ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আল কোরআনে রোজা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৮, ২৫ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৪:৫৭, ২৫ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

পবিত্র মাহে রমজানে নাযিল হয়েছে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কালাম পবিত্র আল কোরআন। সকল আসমানী গ্রন্থের সেরা গ্রন্থ আল কোরআন। আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সকল নবী-রাসূলের মধ্যে সেরা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। শ্রেষ্ঠ মাসে শ্রেষ্ঠ রাতে শ্রেষ্ঠ নবীর উপর নাযিল হয়েছে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কোরআন। আল্লাহ যত বড় তাঁর কালাম ততো বড়। আল্লাহ তাআলা যত মহান তাঁর কালাম ততো মহান। আল্লাহ তাআলা যত পবিত্র তাঁর কালাম কোরআনও ততো পবিত্র। আল্লাহ তাআলা যেমন অনাদী, অনন্ত, অসীম তাঁর কালাম আল-কোরআনও তেমনি অনাদী, অনন্ত, অসীম।

এই কোরআনে রমজান নিয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামীন কি বলেছেন তা জেনে নিন-

২. সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহ-সচেতন থাকতে পারো। ১৮৪. রোজা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনের জন্যে। কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময়ে সমসংখ্যক দিন রোজা রাখবে। আর রোজা রাখা যাদের জন্যে খুব কষ্টকর, তাদের সামর্থ্য থাকলে ‘ফিদিয়া’ (বিনিময়) অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করবে। আর যদি কেউ আনন্দিতচিত্তে আরো বেশি সৎকর্ম (বেশি সংখ্যক অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান) করে, তবে তা তার জন্যে অতিরিক্ত কল্যাণ বয়ে আনবে। তবে রোজা রাখা তোমাদের জন্যে সবচেয়ে বেশি কল্যাণের, যদি তোমরা জানতে!’

২. সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫

‘রমজান মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে। আর কোরআন হচ্ছে মানুষের জন্যে সঠিক জীবনদৃষ্টি ও সত্যপথের দিশারি এবং ন্যায়-অন্যায়, সত্য ও মিথ্যা নিরূপণের নিরঙ্কুশ মানদণ্ড। অতএব এখন থেকে যারাই এ মাস পাবে, তাদের জন্যে পুরো মাস রোজা রাখা অবশ্য কর্তব্য। তবে যদি কেউ অসুস্থ বা সফরে থাকে, তবে সে অন্য সময়ে সমসংখ্যক দিন রোজা রাখবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে বিষয়টি সহজ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোনো কঠোরতা আরোপ করেন নি। কারণ তিনি চান, তোমরা রোজার নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করো, সত্যপথ প্রদর্শনের জন্যে স্রষ্টার মহিমা বর্ণনা করো, যেন তোমরা শোকরগোজার হতে পারো।’

২. সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৭

‘রোজার রাতে তোমাদের জন্যে স্ত্রীসহবাস বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক আর তোমরাও তাদের পোশাক। আল্লাহ ভালো করেই জানেন যে, তোমরা নিজেদের বৈধ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছ। তাই তিনি দয়া করে তোমাদের এই অতিরিক্ত কঠোরতা লাঘব করেছেন। এখন তোমরা স্বামী-স্ত্রী রাতে একত্রে ঘুমাও ও আনন্দিত হও। রাতের আঁধার ভেদ করে প্রভাতের শুভ্র আভা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করো। আর পুনরায় রাত না আসা পর্যন্ত রোজা রাখো। তবে মসজিদে এতেকাফে (অর্থাৎ সাময়িকভাবে সংসার বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রার্থনা ও ধ্যানে নিমগ্ন) থাকাকালীন স্ত্রীসহবাস করবে না। এই হচ্ছে আল্লাহর সুস্পষ্ট সীমারেখা। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বিধিমালা সহজ সুন্দর করে বয়ান করেন, যাতে তোমরা আল্লাহ-সচেতন থাকতে পারো।’

৫৮. সূরা মুজদালা, আয়াত ৩

‘অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ ‘আমার মা যেমন আমার জন্যে হারাম, তেমনি তুমিও আমার জন্যে হারাম’ বলার পর তার উক্তি প্রত্যাহার করলে স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগে সে একজন দাসকে মুক্তি দেবে। প্রায়শ্চিত্ত হিসেবেই তোমাদের এটি করতে হবে। তোমরা যা করো আল্লাহ সে-সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। ৪. কিন্তু যার এ সামর্থ্য নেই তার প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে, স্ত্রীকে স্পর্শ করার পূর্বে টানা দুমাস রোজা রাখা। যে রোজা রাখতে অক্ষম, সে ৬০ জন গরিবকে একবেলা খাওয়াবে। এর মাধ্যমে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটাবে। এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আর যারা সত্যকে অস্বীকার করবে, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’

৩৩. সূরা আহজাব, আয়াত ৩৫

‘নিশ্চয়ই সমর্পিত পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়ী পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনসংযমী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের জন্যে আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।’

৬৬. সূরা তাহরিম, আয়াত ৫

‘(হে নবীর স্ত্রীরা!) নবী যদি তোমাদের সবাইকে তালাক দেয়, তবে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে হয়তো তোমাদের চেয়েও ভালো স্ত্রী তাকে দেবেন—যারা কুমারী হোক বা পূর্বে বিবাহিতা হোক, তারা হবে সমর্পিত, বিশ্বাসী, তওবাকারী, ইবাদতকারী ও রোজা পালনকারী।’

২. সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৬

‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাহ পূর্ণ করো। কিন্তু যদি তোমরা বাধা পাও তবে সহজলভ্য কোরবানি করো। আর কোরবানি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত মস্তক মুণ্ডন কোরো না। কিন্তু অসুস্থতা বা মাথায় কোনো রোগের কারণে আগেই মস্তক মুণ্ডন করে ফেললে ‘ফিদিয়া’ বা প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে রোজা রাখবে, কোরবানি বা সদকা দেবে। নিরাপদ পরিস্থিতিতে কেউ হজের আগে ওমরাহ করে উপকৃত হতে চাইলে সে সহজলভ্য কোরবানি করবে। কিন্তু যদি কেউ কোরবানির কোনো পশু না পায়, তবে সে হজের সময় তিন দিন ও ঘরে ফিরে সাত দিন, এভাবে মোট ১০ দিন রোজা রাখবে। মসজিদুল হারামের কাছে পরিবার-পরিজনসহ বাস করে না এমন লোকদের জন্যে এ-নিয়ম প্রযোজ্য। অতএব হে মানুষ! আল্লাহ-সচেতন হও। (আল্লাহর ধর্মবিধান লঙ্ঘন হতে দূরে থাকো।) জেনে রাখো, আল্লাহ মন্দ কাজের শাস্তিদানে কঠোর।’

৫. সূরা মায়েদা, আয়াত ৯৫

‘হে বিশ্বাসীগণ! এহরাম বাঁধা অবস্থায় শিকার কোরো না। তোমাদের কেউ ইচ্ছা করে শিকার করলে সেই জন্তুর সমপর্যায়ের গৃহপালিত জন্তু বদলা হিসেবে কোরবানির জন্যে কাবায় পাঠাতে হবে। আর এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। অথবা এর কাফফারা হবে কয়েকজন দরিদ্রকে অন্নদান বা সমপরিমাণ রোজা রাখা। এটি তার কৃতকর্মের ফল। অবশ্য অতীতে যা-কিছু হয়েছে আল্লাহ তা ক্ষমা করেছেন। কিন্তু কেউ ভবিষ্যতে এ অপরাধ করলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, কঠোর শাস্তিদাতা।’

৫. সূরা মায়েদা, আয়াত ৮৯

‘অর্থহীন শপথের জন্যে আল্লাহ কাউকে পাকড়াও করেন না। কিন্তু স্বেচ্ছায় শপথ করে তা ভঙ্গ করলে তিনি অবশ্যই তোমাদের দায়ী করবেন। এ ধরনের শপথ ভঙ্গের কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে : ১০ জন গরিবকে মধ্যমমানের অন্নদান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদের খাইয়ে থাকো অথবা তাদের পরিধানের কাপড় দান বা একজন দাসকে মুক্তি দেয়া। যার এই সামর্থ্য নেই সে তিন দিন রোজা রাখবে। এটাই তোমাদের শপথভঙ্গের প্রায়শ্চিত্ত। অতএব তোমরা সবসময় শপথ রক্ষা করে চলবে। এভাবে আল্লাহ তাঁর বিধানকে সুস্পষ্টরূপে বয়ান করেন, যাতে তোমরা শোকরগোজার হতে পারো।’

৪. সূরা নিসা, আয়াত ৯২

‘ভুলক্রমে ছাড়া একজন বিশ্বাসী আরেকজন বিশ্বাসীকে কখনো হত্যা করতে পারে না। যদি কোনো বিশ্বাসী ভুলক্রমে অপর বিশ্বাসীকে হত্যা করে তবে ‘কাফফারা’ হিসেবে একজন বিশ্বাসী ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দেবে এবং নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী ক্ষমা না করলে ‘রক্তপণ’ আদায় করবে। কিন্তু যদি নিহত বিশ্বাসী তোমাদের শত্রু গোত্রভুক্ত হয়, তবে ‘কাফফারা’ হিসেবে শুধু একজন বিশ্বাসী ক্রীতদাসকে মুক্তি দেবে। আবার সে যদি তোমাদের সাথে শান্তিচুক্তিবদ্ধ কোনো গোত্রের লোক হয়, তবে ক্রীতদাস মুক্তির পাশাপাশি উত্তরাধিকারীদের ‘রক্তপণ’ দিতে হবে। আর যার কোনো সঙ্গতি নেই, সে টানা দুমাস রোজা রাখবে। তওবার জন্যে এ হচ্ছে আল্লাহর বিধান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি