ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ইউ টি আই এর মতো রোগকে দূরে রাখার উপায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৪৯, ২৬ মে ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

মানব শরীরের ভিতরে যদি একটু ঝুঁকে দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন ইউরিনারি ট্রাক্ট, কিডনিকে হালকা করে ছুঁয়ে ব্লাডার, ইউরেটার এবং ইউরেথ্রা পর্যন্ত গেছে। মূলত এই রাস্তা ধরেই প্রস্রাব বেরিয়ে আসে আমাদের শরীরের বাইরে। তাই তো শরীরের এই অংশে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশিই থাকে। প্রসঙ্গত, এই বিশেষ ধরনের সংক্রমণকেই চিকিৎসা পরিভাষায় ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন বা ‘ইউ টি আই’ বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত যে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে, সেগুলো হল- তলপেটে যন্ত্রণা, লোয়ার পেলভিসে চাপ অনুভূত হওয়া, বারে বারে প্রস্রাবের বেগ আসা, প্রস্রাবের সময় জ্বালা এবং কষ্ট হওয়া, ইউরিন চেপে রাখতে কষ্ট হওয়া, প্রস্রাবের রং বদলে যাওয়া, ইউরিনে রক্ত আসা প্রভৃতি।

এই রোগের চিকিৎসা মূলত অ্যান্টিবায়োটিক এবং পেন কিলারের সাহায্যই করা হয়ে থাকে। তবে যেমনটা আপনারা সবাই জানেন, বারে বারে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। এক্ষেত্রে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি হওয়ার মারাত্মক সম্ভাবনা থাকে। তাই তো ইউ টি আইকে দূরে রাখতে চিকিৎসকেরা এই প্রবন্ধে আলোচিত নিয়মগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, এই ঘরোয়া টোটকাগুলোকে কাজে লাগালে ইউ টি আই-এর প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। তাই তো প্রতিটি মহিলার এই লেখাটি পড়ে ফেলা মাস্ট! প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে গাইডলাইনটা মেনে চলা জরুরি, সেটি হল-

শসা খাওয়া মাস্ট

একাধিক স্টাডি অনুসারে, সারা দিন ধরে বারে বারে অল্প পরিমাণে শসা খেয়ে গেলে শরীরে পানির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এমনটা হওয়া মাত্র শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারাও বেরিয়ে যায়। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

লেবুর মতো সাইট্রিক ফল বেশি করে খেতে হবে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, পাতি লেবু এবং কমলা লেবুর মতো সাইট্রাস ফল প্রতিদিন খেলে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে প্রস্রাব এত মাত্রায় অ্যাসিডিক হয়ে যায় যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারা বেশিক্ষণ বেঁচেই থাকতে পারে না। ফলে ইউ টি আই-এর মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। তাই এমন ধরনের রোগের থেকে যদি দূরে থাকতে চান, তাহলে রোজের ডায়েটে লেবুকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন!

ভুলেও কফি এবং মদ্যপান নয়

ইউ টি আই-এ আক্রান্ত হলে ভুলেও বেশি মাত্রায় কফি এবং অ্যালকোহল পান করা চলবে না। কারণ এই ধরনের পানীয় রোগের প্রকোপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে কষ্ট বাড়ে চোখে পরার মতো। আসলে এই ধরনের পানীয়গুলো শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি যোগায় না, উল্টে দৈহিক ক্ষমতাকে এত মাত্রায় কমিয়ে দেয় যে রোগের প্রকোপ ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।

দই খাওয়া মাস্ট

আমাদের শরীরের ভেতরে নানা ধরনের উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে। যারা সময়ে-অসময়ে আমাদের নানাবিধ রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। সেই সঙ্গে ইউ টি আই-এর মতো সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে। তাই তো এমন উপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কাজটা কিভাবে করবেন? এক্ষেত্রে নিয়মিত দই খাওয়ার অভ্যাস করলেই আর কোনও চিন্তা থাকবে না। কারণ দই এমন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে কী সিদ্ধান্ত নিলেন? রোজ দই খাবেন তো?

দিনে ৩-৪ লিটার পানি খেতেই হবে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইউ টি আইকে যদি আটকে রাখতে হয়, তাহলে পানির থেকে শক্তিশালী অস্ত্র আর কিছু নেই। সেই কারণে তো মহিলাদের দৈনিক ৩-৪ লিটার পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ যত বেশি করে পানি খাওয়া হবে, তত জীবাণু ইউরিনের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। ফলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যাবে একেবারে কমে। প্রসঙ্গত, চিকিৎসকদের মতে যাদের এই ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি, তাদের প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস করে পানি খেতে হবে। এমনটা করলে ইউ টি আই ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।

প্রস্রাব চেপে থাকা চলবে না

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রস্রাব চেপে রাখার প্রবণতা যাদের রয়েছে, তারাই মূলত এই ধরনের রোগে বেশি মাত্রায় ভুগে থাকেন। কারণ প্রস্রাব যখন ঠিক সময়ে শরীরের বাইরে বেরতে পারে না, তখন রিফ্লাক্স করে সম বেগে পিছনের দিকে আসতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তা হল শরীরিক সম্পর্কের পর প্রস্রাব করতেই হবে! কারণ এমনটা না করলে শরীরের এই অংশে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা যাবে বেড়ে। ফলে ইনফেকশনের ফাঁদে পরার সম্ভাবনাও বাড়বে।

ক্র্যানবেরি জুসকে রোজের সঙ্গী বানাতে হবে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রাকৃতিক উপাদানটির শরীরে থাকা পলিফেনল নামে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জীবাণুদের মেরে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ই.কোলাই-এর মতো ব্যাকটেরিয়াকে শরীরে প্রবেশ করতে দেয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইউ টি আই-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। তাই এমন সংক্রমণের থেকে দূরে থাকতে চান তো প্রতিদিন ক্র্যানবেরি জুস খেতে ভুলবেন না যেন!

রসুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব না পাতালে কিন্তু বিপদ

বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের গবেষকরা একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তাতে দেখা গেছে, রসুন হল সেই অস্ত্র, যাকে কাজে লাগিয়ে ইউ টি আই-কে একেবারে বাগে আনা সম্ভব! তাই এমন কষ্টকর রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে রসুন খাওয়ার অভ্যাস করতেই হবে। প্রসঙ্গত, রসুন যে কেবল সংক্রমণ কমায়, তা নয়, সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে সকাল বেলা খালি পেটে কাঁচা রসুন যেমন খেতে পারেন, তেমনি রসুন দিয়ে চা বানিয়েও খেতে পারেন। মোট কথা যেভাবেই খান না কেনও, উপকার মিলবেই মিলবে!

সূত্র: বোল্ডস্কাই

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি