ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

আলোর দিশারী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা

সুদীপ চন্দ্র হালদার

প্রকাশিত : ১০:৫৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ২৩:১৬, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, ‘..........সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এই অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কি সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্দ্ধে থেকে আমাদের সবাইকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে।’ 

বঙ্গবন্ধু অসীম ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশকে সার্বিকভাবে বিকশিত করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার পর্যাপ্ত সময় পাননি। তাঁর অপূর্ণ সেই কাজটি করে চলেছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান শুদ্ধি অভিযান বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ের ঈস্পিত লক্ষ্যে পৌঁছানোরই ধারাবাহিকতা।

আলোর পথের দিশারী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১৮ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহার ঘোষণাকালে বৃহৎ হৃদয়ের অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি নিজে এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোন ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে সেগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য দেশবাসী আপনাদের প্রতি সর্নিবন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরো সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করব।’ নির্বাচনী ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ছিল অন্যতম।

বঙ্গকন্যা আরও ঘোষণা করেছিলেন, ‘আর সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও সমৃদ্ধির সব সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে তখনই, যখন জবাবদিহিমূলক সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এ জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ: এই উপশিরোনামে বলা হয়েছে-দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্ম পরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে।’

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার ইশতেহারের ওপর বাংলাদেশের জনগণ আস্থা রেখেছেন; বিপুল ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করেছেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’

বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মর্যাদাকে উন্নীত করেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। আজ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের উপরে, জিডিপি প্রায় দুই অঙ্ক ছুই ছুট ধরেছে, রেমিট্যান্স প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে গত এক বছরে ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো সেরা ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। রপ্তানি বৃদ্ধিতে ৩৫টি পণ্যে গত অর্থ বছরে ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।

এই নগদ সহায়তা এবার পাবে মোট ৩৭টি পণ্য ও খাত। দক্ষিণবঙ্গ তথা সারা বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে; ঢাকাতে মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে চলেছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। ঢাকার চারপাশে আউটার রিং রোড নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ক উপশহর গুলোকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করে যানজট হ্রাসে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

সব মিলিয়ে, সার্বিকভাবে বিকশিত হয়ে ঈর্ষনীয় উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পথে এখন সবচেয়ে বড় অন্তরায় দুর্নীতির মহাচক্র, এই চক্রের লোকজন নিজ মহিমায় প্রায় দানব প্রকৃতির! দুর্নীতির কারণে রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলেও কমপক্ষে প্রতিবছর ১৮ হাজার কোটি টাকা জিডিপিতে যোগ হতে পারছে না।

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে তাঁর দেওয়া কথা রাখতে বদ্ধপরিকর। দুর্নীতিসহ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে তিনি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান এই অভিযানে তিনি কারও কাছে মাথানত করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

দুর্নীতির বিষয়টি আমাদের সমাজের অনেকে গভীরে প্রোথিত, জুড়ে আছে মানসিকতাতেও। ক্ষমতাকে সমাজ সেবার কাজে প্রয়োগ না করে অর্থ-সম্পদ-টাকশালে পরিণত করার মানসিকতার লোক রয়েছে। হালাল-হারামের অনেক উপদেশ প্রতিনিয়ত শুনতে পেলেও উপার্জনের ক্ষেত্রে সততা তথা হালাল চর্চার নজির কম। দুর্নীতির সাথে শুধু একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকেরাই নয়, বরং সব পেশার লোকদেরই কম-বেশি সংযোগ রয়েছে। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা নিজ দলের মধ্য থেকেই অতি এই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। বঙ্গকন্যা অতি সম্প্রতি বলেছেন, ‘কেউ যদি কোন অপরাধ করে, সে কোন দল, কী করে না করে, আমি কিন্তু সেটা দেখিনা। আমার কাছে অপরাধী অপরাধীই।’

বঙ্গকন্যার নেতৃত্বে রাষ্ট্রশক্তি যদি দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে তাসের ঘরের মতোই ভেঙ্গে পড়বে দুর্নীতিবাজদের আখড়া। তাই এটিকে সহযোগিতা করা সকল দেশপ্রেমিক সৎ নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি আদর্শ ও কল্যাণবাদী রাষ্ট্র গঠনে সকল নাগরিকের আজ এগিয়ে আসতে হবে, বঙ্গকন্যার নেতৃত্বে এই অভিযানকে সফল করতে হবে।

বিভিন্ন সভা-সেমিনার করে এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে দিতে হবে; প্ল্যাকার্ড হাতে আনন্দ মিছিল করতে হবে। বাংলাদেশে দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা বেশ হলেও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আর তাদের আজ এগিয়ে আসতে হবে সৎ সাহস নিয়ে।

দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিবাজদের কারণে আদর্শিক রাজনীতি থেকে যারা ছিটকে পড়েছেন, দূরে সরে গেছেন কিংবা অনাদরে কোনও রকমে অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছেন, বঙ্গকন্যার নেতৃত্বে এই শুদ্ধি অভিযান সফল হলে তারাই আবার রাজনীতিতে স্ব-সম্মানে ফিরে আসবেন। তাই, এই শ্রেণির আদর্শিক রাজনীতিবিদদেরও উচিৎ চলমান এই শুদ্ধি অভিযানকে সফল হতে সহায়তা করা। আনন্দের সাথে এগিয়ে আসা।

পবিত্র সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। মেজর জিয়া বলেছিল, ‘I will make politics difficult for politicians’ সেই থেকে শুরু হওয়া দুর্বত্তায়ন ও দুর্নীতি আজ দানবাকৃতি পেয়েছে। এই সব দুর্বৃত্তরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করতেন। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা এই সব দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে দেখাচ্ছেন যে আইন সকলের জন্য সমান এবং উনি এটা করার সৎসাহস দেখাতে পেরেছেন এই জন্য যে তিনি শতভাগ সৎ।

বঙ্গবন্ধু দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করার পর দুর্নীতি বাজদের একটা বড় অংশই নানা অসত্য তথ্য অপপ্রচার চালিয়ে জনমনকে বিষাক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট শারীরিকভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। সেই সময়ের তুলনার এখন দুর্নীতিবাজদের সংখ্যাও কয়েকগুণ বেশি, প্রক্রিয়াও জটিলতর।

তাই চলমান এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে সকলের চোখ কান খোলা রেখে বঙ্গকন্যাকে সহায়তা করতে হবে; পাশে থাকতে হবে তাজউদ্দিন আহম্মেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামদের মত মানসিকতা নিয়ে; অবশ্যই খন্দকার মোস্তাক, তাহের ঠাকুরদের মত করে নয়। আলোর পথের দিশারী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর এই সোনার বাংলায়, এটাই আপামর জনতা বিশ্বাস করে।
 
রাজনীতিবিদ
ইমেইল: sudipnipan@yahoo.com

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি