আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে চায় সৌরভ
প্রকাশিত : ২৩:৫৩, ২১ মে ২০১৮ | আপডেট: ১০:১৭, ২৫ জুলাই ২০১৮
মানুষের পছন্দের খাবারের তালিকায় কতো কিছুই না থাকে। বিশেষ করে শিশুদের। অনেক কিছু আবদার। কিন্তু ৬ বছরের শিশু সৌরভ চায় শুধু ভাত আর আলু ভর্তা। দুই পা প্রায় হারাতে বসা আর হাসপাতালের মেঝে শুয়ে থাকা সৌরভের চাহিদা শুধু এটুকুই।
মাত্র চার বছর বয়সে বাবা ও মা দুইজনকেই হারায় সৌরভ। এরপর বেড়ে উঠতে থাকেন ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে। কিছুদিনের জন্য তাকে দত্তক নেয় একটি নিঃসন্তান পরিবার। তবে সেই দম্পতিদের সন্তান হওয়ায় সৌরভের স্থান হয় আবারও কমলাপুর রেলস্টেশনে।
স্টেশনে মাল টানার কাজ শুরু করে সৌরভ। এক পর্যায়ে জড়িয়ে পরে মাদক সেবনে। এরপরেও সবকিছু মোটামুটি চলছিল। কিন্তু হঠাতই সবকিছু থেমে যায় সৌরভের। ট্রেনে আঘাত পেয়ে দুই পা হারানোর পথে সে।
রেল পুলিশের সহায়তায় সৌরভের জায়গা হয় ঢাকার পনংু হাসপাতালে। তবে অযত্ন অবহেলায় আর অনেকটা বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে সৌরভের। দেখার মতো কাছের মানুষ কেউ নেই। নীলা, সামিয়া, মহান, জয়, জনি এবং বিপ্লবের মতো কিছু স্বেচ্ছাসেবকই এখন তার আপনজন, দেখভালকারী।
গত রোববার রাতে রক্ত দিতে গিয়ে সৌরভের সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। স্বেচ্ছাসেবক নীলা সৌরভের কাছে জানতে চায় আগামীকাল (সোমবার) সকালে কী খাবে সৌরভ। প্রথম বলে কিছু না। এক পর্যায়ে বলে, “আলু ভর্তা দিয়ে ভাত”।
সৌরভের জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা সামিয়া সুলতানা জানান, “গত প্রায় চার মাসের মতো সময় ধরে এই হাসপাতালে আছে সৌরভ। তাকে দেখার মতো কেউ ছিল না। হাসপাতালে অন্য রোগীরা কখনও কিছু খাবার বা টাকা দিত সৌরভকে। হাসপাতালের আয়া বা অন্য রোগীর সঙ্গে লোকদের সেই টাকা দিয়ে কয়েকবার খাবার এনে খেয়েছে সৌরভ। কখনও কখনও কেউ টাকা নিয়ে গেলেও সেই খাবার নিয়ে আসেনি কেউ।”
সামিয়া জানায়, হাসপাতালে সৌরভকে যারা দেখাশোনা করছেন তাদের মধ্যে আছে নীলা ইসলাম, মহান, জয়, জনি এবং সামিয়া নিজে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ থেকে সৌরভকে দেখভাল করছেন বিপ্লব। সামিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ‘ড্যু সামথিং এক্সেপশাল’ এর স্বেচ্ছাসেবক।
সামিয়া-নীলা জয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি খরচে চিকিৎসা চলছে সৌরভের। তবে সেই চিকিৎসা শুধু নামেই। চার মাস যাবত একই মেঝেতে পরে আছে সে। এতদিনেও পায়নি হাসপাতালের বেড। সৌরভের চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে বলে তাদের অভিযোগ। গত চারমাসের অবহেলায় ইতোমধ্যে সৌরভের পায়ে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
মাঝে মাঝে রাতে ব্যথায় কাতরে ওঠে সৌরভ। আজ সোমবার সৌরভের পায় ড্রেসিং করার কথা থাকলেও তা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করেনি রেড ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
আগামীকাল (মঙ্গলবার) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সৌরভের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এই স্বেচ্ছাসেবকেরা। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হলে বেসরকারি হাসপাতালে সৌরভের চিকিৎসার চিন্তা ভাবনা আছে। তবে সেক্ষেত্রে দরকার হবে মোটা অংকের টাকা।
সৌরভ এই প্রতিবেদককে জানায়, সুস্থ হয়ে নতুন জামা পরে স্কুলে যেতে চায় সৌরভ। আর পার্কে পার্কে ঘুরে বেড়াতে চায় পায়ের ব্যথায় কাতর এই ছেলেটি।
এসএইচ/