ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

ইয়াবা গডফাদার কে এই সাইফুল?

প্রকাশিত : ১৬:০৪, ১ জুন ২০১৯

দেশে ইয়াবা চোরাকারবারীদের অন্যতম হোতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত মাদককারবারী সাইফুল করিম (৪৫) গত বৃহস্পতিবার পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ যে ৭৩ জন ইয়াবাকারবারীর তালিকা তৈরি করেছে, সাইফুল করিম সে তালিকার ২ নম্বরে রয়েছে, আর সবার শীর্ষে সাবেক এমপি বদির নাম। এছাড়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাদকসংক্রান্ত একাধিক তালিকায় নামও ছিল সাইফুলের।

প্রশ্ন ওঠেছে দীর্ঘদিন বিদেশে আত্মগোপনে থেকে মাদকপাচারকারী কে এই সাইফুল করিম?

জানা গেছে, বিবিএ পাস করে সাইফুল ২০০০ সালের পর চট্টগ্রাম শহর থেকে এসে টেকনাফ এসকে ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসা শুরু করেন।

তার পরিবার সেই সময় চট্টগ্রামে বসবাস করলেও পরে তারা টেকনাফে পুরনো বাড়িতে ফিরে আসেন। বিয়ে করেন টেকনাফের প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে বিএনপি নেতা আবদুল্লাহর বোনকে।

সাইফুল অল্পদিনেই ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন। একাধিকবার তিনি সেরা করদাতার (সিআইপি) খেতাবও অর্জন করেন।

কিন্তু পরবর্তী সময় ইয়াবার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হোন তিনি। ইয়াবা ব্যবসার আড়ালে রাতারাতি ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন সাইফুল করিম।

১৯৯৭ সালে এ দেশে প্রথম ইয়াবার চালান ঢোকে। সেই চালানটি সাইফুল করিম এনেছিলেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

গত বছরের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকায় একটি চালানে ১৩ লাখ ইয়াবা আটক হওয়ার পর সাইফুলের নাম জানাজানি হয়। এর পরপরই তিনি গা ঢাকা দেন।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১০২ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করলেও সাইফুল তখন বিদেশে আত্মগোপন করেন।

দীর্ঘ ৯ মাস আত্মগোপনের পর কয়েক দিন আগে সাইফুল করিম বিদেশ থেকে টেকনাফ আসেন।

সম্প্রতি কক্সবাজারের স্থানীয় একজন সাংবাদিক সাইফুলের সঙ্গে তার ভিডিওকলের একটি রেকর্ড ফেসবুক টাইমলাইনে আপলোড করে তাতে লিখেন- ইয়াবা কিং সাইফুল নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করতে চায়, তাকে কী করা উচিত। এরপর থেকে সাইফুলের আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ে। সাইফুলের আত্মসমর্পণের খবর গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়।

তার পরিবারের দাবি, টেকনাফের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আত্মসমর্পণের সুযোগের কথা দিয়ে কয়েকদিন আগে সাইফুল করিমকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফে নিয়ে আসেন।

বাংলাদেশে আসার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর তীরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাইফুল নিহত হয়।

তবে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে যে সাইফুল গত ২৫ মে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে দেশে আসেন। ঈদের পর আত্মসমর্পণ করবেন তিনি। সে জন্য তিনি পুলিশের ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ ছিলেন।

তবে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ‘পুলিশের সেফহোমে সাইফুলের থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এদিকে, সাইফুল নিহত হলে কক্সবাজারের মানুষের মুখে আলোচনা একটাই। সাইফুল নিহত হওয়ায় এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নম্বর তালিকাভূক্ত মাদকব্যবসায়ী সাবেক এমপি বদির কি হবে?

কেউ বলছেন বদির একাধিপত্য তৈরি হলো, কেউবা একটু আশা জাগিয়ে বলছেন হয়তো এবার বদিকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের জালে আটকা পড়ার পর টানা ছয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল করিম অকপটে স্বীকার করেছেন যে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ও বদি একসঙ্গে ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে দেশের অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা ডন সাইফুল তার ইয়াবা কারবারের ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়েছেন।

এর মধ্যে টেকনাফের সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদি সম্পর্কেও অনেক তথ্য রয়েছে।

সাইফুলের দেওয়া তথ্য মতে, টেকনাফ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা জাফর আলম ওরফে টিটি জাফরের মাধ্যমে তিনি ইয়াবার টাকা দুবাই ও সিঙ্গাপুর পাঠাতেন।

টিটি জাফরের ভাই টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান ও অন্য ভাই আব্দুল গফুর তার ইয়াবা কারবারে সহযোগিতা করতেন।

সাইফুল তার ইয়াবার চালান ঢাকায় মো. জুবাইর ও হ্নীলার মাহমুদুল্লাহর কাছে পাঠাতেন বলে পুলিশকে জানান।

এছাড়া তিনি টেকনাফের পল্লানপাড়ার শামসুল আলম শামসু, তার গাড়িচালক সোনা মিয়া, টেকনাফ এলাকার মৌলভী বোরহান, মৌলভী জহির, বাট্টা আয়ুব, হুন্ডি শওকত, হুন্ডি আনোয়ার, মো. শফি, আলী আহমদ, মোহাম্মদ আমিন, সৈয়দ ও আব্দুল হাফেজ তার ইয়াবা কারবারের অন্যতম সহযোগী বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন।

এছাড়া সাইফুল করিম জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সহযোগী হিসেবে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেশ কয়েকজন সদস্য, রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেছেন বলেও জানা যায়।

গত মাসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইফুলের দুই ভাইকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ আটক করে কারাগারে প্রেরণ করেন। এ ছাড়া তার পাঁচ ভাইয়ের নাম মাদকের তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি