ই-কমার্সের নামে প্রতারণা থেকে বাঁচতে যা করবেন
প্রকাশিত : ২১:৫৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ২১:৫৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
ই-কমার্স ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার কথা আজ মঙ্গলবার জানিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। ঢাকা মহানগরের গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, বেশ কয়েকটি চক্র অনেকদিন ধরেই ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসার নামে মানুষজনকে ঠকিয়ে আসছে। তারা অভিযান চালিয়ে এরকম তিনটি গ্রুপকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানিয়েছেন, রবিবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
যেভাবে ই-কমার্সের নামে প্রতারণা
ঢাকার পুলিশ বলছে, এই চক্রের সদস্যরা ছদ্মনাম ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন নামের পাতা খোলে। এরপর এসব পাতায় ভালো মানের মোবাইল ফোন, জুতা, ঘড়ি, থ্রি-পিস, শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়।
সেসব বিজ্ঞাপন দেখে কেউ অর্ডার করলে, অর্ডার নিশ্চিত করার সময় একটি বুকিং মানি নেয়। এরপর নকল, ভাঙাচোরা, নষ্ট ও নিম্নমানের ব্যবহার অনুপযোগী সামগ্রী প্যাকিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। অনেক সময় তারা নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে নিম্নমানের কাপড়চোপড় কিনে সরবরাহ করে।
পুলিশ বলছে, তারা ফেসবুকে যেসব ভুয়া ই-কমার্স পাতা তৈরি করেছিল তার মধ্যে রয়েছে দারাজ অনলাইন, দারাজ অনলাইন ৭১, দারাজ অনলাইন শপ, দারাজ এক্সপ্রেস, দারাজ অনলাইন বিডি, ফ্যাশন জোন, গ্যালাক্সি ২৪, অনলাইন মোবাইল গ্যালাক্সি, শপিং সেন্টার নেট, শপিং জোন বিডি, শপিং ডেলস, স্মার্ট শপ বিডি, উইন্টার কালেকশন, সোনিয়া ফ্যাশন হাউজ, সু বাজার বিড, ফ্যাশন হাউজ ২৪, চায়না ফ্যাশন বিডি, বিডি ফ্যাশন ইত্যাদি
যেভাবে চক্রের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ
ছোট একটি অভিযোগের তদন্ত করতে নেমে পুরাদস্তুর একটি প্রতারক চক্রের খোঁজ পেয়ে যায় পুলিশ।
ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (লালবাগ) মোঃ রাজিব আল মাসুদ বলছেন, "করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসে থাকার কারণে আমরা সকলেই নানাভাবে অনলাইনের কেনাকাটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিজেও কয়েকবার কেনাকাটা করতে গিয়ে ছোট ছোট প্রতারণার শিকার হয়েছি। কিন্তু টাকার অংক ছোট হওয়ার কারণে মানুষ এ নিয়ে তেমন একটা অভিযোগ করে না"।
''একজন আমাদের কাছে অভিযোগ করে যে, তিনি একটি মোবাইল কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাকে যে মোবাইল দেয়ার কথা বলা হয়েছিল, সেটা দেয়া হয়নি। তখন সেটা নিয়ে আমরা তদন্ত করতে নেমে পুরো একটা চক্রের সন্ধান পাই। এরা অনেকদিন ধরেই ই-কমার্সের নামে মানুষজনকে ঠকিয়ে আসছিল।''
ই-কমার্সের নামে প্রতারণা থেকে বাঁচতে যা করা উচিত
বাংলাদেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলছেন, যদিও এখন ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতারণার হার আগের চেয়ে অনেক কমেছে, তারপরেও অনলাইনে কেনাকাটার সময় ক্রেতাদের কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
ফেসবুক পেজের বয়স: প্রথমে দেখতে হবে পাতাটা কতদিনের পুরনো। পরিচিত না হলে একেবারে নতুন পাতা থেকে কেনাকাটা না করাই ভালো।
রিভিউ: ফেসবুকের পাতাগুলোয় কেনাকাটার সময় দেখতে হবে সেখানে আগের রিভিউগুলো কতটা পজিটিভ আর কতটা নেগেটিভ। নেগেটিভের সংখ্যা বেশি হলে সেখান থেকে কেনাকাটা না করাই ভালো।
সদস্য: পেশাদার ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের অনেকেই ই-ক্যাবের সদস্য হয়ে থাকে। এই সংগঠনের সদস্যদের অনেক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তাই ই-ক্যাবের সদস্য কিনা, সেটা দেখে নেয়া যেতে পারে।
ব্র্যান্ডের নাম: বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিক আছে কিনা, সেটাও ভালোভাবে নজর দিতে হবে। অনেক সময় প্রতারকরা বিখ্যাত ব্র্যান্ডের নামের সঙ্গে কিছু যোগ করে বা অদল বদল করে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিখ্যাত কোন ব্র্যান্ড যখন তখন তাদের নামের পরিবর্তন করে না।
অভিযোগ: এতসব সতর্কতার পরেও প্রতারণার শিকার হলে তাৎক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করা উচিত। তখন তারা এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে এবং অন্যদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বন্ধ হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসি
আরও পড়ুন