ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আল্লামা ইকবালের ৮ সেরা উক্তি

প্রকাশিত : ১৭:৪৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২০:২৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

আল্লামা ইকবাল একাধারে একজন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও মনীষী। আধুনিক বিশ্বে ইসলামের মর্মবাণীর সার্থক ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। সমাজ, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান, ধর্ম, শিল্পবিজ্ঞানসহ নানা ক্ষেত্রে তার রয়েছে অবদান। এসব ক্ষেত্রে নিজস্ব চিন্তা উপদেশ ও দর্শন ছিল এই মহাকবির, যেগুলো তাকে নিয়ে গেছে খ্যাতির আসনে। দিয়েছে অনন্য সম্মান।

১৮৭৭ সারের ৯ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম হয় আল্লামা মোহাম্মদ ইকবালের। তার বাবার নাম শায়খ নুর মুহাম্মদ এবং মায়ের নাম ইমাম বিবি। বাবা-মা আদর করে তার নাম রাখেন ইকবাল-যার অর্থ সৌভাগ্য।

পারিবারিক পরিবেশে পড়া-লেখা শেষ করার পর স্থানীয় মক্তবে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়। জন্মের পর পরই তার বাবা তাকে কোলে নিয়ে দোয়া করেছিলেন যে, ‘বড় হয়ে দ্বীনের খেদমত করলে বেঁচে থাক, না হয় এখনি মরে যাও’। সে দোয়ার আলোকেই ইকবালের ধনাঢ্য পিতা তার পড়াশোনার আয়োজন করেন। ১৮৯৭ সালে আরবী ও ইংরেজিতে সারা পাঞ্জাবে প্রথম স্থান ও দু’টি স্বর্ণ পদক লাভ করে বি.এ. এবং ১৮৯৯ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্বর্ণ পদক লাভ করে এম.এ. ডিগ্রী কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেন। লাহোর ওরিয়েন্টাল করেজে ইতিহাস ও দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপনায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার কর্ম জীবন শুরু হয়।  

পরে তিনি লাহোর ইসলামিয়া কলেজ ও লাহোর সরকারী কলেজে ইংরেজি ও দর্শনের খন্ডকালীন অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯০৫ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলাত যান । বিলাতে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণ শেষে জার্মানীর মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯০৭ সালে “The Development of Metaphysics in Persia” বিষয়ের উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২৬ সালে তিনি পাঞ্জাবি আইন পরিষেদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ধর্ম প্রবর্তকদের বিরুদ্ধে কৃৎসাপূর্ণ প্রচারণা বন্ধে প্রস্তাব পাস করেন।

তারপর তিনি লন্ডন থেকে ডিষ্টিংসান সহকারে ব্যারিষ্টারী পাস করেন। সেখান থাকতেই তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। এভাবেই ইকবালের মনে প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সাক্ষাৎ ঘটল এবং তার কাব্যে প্রাচ্যে ও প্রতীচ্যেরে এক অপূর্ব সম্মিলন ঘটল। এতে করে ইকবাল কাব্যে-প্রতিভা ও অনুপম সম্মিলন ঘটল। ইকবালের কাব্য-প্রতিভা ও অনুপম রসাবেশ সহজেই রস পিপাসুদের আকৃষ্ট করে। জড়তা, ক্লীবতা ও দূর্গতির গহ্বরে নিপাতিত মাঠ-ঘাটের পথ প্রান্তরের মানুষ খুঁজে পেল অভূতপূর্ব শিহরণ ও কর্মচাঞ্চল্য। সূফী কবি মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমী ছিলেন ইকবালের কাব্যপথের সর্বশ্রেষ্ঠ আলোক বর্তিকা।

সাধনা মুখর এক জীবন দার্শনিক ইকবাল কাব্য কথায় বিভিন্ন গ্রন্থে কবিতায় আল্লাহর প্রকৃতি, ভাগ্য-জীবন, আত্মতত্ত্ব, রাজনীতি, শিক্ষা, ধর্মতত্ত্ব, নীতিবিদ্যা, সুফীতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়াবলী নিয়ে তিনি লিখেছেন। সেগুলোতে তার দর্শন ফুটে উঠে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-

*মার্কসীয় সমাজতন্ত্র বাদের বৈষয়িক সাম্য ও পাশ্চাত্য সম্রাজ্যবাদের কাগজী গণতন্ত্র উভয়ই তার সমালোচনার কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘সাম্রাজ্যবাদের দানব গণতন্ত্রের মুখোশ পরে নৃত্য করে। আর তুমি ভাব যে স্বাধীনতার পরীরা সব নাচছে।’

* রাজনীতি নিয়ে ইকবালের দর্শন হচ্ছে- ‘রাজনীতির মূল রয়েছে মানুষের আত্মিক জীবনের গভীরে’।

*ধর্ম নিয়ে ইকবালের দর্শন হচ্ছে- ‘ধর্ম কোনো মতবাদ নয়, কোনো পৌরহিত্য নয়, কোনো অনুষ্ঠান নয়, বরং ধর্ম এমন একটি জীবনবিধান যা মানুষকে বিজ্ঞানের যুগেও তার দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করে এবং তার প্রতীতিকে দৃঢ় সক্ষম করে দেয়, যার ফলে সে সত্যোপলব্ধিতে সক্ষম হয়ে উঠে।’ তিনি আরও বলেন, ধর্ম পদার্থ বিদ্যাও নয়, রসায়ন শাস্ত্রেও নয় যে, ল্যবরেটরীতে তাকে Experiment ও পরীক্ষা করে বুঝতে হবে। ইকবালের ভাষায়, “Religion aims at realing the realsignigicance of a special variety of woman experience”.

*দেশপ্রেম নিয়ে ইকবালের উল্লেখযোগ্য উক্তি হচ্ছে- ‘আমার দৃষ্টিতে দেশ প্রেম এবং দেশ পূজা এক কথা নয়।’

* জাতপাত, বৈষম্য নিয়েও ইকবালের ছিল নিজস্ব ভাবনা। জাতিতে জাতিতে, বর্ণে বর্ণে, গোত্রে গোত্রে সংঘাতের ফলে মানব জাতি আজ যেভাবে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে-সেজন্য ইকবাল সব ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে এক বিশ্বজনীন জীবনাদর্শের প্রয়োজন অনুভব করেছেন।তিনি বলেন- ‘আরব আমার ভারত আমার চীন গো আমার নহে গো পর বিশ্ব জোড়া মুসলিম আমি সারাটি জাহান বেঁধেছি ঘর।’

*শিল্প বিজ্ঞান সম্পর্কে ইকবালের ধ্যান ধারণা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি বলেন, ‘নীতিবোধ ও সুষ্ঠু জীবনবোধ ছাড়া শিল্প বিজ্ঞান সব ব্যর্থ। সত্যের মূর্ত প্রতীক প্রতিচ্ছবি হল শিল্প বিজ্ঞান।’

*সমাজ সম্পর্কে ইকবাল বলেন, ‘আল্লাহর একাত্ব, সার্বভৌমত্ব ও মানব ভ্রাতৃত্বই হল ইসলামী সমাজের মূল বিষয়। সমাজ ছাড়া ব্যক্তির চিহ্ণ নেই। সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা ব্যক্তিকে সুসংহত করে তোলে। সমাজ জীবন মানুষের পক্ষে অপরিহার্য। বুদ্ধি, আবেগ ও উজ্জ্বল্য প্রশংসার। কিন্তু কেবল মাত্র বুদ্ধিমত্তা যথাযথ নয়। প্রেম ও নীতির যাদস্পর্শ ছাড়া বুদ্ধি নিরর্থক ।ঈমান, চিন্তা ও আবিষ্কার সুন্দর জীবনের তিনটি নক্ষত্র।

*রাষ্ট্র সম্পর্কে ইকবালের বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট। তিনি বলেন, “The state According to Islam, in only an ebbort to realize the Spiritual in a human organization, But in this sense all state not based on mere domination and aiming at the realization of ideal principles, is theoretic”.

আল্লামা ইকবালের দর্শনের মূল কথা হচ্ছে খুদী বা আত্মা, এই খুদী বা আত্মার ধারণার উপর ভিত্তি করেই তার দর্শনের ভিত্তি স্থাপিত্ হয়েছে। তার মতে খুদী বাস্তব সত্তা এবং নিজের শক্তিতেই এই সত্তা অস্তিত্বশীল। অতিন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে আমরা এই সত্তাকে জানতে পারি।

তিনি বলেন-‘খুদীকে এইরূপ উন্নত কর যে, তোমার প্রতিটি ভাগ্যলিপি লিখার পূর্বে খোদা যেন শুধান, কি তোমরা অভিপ্রায়’।

 তথ্যসূত্র :

*আল্লামা ইকবাল সংসদ পত্রিকা, জুলাই-ডিসেম্বর, ৯৪ ইং ঢাকা।

*ইকবাল প্রতিভা-গোলাম রসুল, ই:ফা: বাংলাদেশ।

*ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তা ধারা-মুহাম্মদ আব্দুর রহীম ই:ফা:বাংলাদশে।

*মুসলিম ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন-ড: আমিনুল ইসলাম, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।

*মুসলিম দর্শনের ভূমিকা-ড. রশীদুল আলম ।

*মহাকবি ইকবাল-ফাহমিদুর রহমান।

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি