ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসলামে রুকাইয়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫০, ২১ জুন ২০২৪

ইসলামে ঝাড়ফুঁক-কে রুকইয়াহ বলে। রুকইয়াহ অর্থ হলো ঝাড়ফুঁক, মন্ত্র ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ মানে শরিয়াত সম্মত ঝাড়ফুঁক, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে 'রুকইয়া' শব্দটি সচরাচর ঝাড়ফুঁক করা বুঝাতে ব্যবহার হয়।

এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়।

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)।

উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

ফিক্বহী বিধানঃ ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

১. এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
২. ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কোন বিশ্বাস না রাখা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
৩. এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
৪. যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া এবং ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

১. নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
২. ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
৩. মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ঘাটতি পোষানোর জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

বাচ্চাদের জন্য রুকইয়া ও নিরাপত্তা

১. ফজর ও মাগরিবের পর আয়াতুল কুরসি ১বার, ইখলাস, ফালাক ও নাস ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিবেন।

২. বাচ্চাদের রুমে কোন প্রকাশমাণ প্রাণীর ছবি ও পুতুল রাখবেন না (পুরো বাসাতেই রাখা ঠিক না)।

৩. রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস ১বার করে পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে শরীর মুছে দিবেন -৩বার।

৪. মাগরিবের ২০মিনিট পুর্বে দরজা ও জানালা 'বিসমিল্লাহ' বলে বন্ধ করে দিবেন এবং মাগরিবের ১৫-২০মিনিট পর খুলে দিতে পারবেন যদি প্রয়োজন হয়। খোলার সময় 'বিসমিল্লাহ' বলে খুলবেন।

৫. মানুষ ও জ্বীনের বদনজর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে: দুরুদে ইব্রাহিম (১বার), সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস (প্রতিটি ৭বার করে পড়বেন), দুরুদে ইব্রাহিম (১বার) পড়ে ডান কানে হালকা করে ফুঁ দিয়ে দিবেন এবং সমস্ত শরীরে ফুঁ দিয়ে দিবেন।

৬. আসরের পর থেকে নিয়ে মাগরিবের ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত বাচ্চাদের নিয়ে বের হবেন না।

৭. পানি (উপরে উল্লেখিত সুরা ও আয়াত পড়ে পানি তৈরি করবেন) অল্প করে পান করাবেন এবং অল্প পানি দিয়ে মাথা, আইভ্রু, হাত ও‌ পায়ের তালুতে মাসেহ করে দিবেন (দিনে কমপক্ষে ৩বার)।

৮. এই দু'আটি সকাল-সন্ধ্যা ১/৩/৫/৭ বা এর বেশি বেজোড় সংখ্যকবার পড়ে ফুঁ দিবেন:

"আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লিআম্মাতিন।"

অর্থ: "আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বিষধর প্রাণীর ও বদনজরকারীর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।"
(বুখারি)

রুকইয়ার আয়াত:

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-

সুরা ফাতিহা
সুরা বাকারা ১-৫
সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
সুরা বাকারাহ ২৫৫
সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
সুরা ইউনুস ৮১-৮২
সুরা ত্বহা ৬৯
সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
সুরা সফফাত ১-১০
সুরা আহকাফ ২৯-৩২
সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
সুরা হাশর ২১-২৪
সুরা জিন ১-৯
সুরা ইখলাস
সুরা ফালাক
সুরা নাস

নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য যে কেউ রুকইয়াহ করতে পারে! এজন্য বিরাট বুজুর্গ হওয়া শর্ত না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে এমন যেকোনো ব্যক্তি, যদি দেখে-দেখে কিংবা মুখস্থ দোয়া অথবা কোরআনের আয়াত পড়তে পারে, তাহলে সেই সেলফ রুকইয়াহ করতে পারবে।

তবে হ্যাঁ, আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদে অথবা জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে রুকইয়াহ করতে চান, তাহলে অবশ্যই এ বিষয়ে আপনাকে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি চিকিৎসার জ্ঞান না রেখেই চিকিৎসা করে, তবে (কিছু ঘটলে) সেই দায়ী হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৪৫৮৬)।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শিরক মুক্ত রুকইয়াহ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি