ইউনূসের বক্তব্যে তোলপাড় ভারত, তীব্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশিত : ১৬:০৫, ১ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৬:২৮, ১ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য নিয়ে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারকরা এই মন্তব্যকে ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এবং কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
চীনে এক আলোচনায় ড. ইউনূস বলেন, “ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত। তাদের সমুদ্রের সঙ্গে কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।”
এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়। যদিও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রশ্ন তুলেছেন, “ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?”
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এই মন্তব্যকে ‘অবাক করা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “উত্তর–পূর্ব ভারত ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের মন্তব্য করার কোনো অধিকার নেই।”
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বকশি ড. ইউনূসের বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “ভারত বাংলাদেশ তৈরি করেছে এবং তা করার সময় কোনো মানচিত্রগত সুবিধা নেয়নি। এখন বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান মিলে শিলিগুড়ি করিডর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে শ্বাসরুদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “বাংলাদেশ যদি ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তবে ভারতও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। ভারত চাইলে সমুদ্রপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে সক্ষম। ভারত সরকার বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।”
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা এক্সে লিখেছেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য আপত্তিকর ও নিন্দনীয়। এটি ভারতের কৌশলগত চিকেনস নেক করিডরের দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। ভারতের উচিত উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের বিকল্প সংযোগ স্থাপনে আরও জোর দেওয়া।”
ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দলটির গণমাধ্যম ও প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা বলেন, “বাংলাদেশ চীনকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে, যা উত্তর–পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। সরকার মণিপুরকে অবহেলা করছে এবং চীন ইতিমধ্যেই অরুণাচলে গ্রাম স্থাপন করেছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ড. ইউনূসের বক্তব্যের ভিডিওতে তাঁকে আরও বলতে শোনা যায়, “আমরা এই পুরো অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। এটি এক বিশাল সম্ভাবনার উন্মোচন করে। এটি চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে।”
এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
তথ্যসূত্র: দ্য উইক, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দু
এসএস//
আরও পড়ুন