ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

ই-মেইলের ইতিহাস ও ধারণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পুরানো সময়ে যখন কোনো ব্যক্তিকে কোনো তথ্য দিতে হতো তখন চিঠির মাধ্যমে দিতো। যার উত্তর দিতে অনেক সময় লাগতো, কিন্তু বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের আবির্ভাবের পর থেকে তা হয় না, আজ সবকিছু বদলে গেছে। যেকোন তথ্য সহজেই যেকোন ব্যক্তির কাছে অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া যায়।

আগে এক সময় যখন কম্পিউটার ও স্মার্ট ফোনের আবিষ্কার হয়নি তখন ই-মেইল শব্দটির কথা কেউ শুনেনি। তবে এই যুগে এসে, ই-মেইল শব্দ শোনা তো দূরে থাক, ই-মেইলে কারো আইডি নেই এমন লোক পাওয়া বড়ই মুশকিল।

ই মেইল কি?

ই-মেইল এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Electronic Mail. যাকে সংক্ষেপে E-mail (ই-মেইল) বলে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ই-মেইল এর মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে বিভিন্ন তথ্য ও ফাইল প্রেরণ করা যায়। সীমিত স্থানের মধ্যে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ করা যায়। তবে, বিশ্বের যেকোন স্থানে কোন তথ্য প্রেরণ করতে হলে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেটের সাহায্যে বিশ্বের যেকোন স্থানে ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।

বিভিন্ন ই-মেইল প্রোগ্রাম ব্যবহার করে মেইল পাঠানো যায়। ই-মেইল পাঠানোর জন্য প্রথমে ই-মেইল প্রোগ্রামে প্রবেশ করে প্রাপকের ই-মেইল টাইপ করে নির্দেশ দিলে (Send) দিলে ই-মেইল তথ্য সরাসরি প্রাপকের টার্মিনাল বা ওয়ার্কস্টেশন বা সার্ভারে গিয়ে জমা হয়। তারপর, প্রাপক তার নামে কোন মেইল আসছে কিনা তা অনুসন্ধানের নির্দেশ দিলে টার্মিনাল থেকে প্রাপকের কম্পিউটারে মেইলটি চলে আসে। একই মেইল একসাথে অনেককে পাঠানো যায়।

ই-মেইলের ইতিহাস

একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল দুইটি কম্পিউটারের মধ্যে। আর দুইটি কম্পিউটারে ই-মেইল প্রেরণ করার সময় অর্পানেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথমদিকে অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এতে প্রোগ্রাম লিখেছিল বার্তা আদান-প্রদান করার জন্য। সে সময় এতে বিভিন্ন টার্মিনালের সাহায্যে তাৎক্ষণিক চ্যাটও করা যেত। ১৯৬০ সালের শুরুর দিকে অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেক্সট মেসেট প্রেরণের জন্য প্রোগ্রাম তৈরী করেন। ১৯৭২ সালে গবেষক বেরি ওয়েসলার সফলভাবে ই-মেইল প্রেরণে সক্ষম হন। ১৯৮০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ই-মেইল প্রযুক্তিতে আরও অগ্রগতি আনেন। ১৯৮৮ সালে বাণিজ্যিক ই-মেইলের প্রবর্তন হয়। ১৯৯৩ সালে অনলাইনে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ই-মেইল। 

প্রথমে ই-মেইলের ব্যবহার বার্তা পাঠানো ও বার্তা পড়ার মধ্যেই সিমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আধুনিককালে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বার্তার সাথে সাথে ছবি ও ভিডিও চিত্রও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। ১৯৭৪ সালের দিকে সামরিক বাহিনীতে এর প্রচলন বাড়ে। বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ পাঠাতে কর্মকর্তারা ব্যবহার করতেন ই-মেইল। টমলিনসন ১৯৭২ সালে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য পাঠানোর জন্য @ চিহ্নটি ব্যবহার করেন। আর তখন থেকেই ই-মেইল এড্রেস হিসেবে ‘ব্যবহারকারীর নাম @ হোস্ট’ ব্যবহার করা হয়। এরপর ধিরে ধিরে ই-মেইল পদ্ধতির উন্নয়ন সাধিত হতে থাকে।

ই- মেইলের সুবিধা

> আমরা ই-মেইল ব্যবহার করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারি, আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে দূরে বসবাসকারী মানুষের সাথে কথা বলতে পারি।

> ই-মেইলের দ্বিতীয় সুবিধা হল দ্রুত উত্তর পাওয়া, আগে চিঠি লিখতে এবং তার উত্তর পেতে অনেক সময় লাগত, কিন্তু এখন তা নেই, এখন ই- মেইলের মাধ্যমে আপনি ই- মেইল পাঠাতে পারেন। অবিলম্বে এবং যেকোন সময়ে উত্তর আপনি কাগজ এবং পেন্সিল ছাড়াই বিনা খরচে তথ্য পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে পারেন।

> আপনি একসাথে অনেক লোককে ই-মেইল পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে পারেন।

> আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে ফাইল সংযুক্ত করার সুবিধা পাই, যাতে আমরা ই-মেইলে প্রয়োজনীয় ফাইল এবং ফটো সংযুক্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় লিঙ্ক শেয়ার করতে পারি।

> ই-মেইল নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য। এটি সব পরিস্থিতিতে আপনার মেইল ​​ডেলিভার করার চেষ্টা করে এবং আপনার পাঠানো ই- মেইলটি তৃতীয় ব্যক্তিরা দেখতে পারে না।

> আপনার ই- মেইল পাওয়ার ভয় নেই, আপনার পাঠানো প্রতিটি ই- মেইল মেইল ​​সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে, আপনি যেকোনো সময় এই কপিটি দেখতে পারেন।

ইমেলের সীমাবদ্ধতা এবং অসুবিধা

> আপনি যদি ই- মেইল ব্যবহার করতে চান তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটার সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকতে হবে। 

> ই- মেইল পাঠাতে বা গ্রহণ করার জন্য আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে যেমন একটি ডাটা প্যাক বা ইন্টারনেট থাকা প্রয়োজন, তেমনি প্রেরক এবং গ্রহণকারী উভয়ের ইমেল ঠিকানা থাকা প্রয়োজন। 

> এর সবথেকে বড় অসুবিধা হবে আপনার কাছে নতুন ই- মেইল পাওয়া এবং এইসব অনিচ্ছাকৃত ই- মেইল যাদেরকে আপনি চেনেন না প্রযুক্তিগত ভাষায় স্প্যাম বলা হয়।

যেভাবে ই-মেইল কাজ করে

ই- মেইল দুটি কম্পিউটারের মধ্যে ট্রান্সমিট হিসেবে কাজ করে, যখন টেক্সট একজনের থেকে আরেকজনের কাছে পৌঁছায়, তখন ই-মেইলের সাহায্যে পৌঁছায়। আসুন জেনে নিই আমরা ই- মেইল পাঠাতে কোন ধাপগুলো ব্যবহার করি...

> সবার আগে আমাদের ই-মেইল প্রোগ্রাম শুরু করতে হবে

> ই-মেইল কোথায় পাঠাতে হবে, ঠিকানা লিখতে হবে

> এর পরে, ই-মেইল ব্যবহার করে একটি বার্তা রচনা করতে হবে।

> বার্তা পাঠাতে একটি কমান্ড প্রয়োজন।

> যখন আমরা একটি বার্তা রচনা করি, তখন তা এক টুকরোতে থাকে, কিন্তু ইন্টারনেটে যাওয়ার সাথে সাথে এটি অনেকগুলি টুকরোয় বিভক্ত হয়ে যায়, যাকে আমরা প্যাকেট বলি।

> প্যাকেটে প্রেরকের ইমেল ঠিকানাটি প্রাপকের ঠিকানা এবং বার্তাটির অক্ষরের সংখ্যা ১৫০০ এর বেশি হওয়া উচিত নয়।

> যদি প্যাকেটগুলোতে কোনও ত্রুটি থাকে, তবে এটি উত্সের কাছে অনুরোধটি ফেরত পাঠায়, আবার বার্তা পাঠানোর জন্য, এই পুরো প্রক্রিয়াটি SMTP এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, SMTP এর পুরো নাম হল সিম্পল মেইল ​​ট্রান্সফার প্রোটোকল।

বিজ্ঞান সহজ করেছে মানুষের জীবনকে। আর বিজ্ঞানের আধুনিক সংযোজন ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে আরও সহজ এবং উন্নত,আবার বেড়েছে ঝুঁকিও। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোনও দুস্কৃতির আশ্রয় না নিলেই বিজ্ঞানের পূর্ণ সুবিধা ভোগ করা সম্ভব। তাই বিজ্ঞানকে সবসময় ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে হবে। ই-মেইলের ব্যবহারে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে যেন তা অকারণে ব্যবহৃত না হয়।

সূত্র: ইন্টারনেট
এমএম/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি