ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের আবাসযোগ্য করেছেন

প্রকাশিত : ১৬:২৬, ৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৬:৪২, ৭ মে ২০১৯

আমরা যদি সারাবিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাব, ভয়ে কুঁচকে যাব। যতটুকু জানা গেছে, যদি আলোর গতিতে কেউ যাত্রা শুরু করে তাহলে মহাবিশ্বের একপ্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় লাগবে (মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়ে চলেছে) ৯৩০০ কোটি আলোক বছর। শুধু আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করি সেই গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে ১,০০০০০ আলোকবর্ষ। সারাবিশ্বে আমাদের ছায়াপথের মতো গ্যালাক্সির সংখ্যা প্রায় ১০,০০০ কোটি।

একবারে পাশের গ্যালাক্সি থেকে আমাদের গ্যালাক্সির দূরত্ব ২৫,০০০ আলোকবর্ষ। আর সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব মাত্র ৮.৩ আলোক মিনিট। সূর্য-পৃথিবী-চাঁদ নিয়ে আমাদের জগৎ। অর্থাৎ আমাদের সৌরজগৎ হাজার কোটি আলোকবর্ষের (প্রসারমান) মহাবিশ্বের ব্যাপ্তির তুলনায় মাত্র ৮.৩ মিনিটের পরিসর মাত্র। এ যেন অন্তহীন সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির চেয়ে ক্ষুদ্র এক অস্তিত্ব।

আর এই পৃথিবী এত ক্ষুদ্র যে আলোর গতিতে তার একপ্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় লাগে মাত্র এক সেকেন্ডের আটভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ ব্যাপ্তির দিক দিয়ে ৯৩০০ কোটি আলোকবর্ষব্যাপী মহাবিশ্বে আমাদের এই পৃথিবী এক সেকেন্ডের আটভাগের এক ভাগ অস্তিত্ব মাত্র। মহাবিশ্বের যাত্রা ১৪০০ কোটি বছর আগে শুরু হলেও মানবজাতির আবির্ভাব মাত্র দুই লক্ষ বছরের। অর্থাৎ মহাবিশ্বের স্থান ও কালের ব্যাপ্তির তুলনায় পৃথিবীর ও পৃথিবীতে মানব সভ্যতার অবস্থান ক্ষণিকের স্পন্দনমাত্র। স্থানকালের ব্যাপ্তিতে মানবজাতির বিন্দু সম অস্তিত্ব হতাশা ছাড়া আর কিছুই উপহার দেয় না। কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যে সত্যটি আমাদের সামনে চলে আসে তা হলো এই সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির বিন্দুসম অস্তিত্বকে করার জন্য সুনিপুণভাবে মহাবিশ্বকে গড়ে তুলেছেন ও বিন্যস্ত করেছেন। পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করার জন্য গাণিতিক সূক্ষ্মতায় সবকিছু সাজিয়েছেন, এমনকি প্রয়োজনে প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন।

তাই এই পৃথিবী ও মানুষ ফেলনা নয় বরং এই বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি। যত বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টি নিয়ে মানুষ পৃথিবীর দিকে তাকাবে ততো অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, এই পৃথিবীর আয়তন, ঘূর্ণন, সূর্য থেকে দূরত্ব, অক্সিজেনের সম্ভার, বায়ুমণ্ডল, পানির সরবরাহ, বৃষ্টির করুণাধারা, উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্যময় সমাবেশ-সবই পরম করুণাময় অপূর্ব দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং প্রকৃতিকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন, যাতে মানুষ স্রষ্টার করুণাকে অনুভব করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়, সমর্পিত হয়। আল্লাহ তার এই করুণার কথা ঘোষণা করেছেন।

‌‌`বলো, কে পৃথিবীকে স্থিতি ও বসবাসের জায়গা বানিয়েছেন, এর বুকে নদ-নদী প্রবহমান করেছেন এবং তাকে সুদৃঢ় থাকার জন্য পাহাড় পর্বতের স্তম্ভ গেড়ে দিয়েছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে সৃষ্টি করেছেন অন্তরাল। আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন উপাস্য আছে কি! তবুও তাদের অনেকেই তা জানে না।`  (সূরা নামল ২৭/৬১)

`তোমরা কি দেখ না, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন, মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে। তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথপ্রদর্শক, না আছে জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ।` (সূরা লুকমান ৩১/২০)

আল্লাহর ঘোষণা মানবজাতিকে চরম শূন্যতা, নৈরাজ্য ও অস্তিত্বহীনতা থেকে তুলে এনে বিশ্বের কেন্দ্রে স্থাপন করেছে। মানুষ মহাবিশ্বের প্রান্তে অবস্থিত অর্থহীন বিন্দু নয় বরং এক গৌরবময় অস্তিত্ব। সারা বিশ্বব্যাপী স্রষ্টার পরিকল্পনা, পৃথিবীর আবাসযোগ্যতা, সৃষ্টির প্রতিটি কণা ঘোষণা করছে যে এক করুণাময় স্রষ্টা আছেন। তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে অবসরে বসে নেই বরং প্রতিনিয়ত তার সৃষ্টিকে বিকাশ ও লালন করে চলেছেন। আর তিনি মহাবিশ্বের সবকিছুই নিয়োজিত করেছেন মানুষের কল্যাণে। কেননা মানুষ আকারে ক্ষুদ্র হতে পারে কিন্তু সে যে স্রষ্টার প্রতিনিধি। মানুষ অস্তিত্বহীনতায় ধ্বংস হতে আসেনি বরং এসেছে পৃথিবীকে জয় করতে।

ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরীর শোকরিয়া : প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ থেকে নেয়া

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি