আশা ভোঁসলেকে স্বামী বের করে দিলে বরণ করে নেন রাহুল
প্রকাশিত : ১৯:৩৬, ২৮ জুন ২০২০ | আপডেট: ০০:৫১, ২৯ জুন ২০২০
প্রতি বছর ১৯৮০ সালের একটি দিনে ফিরে যান আশা ভোঁসলে। দিনটি হলো ২৭ জুন। সবার প্রিয় রাহুল দেব বর্মনের জন্মদিনে আশা স্মরণ করেন তাঁর আদরের ‘বাবস’-কে। ৮১ বছর আগে ১৯৩৯-এই দিনটিতে পঞ্চমের জন্মদিন হলেও’৮০ সাল তাঁকে নবজন্ম দিয়েছিল।
একদিন আশা গান রেকর্ডিং করতে এসেছেন শচীন দেব বর্মনের স্টুডিয়োতে। সেটা ১৯৫৬ সালের কথা। আশা ততদিনে ‘গুমরাহ’, ‘ওয়াক্ত’, ‘আদমি অউর ইনসান’, ‘হামরাজ’ ছবির গানের দৌলতে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। রাহুল দেব তখন বাবার সহকারী। কলেজে পড়াশুনা করছেন। রাহুল স্টুডিয়োর কালো কাচের বাইরে থেকে আশাকে দেখেই থমকে দাঁড়িয়েছিলেন। এই তাঁর স্বপ্নের সেই গায়িকা? অটোগ্রাফ নিতে হবে, একথা মনে হতেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গান শেষ হওয়ার পরে স্টুডিয়োর বাইরে আসতেই গায়িকার দিকে খাতা বাড়িয়েছিলেন ভবিষ্যতের ‘রকস্টার’ সুরকার আর ডি। সেই সই দেওয়া থেকে শুরু। রাহুলের সেদিনই কি মনে হয়েছিল, ‘ইয়ে লড়কি জারাসি দিওয়ানি লাগতি ।
আশার ‘অতীত’ ছিল। মাত্র ১৬ বছর বয়সে দিদি লতা মঙ্গেশকরের সেক্রেটারি গণপত রাও ভোঁসলেকে বিয়ে করেছিলেন। তারপর তিন ছেলেমেয়ের মা হয়েছেন। সংসারের চাহিদা মেটাতে না পারায় ছেলেমেয়ে-সহ আশাকে বাড়ি থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন গণপত।
পঞ্চমেরও অতীত অবশ্য ছিল। কলেজে পড়তে পড়তেই রীতা পটেলকে বিয়ে করেছিলেন। যিনি ছিলেন রাহুলের অন্ধ অনুরাগিনী। লোক মুখে শোনা যায়, রীতা নাকি বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে বিয়ে করেছিলেন পঞ্চমকে। বন্ধুদের বলেছিলেন, কিছুদিন তাঁর সঙ্গে মিশলেই আর ডি তাঁকে না বলতে পারবেন না। বাজি ধরে বিয়ে করা যায়, বিয়ে টেকানো যায় কি? যায় না বলেই ১৯৭০-এ (মতান্তরে ১৯৭১) বিয়ে ভেঙে গেল রাহুলের।
প্রথম দেখার পরে অবশ্য রাহুল-আশার দীর্ঘ দিন কোন দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। প্রায় ১০ বছর পরে ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছবির গান দিয়ে আবার দু’জনের দেখা। রাহুলের সুরে ‘আজা আজা’ এবং‘ও মেরি সোনা রে’র মতো সুপারহিট গান শ্রোতারা উপহার পেয়েছিলেন আশার থেকে। দুজনে এক সঙ্গে কাজ করতে থাকলেন। ভাল লাগাও বাড়তে থাকল। রাহুলকে ততদিনে আশা ‘বাবস’ নামে আদর করে ডাকেন। কিন্তু মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না কেউই। তার উপর তেতো অতীত সারাক্ষণ দগ্ধাচ্ছে আশাকে। না পারছেন গণপতকে ভুলতে, না পারছেন রাহুলকে সরাতে। তার থেকেও বড় কথা তিনি রাহুলের থেকে ছ’বছরের বড়! তাই রাহুল প্রেমে হাবুডুবু খেলে কী হবে, মা মীরা দেব বর্মনের এই সম্পর্কেই ঘোর আপত্তি।
মিরাকল ঘটল ১৯৭৫-এ। ‘দিওয়ার’ ছবির সুরকার আর ডি। তাঁর সুরে স্টুডিয়োতে রেকর্ডিং হচ্ছে ‘কহে দু তুমহে ইয়া চুপ রহুঁ’ গান। রেকর্ডিং শেষ। রুম থেকে বেরোতেই আশার মুখোমুখি পঞ্চম। চোখে প্রশ্ন, এই গানের পরেও মুখে কিছু বলতে হবে? আশার পক্ষে আর ফেরানো সম্ভব হয়নি রাহুলকে। আশা তার নিজের অতীত জানিয়েছিলেন। সব শুনে সুরকার কিছুক্ষণ চুপ করেছিলেন। তারপর তাঁর স্বপ্নের গায়িকার হাত ধরে বলেছিলেন, ‘‘ভাল-মন্দ সব নিয়ে তোমায় গ্রহণ করব। কোনওদিন একটা প্রশ্ন করব না। আর না বোল না।’’
তারও পাঁচ বছর পরে। ১৯৮০-তে বিয়ে হল সুর-তাল-ছন্দ আশ্রয় করে বেঁচে থাকা দুই শিল্পীর। রাহুল-আশা গানের দুনিয়ায় প্রথম তারকা দম্পতি, ১৪ বছর যাঁরা একসঙ্গে বাঁধা ছিলেন গান দিয়ে।
রাহুল এই শপথ করলেও গায়িকার মনে প্রচণ্ড ভয়। গণপতের থেকে পাওয়া অসম্মান কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারেন না। তার উপর বছর ছ’য়েকের বড় তিনি রাহুলের থেকে। শাশুড়ি মা তাই খুশি নন এই বিয়েতে। বিয়ের দিনও নিন্দুকে মুখ মচকেছে, ‘‘তিন সন্তানের মাকে বিয়ে করল রাহুল! শেষ পর্যন্ত টিকলে হয়।’’ফুলশয্যায় খুব ভয়ে ভয়ে সেকথা আদরের ‘বাবস’কে জানিয়ে আশার প্রশ্ন ছিল, ‘‘সবাই যা বলছে তেমনটা হবে না তো? তুমিও আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো?’’
রাহুল সেদিন নতুন বউয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে আশ্বস্ত করেছিলেন কী বলে? ‘দুনিয়া ছাড়লেও আমি তোমায় কোনওদিন ছেড়ে যাব না...ইয়ে ওয়াদা রহা’...।
এসসিএ/এসি