ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ইতিহাসের সাক্ষী ‘রোজ গার্ডেন’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১২, ২২ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৬, ২৯ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

সময়ের ব্যবধানে ঢাকার অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা হারিয়ে গেছে। তবে এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আদিকালের বহু ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত কিছু স্থাপনা। এসব প্রতিষ্ঠান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। এমনি একটি প্রাচীন স্থাপনার নাম ‘রোজ গার্ডেন’। এই প্রাসাদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি যোগসূত্র রয়েছে।
রোজ গার্ডেন ঋষিকেশ দাসের একটি কীর্তি। নগরীর টিকাটুলির কেএম দাস রোডের শেষ মাথায় বিশাল দেয়ালের ভেতরে এর অবস্থান। একসময় এটি বেঙ্গল স্টুডিওর অধীনে ছিল। এর নান্দনিক ডিজাইন ও চারপাশের সৌন্দর্য্য যে কাউকে মাত করে দেয়।
ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি যোগসূত্র আছে। এটিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সূতিকাগার বলা চলে। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) গঠনের প্রাথমিক আলোচনা সভা এই বাড়িতে হয়েছিল। এ কারণে অনেকে বাড়িটিকে আওয়ামী লীগের জন্মস্থান হিসেবে বলে থাকেন।
তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এই প্রাসাদটির ইতিহাস না জানলেও কালের সাক্ষী হয়ে থাকা রোজ গার্ডেন দেখতে প্রতিনিয়তই অসংখ্য মানুষ রোজ আসেন। শুভ্র সাদা ভবন দেখতে অনেকটা হোয়াইট হাউসের মত। সবুজ ঘাসের আঁচল পাতা সেই উঠোন পেরোলে একটি অপরিসর জলাশয়। সেখানে রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর। পুকুরে সাঁতার কাটছে কয়েকটি হাঁস। বাড়িটির সীমানার ভেতরে আছে বড় একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। ঘাসে ঢাকা লন। আছে বসার জন্য বেঞ্চ। রয়েছে শ্বেত মার্বেলের ছোট কয়েকটি মূর্তি। প্রাসাদের সামনে রয়েছে একটি কৃত্রিম ফোয়ারা। বাড়ির পেছন দিকটাতে রয়েছে ফুল-ফলের বাগান। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু-মুরগি। তার মাঝখানে ধবধবে সাদা একটি প্রাসাদ। বাড়িটির সৌন্দর্য আগের মতো নেই। চারপাশে গড়ে ওঠা আকাশচুম্বী ভবনের কারণে রোজ গার্ডেন সহজে খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। তবে সব কিছুর মধ্যেও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে দৃষ্টিনন্দন চোখ জুড়ানো সেই সাদা প্রাসাদ।
নিতান্তই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস সমসাময়িক জমিদারদের ওপর অনেকটা জেদের বশেই ১৯৩০ সালে ২২ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেন এই চমৎকার প্রাসাদ। ভবনটির মোট আয়তন সাত হাজার বর্গফুট। উচ্চতায় পঁয়তাল্লিশ ফুট। ছয়টি সুদৃঢ় থামের ওপর এই প্রাসাদটি স্থাপিত। প্রতিটি থামে লতাপাতার কারুকাজ করা।
ভবন নির্মাণের কিছু দিন পর ঋষিকেশ দাস দেউলিয়া হয়ে যান। ১৯৩৭ সালে রোজ গার্ডেন বিক্রি হয়ে যায় খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছ। তখন এর নতুন নামকরণ হয় ‘রশীদ মঞ্জিল’। পরে আবদুর রশীদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব এর মালিকানা পান। ১৯৯৫ সালে আবদুর রকীবের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী লায়লা রকীব বাড়িটি দেখাশোনা করেন। লায়লার স্বামীর বড় ভাই কাজী মোহাম্মদ বশির যাকে হুমায়ুন সাহেব নামেও ডাকা হতো। পরে তার নামে বাড়িটি পরিচিতি পায়।
রোজ গার্ডেন বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি। তাই দর্শনার্থীরা চাইলেই যখন খুশি ভেতরে যেতে পারে না। ভেতরে ঢুকে দেখতে চাইলে আগে যোগাযোগ করে নিতে হবে। বাড়িটির মূল ফটক কেএম দাস রোডে হলেও সামনের অংশটি বিক্রি করে দেয়ায় একটু ঘুরে পেছনের আরকে মিশন রোডের গেট দিয়ে ঢুকতে হয়।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি