্বাসের ওপর, নৈতিকতার ওপর। এ ব্যবস্থাপনায় যদি নৈতিকতা না থাকে সেটা অর্থপূর্ণ হতে পারে না। যেমন আপনার কাছে যদি এক কোটি টাকা দেওয়া হয়, আপনি ওটা নিয়ে আনন্দে রাত কাটাতে পারেন, আবার ওটা নিয়ে অসহায় পথ শিশুদের দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার যোগান দিতে পারেন। এটাই হলো নৈতিকতা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অর্থনীতিতে এ নৈতিকতাবোধ থাকলেই সেটা হবে অর্থপূর্ণ।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে তারা কী সিএসআর (সামাজিক দায় বদ্ধতা) পালন করছে। আমরা শুধু ব্যাংকের ওপর চাপ দেয়। এখন সময় এসেছে যারা কোটি টাকা ঋণ নেয় তারা সিএসআর পালন করে কী না।
তিনি আরও বলেন, আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ব্যাংকগুলোর মূল দায়িত্ব। কারণ ব্যাংকে মূল অর্থায়ন তারাই করে থাকে। ব্যাংকে উদ্যোক্তাদের অর্থ থাকে ১0 শতাংশ। এ পরিমান অর্থ দিয়ে তারা ব্যবসা করে যাবে আর ঋণগ্রহীতা ও আমানতকারীদের ঠকাবে এটা হতে পারে না। এগুলো দেখভাল করাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ।
ড. আতিউর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ সংকট আমাদের এতোদিন দিশেহারা করে ফেলতো। কিন্তু সরকার যে কুইক রেন্টাল করেছে তাতে আমরা রক্ষা পেয়েছি। এখন বিদ্যুতের এমন একটি নীতিমালা করতে হবে যেন টাকা ওয়ালারা বিদ্যুৎ তৈরি করতে আগ্রহী হয় এবং তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ টাকা হলে সরকার কিনবে ১৫ টাকা। মিটারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ বিদ্যুতের দাম নির্দিষ্ট হবে। উৎপাদক যখন দেখবে দিন শেষে প্রতি ইউনিটে তার হিসাবে পাঁচ টাকা করে যোগ হচ্ছে। তখন আর বিদ্যুৎ সংকট থাকবে না। এটাই অর্থনীতির সুচিন্তিত প্রয়োগ বা বিনিয়োগ হতে পারে।
সবুজ অর্থনীতির বিষয় তুলে ধরে ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের দেশে শিল্প কারখানাগুলো কী পরিমান দূষণ করছে সেটা বোঝা যায় গাজীপুরে গেলে। গাজী পুরে অনেক জায়গায় পানিতে মাছ-ই বাঁচতে পারে না। তাই আমাদের দেশে প্রত্যেকটা কারখানায় কতটুকু পানি ব্যবহার করতে পারবে, সেটা কীভাবে ব্যবহার করতে পারবে, সেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কী না তা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। আর এ সমস্ত কর্মকাণ্ডে অর্থের প্রয়োজন হলে তার নিশ্চয়তা মালিকদের দিতে হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে কারখানাগুলোতে সবুজায়ন ঘটাতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড করা হয়েছিল। সেখান থেকে উদ্যোক্তারা পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে ঋণ নিতে পারে। আমার সময় গাজীপুরের একটি কারখানাকে ৩০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিলাম। কারখানাটি এখন পরিবেশবান্ধব হওয়ায় আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে।
অধিবেশনে ‘দূষণ অর্থনীতি, নৈতিকতা, প্রবৃদ্ধি ও সমতায়নে দূষণ নিয়ন্ত্রণ নীতি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জহিরুল ইসলাম সিকদার বলেন, দূষণ অর্থনীতির ধারণাগত বিশ্লেষণ, দূষণের প্রকরণ, মনুষ সৃষ্টির কারণে সমগ্র পরিবেশের ওপর বিরুপ ও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এর কারণে উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের ওপর রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয়। তাই পরিবেশ উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও সমতায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
এছাড়া অধিবেশনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নেত্রী শেখ হাসিনা: অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী, ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতায় নৈতিকতা শীর্ষক সাজ্জাত আলম খান, ‘প্রিভেনটিং করাপশন ইন পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ শীর্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আরকে/এসএইচ
আরও পড়ুন