ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

আশায় বুক বেঁধেছেন আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা

মীর মো. শাহীন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত : ১৫:২৮, ৮ জানুয়ারি ২০২০

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা গত কয়েক বছর ধরে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেয়ায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রফতানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের পণ্য রফতানি কার্যক্রম।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের সরাসরি রেলপথ যোগাযোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজেদের দেশের অন্য রাজ্য থেকে পণ্য সরবরাহ করতে থাকে আগরতলার ব্যবসায়ীরা। ফলে দিন দিন ধস নামতে থাকে আখাউড়া স্থলবন্দরের রফতানি বাণিজ্যে। তবে নতুন করে আবার আশায় বুক বেঁধেছেন স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। ভোজ্যতেল আর সিমেন্ট রফতানির মাধ্যমে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এই স্থলবন্দর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে একসময় প্রচুর পরিমাণ পণ্য আমদানি করত আগরতলার ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিনশো পণ্যবোঝাই ট্রাক ঢুকত আগরতলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল পাথর, সিমেন্ট, মাছ ও প্লাস্টিক পণ্য। এসব পণ্য আগরতলা থেকে পৌঁছে যেত সেভেন সিস্টারখ্যাত সাতটি অঙ্গরাজ্যে।

মূলত ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যগুলোর সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিই ছিল ভারতীয় ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসা। তবে গত কয়েক বছরে ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন পাথর এখন শিলং থেকে সংগ্রহ করছেন তারা। আর নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রায়ই বন্ধ করে দেন মাছ আমদানি। কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক আগরতলায় যাচ্ছে। রফতানি বাণিজ্যে ধস নামার কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের।

বন্দরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন ভারত থেকে প্রসাধনী ও মোটর যন্ত্রাংশের চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি নিতে। কিন্তু সেই চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি এখনও মেলেনি।

এদিকে, আমদানির অনুমতি না পেলেও ব্যবসায়ীদের মাঝে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে ভোজ্যতেল আর সিমেন্ট। গত কয়েক মাস আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভোজ্যতেল ও সিমেন্ট আমদানি বাড়িয়েছে আগরতলার ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন শতাধিক পণ্যবোঝাই ট্রাক আগরতলায় যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ভোজ্যতেলবাহী ট্রাক ৪০-৫০টি এবং সিমেন্টবোঝাই ট্রাক যাচ্ছে গড়ে ২০টি। তাই ভোজ্যতেল আর সিমেন্ট রফতানির মাধ্যমেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বন্দরটি আমদানি বাণিজ্যের জন্য পুরোপুরি প্রস্তত থাকায় চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মেসার্স ইমাম ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্বাস উদ্দিন ভূইয়া বলেন, আমাদের ব্যবসা এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। ভোজ্যতেল আর সিমেন্ট বেশি পরিমাণে নিচ্ছে ভারতীয়রা। তবে আমরা ভারতীয়দের কাছ থেকে পণ্য আমদানি না করায় বাণিজ্য একপক্ষের হয়ে গেছে। তাই পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছামতো সবকিছু করেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ভারত থেকে মাছের পোনা, ফলমূল, ফুলের ঝাড়ু, আগরবাতি, সাতকড়া, বীজ, কয়লা ও পাথরের মতো পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে। পাথর ও কয়লা আমরা নিজেরাই ভারতীয়দের দিচ্ছি। এগুলো আমদানি করে কি করব? আমরা প্রসাধনী ও মোটর যন্ত্রাংশের মতো চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি চাই।

আরেক ব্যবসায়ী মেসার্স ফারুক অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আমাদের যদি ভারত থেকে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হয় তাহলে বন্দরটা আবার আগের মতো চাঙা হবে। দুদেশের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারও লাভবান হবে। আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাজীব ভূইয়া বলেন, নভেম্বর মাস থেকে আমাদের রফতানি বাণিজ্য বেড়েছে। ভোজ্যতেল আর সিমেন্ট বেশি যাচ্ছে এখন। পাশাপাশি পাথর ও মাছের চাহিদাও কিছুটা বেড়েছে। তবে ভারত থেকে আমাদের যেসব পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে সেগুলোর চাহিদা নেই। এগুলো আমদানি করে ব্যবসায়ীদের কোনও লাভ হবে না। তাই আমরা চাই নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত সব ধরনের চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি যেন আমাদের দেয়া হয়।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই লাখ ১১ হাজার ৫১৭ টন ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই লাখ নয় হাজার ৯৬২ টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে (নভম্বের পর্যন্ত) ৪৬ হাজার ৩৩৬ টন পণ্য রফতানি হয়েছে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, এখন সিমেন্ট আর ভোজ্যতেল বেশি যাচ্ছে। এতে রফতানরি পরিমাণ বেড়েছে। আগে ৩২টি পণ্য আমদানির অনুমতি ছিল। নতুন করে আরও কয়েকটি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন ব্যবসায়ীরা যদি আমদানি শুরু করেন তাহলে বন্দরের ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো হবে।

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি